ইনসাইড পলিটিক্স

তারেককে এড়িয়ে চলছে বিএনপি


প্রকাশ: 16/06/2023


Thumbnail

বিএনপি যতই সরকারবিরোধী আন্দোলন করছে, বিদেশি দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে, তাদের সমর্থন আদায়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে ততই তাদের দলের বর্তমান প্রধান নেতা তারেক জিয়াকে এড়িয়ে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে তারেক জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বক্তব্য বিবৃতি দেওয়া ছাড়া দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে অন্ধকারে রয়ে গেছেন। তার সঙ্গে বিভিন্ন কূটনীতিকদের আলাপ-আলোচনা ইত্যাদিও নেতারা শেয়ার করছেন না। একমাত্র আমীর খসরু মাহমুদ ছাড়া দলের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা তারেক জিয়াকে এড়িয়ে চলছেন। 

বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, কৌশলগত কারণে তারেক জিয়াকে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এড়িয়ে চলছেন। তবে বিএনপির কোনো কোনো মহল মনে করছেন, কূটনীতিক মহল এবং সুশীল সমাজের একটি বড় অংশ বিএনপিকে ব্যবহার করতে চাইছে একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনার জন্য। আর এ কারণেই তারা তারেক জিয়াকে সবকিছু জানতে দিচ্ছেন না। এ নিয়ে তারেক জিয়াপন্থীদের উষ্মা ক্ষোভ এখন আস্তে আস্তে বাড়ছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো নীতিনির্ধারণী বিষয় তারেক জিয়াকে অন্ধকারে রেখে বিএনপি কাজ করেছে। আর এটি করা হয়েছে কৌশলগত কারণে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিশ্বের কোন দেশই তারেক জিয়ার নেতৃত্বকে পছন্দ করে না। তারা এখনও তারেক জিয়াকে একজন দুর্নীতিবাজ দুর্বৃত্ত মনে করে। তার সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গ্রুপের যোগসাজশ আছে এমন অভিযোগও আন্তর্জাতিক মহল থেকে প্রকাশ্যে করা হয়। বিএনপির সঙ্গে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলো বৈঠক করছে তখন বারবার তারা তারেকের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। একজন দণ্ডিত ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত আদালতের দ্বারা নিজেকে নিষ্কলুষ প্রমাণ করতে না পারে ততক্ষণ পর্যন্ত দলের নেতৃত্বে তিনি থাকতে পারেন কিনা সেই প্রশ্ন বিএনপি নেতাদেরকে করা হয়েছে। 

যদিও বিএনপি নেতারা উত্তরে বলেছে, তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো রাজনৈতিক হয়রানিমূলক। কিন্তু তারেক জিয়া এখনো আন্তর্জাতিক মহলে কোনরকম গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বরং এখনো মনে করা হয় বিএনপিকে যদি আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হয় তাহলে তাদেরকে তারেককে বাদ দেই এগোতে হবে। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপিকে সঙ্গ ত্যাগের পরামর্শ দিয়েছিল। সেই পরামর্শ অনুযায়ী বিএনপির নেতারা আস্তে আস্তে ২০ দল বিলুপ্ত করে। জামায়াত এবং ইসলাম পর্ষদ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দূরত্ব তৈরি করে। আর এখন বিএনপিকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তারেক জিয়াকে যেন দলের মূল নীতিনির্ধারক হিসেবে না রাখা হয়। তবে তিনি আলংকারিক প্রধান থাকবেন নাকি দল থেকে সরে যাবেন এ বিষয়ে বিএনপির কোন নেতার সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিএনপি নেতারা অবশ্য প্রকাশ্যে ধরনের বক্তব্য অস্বীকার করেছেন। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, তারেক জিয়াই হলেন বিএনপি এখন প্রধান নেতা। তিনি বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং তার নির্দেশেই আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু মুখে বিএনপির নেতারা এরকম কথা বললেও বিএনপিতে স্থায়ী কমিটির অন্তত তিনজন সদস্য আছেন তারা তারেক জিয়াকে এড়িয়ে কূটনীতিক এবং সুশীল সমাজের কাছে নানা রকম কথা বলছেন। 

বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এটি তাদের কৌশলগত অবস্থান। কারণ তারা এখন আন্তর্জাতিক মহলের কাছ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির একটি স্বীকৃতি চায়। আর এই স্বীকৃতি আদায় করা যায় তাহলে তত্ত্বাবধায় সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। কাজেই কৌশলগত কারণে তারা তারেক জিয়াকে সামনে আসছেন না। তারা মনে করছেন, তারেক জিয়া যদি বিএনপির প্রধান নেতা হিসেবে দৃশ্যমান হন তাহলে পশ্চিমা কূটনীতিকদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হবে। তবে বিএনপির মধ্যে অনেক নেতাই আছেন যারা মনে করছেন এটি একটি ষড়যন্ত্র। এক-এগোরার সময় যে রকম বিএনপিতে কিছু সংস্কারপন্থী নেতা জন্ম হয়েছিল প্রয়াত মান্নান ভূঁইয়া, সাইফুর রহমানের মতো নেতারা সে সময় যেমন খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন এখন তেমনি সুশীলদের চক্রান্তে এবং কিছু আন্তর্জাতিক শক্তির প্ররোচনায় তারেক জিয়াকেও বিএনপি থেকে মাইনাস করার চেষ্টা চলছে। এটি বিরাজনীতিকরণের একটি চক্রান্ত বলেও বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করছেন। এখন দেখার বিষয় শেষপর্যন্ত তারেক জিয়া কি বিএনপি থেকে মাইনাস হন কিনা। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭