প্রকাশ: 14/06/2023
ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব বা বিভক্তি আবারও প্রকাশ্যে এসেছে। এই নির্বাচনে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের মনোনীত প্রার্থী এবং বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদের মনোনীত প্রার্থী ভিন্ন ভিন্ন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ফলে জাতীয় পার্টির অন্ত:কোন্দলটি আবারও নতুন করে প্রকাশ্যে এলো বলে রাজনৈতিক মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
জানা গেছে, জাতীয় সংসদের ১৯০ (ঢাকা-১৭) আসনের আসন্ন উপ-নির্বাচনে মেজর (অব.) সিকদার আনিছুর রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। মঙ্গলবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। এরপর বুধবার (১৪ জুন) জিএম কাদের ঢাকা-১৭ ও চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে, ঢাকা-১৭ আসনের আসন্ন উপ-নির্বাচনে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী মো. মামুনূর রশিদ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বুধবার (১৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ঢাকা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মো. মুনীর হোসাইন খানের কাছে মনোনয়নপত্রটি জমা দেয়া হয়।
ঢাকা-১৭ আসনের এই উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকেই দুইজন প্রার্থী নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীতায় অংশ নিচ্ছেন। ফলে দ্বন্দ্বটি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এর আগেও সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ পদে দলের সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমানকে রাখা ও সরানো নিয়ে পাল্টাপাল্টি চলেছে জাতীয় পার্টিতে (জাপা)। মসিউর রহমানকে সরিয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমামকে স্থলাভিষিক্ত করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের। অন্যদিকে মসিউরকে স্বপদে বহাল রাখতে পাল্টা চিঠি দিয়েছিলেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।
ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন আবার নতুন করে সামনে এসেছে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব বা বিভক্তি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই দ্বন্দ্ব অনেক আগে থেকেই। তবে এই উপ-নির্বাচনে বিষয়টি আবার নতুন করে সামনে এসেছে। একাদশ জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল। শুরু থেকেই মসিউর রহমান বিরোধী দলের চিফ হুইপ পদে আছেন। কিন্তু জাপার অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে এবং দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন মসিউর রহমান। সেই বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর মসিউরকে দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ প্রেসিডিয়ামসহ সব পদপদবি থেকে অব্যাহতি দেন জি এম কাদের। এর কয়েক দিন পর তাঁকে বিরোধী দলের চিফ হুইপ পদ থেকে সরিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতা কাজী ফিরোজ রশীদকে স্থলাভিষিক্ত করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন জাপার চেয়ারম্যান। কিন্তু সেটি তখন কার্যকর হয়নি।
জানা গেছে, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের সভাপতিত্বে গতকাল মঙ্গলবার (১৩ জুন) মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, এটিইউ তাজ রহমান, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি ও অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া।
অন্যদিকে, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গার নেতৃত্বে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় জাপার প্রার্থী মো. মামুনূর রশিদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্, সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন, সাবেক এমপি এমএ গোফরান, সাবেক রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা রফিকুল হক হাফিজ, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, মিজানুর রহমান দুলাল, জহির উদ্দিন জহির, শাহ আলম তালুকদার, ইসরাফিল হোসেন মিয়া, আমিনা হাসান, হাসনা হেনা, মঞ্জুরুল হক সাচ্চা, এজাজ আহমেদ, এম মুহিবুর রহমান, সাজিউল ইসলাম রকি, ছাত্রনেতা আবু সাঈদ লিয়ন ও মিশু আহমেদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে রিট পিটিশনে লাঙ্গল প্রতীকের ১১৫৩/২০০০ সালের মামলার রায়ের কপি। এছাড়া ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অনুমোদিত ও তৎকালীন মহাসচিব স্বাক্ষরিত দলীয় গঠনতন্ত্রের প্রথম মুদ্রণ কপি।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭