ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগের ‘সিটি নির্বাচন’ ফর্মূলা কি ব্যর্থ হলো?


প্রকাশ: 17/06/2023


Thumbnail

পাঁচটি সিটি নির্বাচনের শেষ দুটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ২১ জুন। সিটি নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য ছিল একটি পরীক্ষা। জয়-পরাজয় নয় বরং এই নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক করে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে, বিএনপি ছাড়াও নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু সেই লক্ষ্য আওয়ামী লীগ কতটুকু অর্জন করতে পেরেছে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা এবং বিতর্ক হচ্ছে। 

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে এবং এই নির্বাচনের ফলাফল ছিল আকর্ষণীয়। লোকজন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন উপভোগ করেছেন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ছাড়া যে নির্বাচনী ফর্মুলা সে ফর্মুলা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। একইভাবে বরিশাল এবং খুলনা সিটি করপোরেশনে নির্বাচনও অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। তবে এ দুটি নির্বাচনের সময়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি দৃশ্যমান প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। এই নির্বাচনে বরিশালে একটি অনভিপ্রেত ঘটনাকে ঘিরে ইসলামী আন্দোলন আন্দোলন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা এবং বাকি দুটি নির্বাচন অর্থাৎ রাজশাহী এবং সিলেটের নির্বাচন থেকে তারা সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। আর এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে এই দুটি নির্বাচন উত্তেজনাহীন অনাকর্ষণীয় হয়ে যেতে পারে বলে কেউ মনে করছেন। তারা বলছেন, এই দুটি নির্বাচন যদি শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হয় তাহলে আওয়ামী লীগ যে সিটি নির্বাচন ফর্মুলা হাজির করেছিল তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। 

আওয়ামী লীগ অবশ্য এখন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফর্মুলার আলোকে রাজনীতির মাঠে কথা বলছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোন দল নির্বাচনে আসবে, কে নির্বাচনে আসলো না আসলো সেটি তাদের মাথাব্যথা নয়। বিএনপি ছাড়াও নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। একই রকম বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী জেনেভাতে দিয়েছেন। সেখানে এক সুধী সমাবেশের বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, বিএনপি এখন নির্বাচন বানচালের পথ খুঁজছে। এসব থেকে বুঝা যায় আওয়ামী লীগ সিটি নির্বাচনের ফর্মুলা ধরেই এগোতে চাচ্ছে এবং সেই কৌশলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার একটি পরিকল্পনা ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। তবে বরিশালের নির্বাচনে কারচুপির পর ইসলামী আন্দোলন নির্বাচন বর্জন করে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি হয়েছে। 

গতকাল ইসলামী আন্দোলন তাদের প্রার্থীকে হামলার প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছে। আগামী দুটি নির্বাচন তারা বর্জন করবে। এই নির্বাচন দুটিতে অর্থাৎ রাজশাহী এবং সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রধান চ্যালেঞ্জ হল ভোটারদেরকে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত করা। যদি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত তাকে তাহলে আওয়ামী লীগের ফর্মুলা কিছুটা হলেও কাজে দেবে এবং আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচনের পথে এগোতে পারবে। কিন্তু এই দুটি নির্বাচন যদি নিষ্প্রাণ হয়, ভোটারদের আগ্রহ যদি না থাকে তাহলে  বিএনপিকে নির্বাচনে আনার দাবি আরও শক্তিশালী ভিত্তি পাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে সরকারের ওপর চাপ বাড়বে। বিএনপি এখন সেটার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, গাজীপুর বাদ দিয়ে অন্য দুটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ছিল এবং এই প্রভাব বিস্তার করে তারা নির্বাচনকে নিজেদের পক্ষে নিয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের অধীনে যে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় সিটি নির্বাচন তার প্রমাণ। এরকম পাল্টাপাল্টি অবস্থানের পর এখন দেখার বিষয় বাকি দুটি নির্বাচন কিভাবে অনুষ্ঠান হয়। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭