ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের পাঁচ অস্বস্তি


প্রকাশ: 17/06/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যখন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক চাপে রয়েছে, তখন ভারত বাংলাদেশের প্রধান ভরসা। বিশ্ব রাজনীতিতে ভারত একটি ভারসাম্যের নাম। একদিকে যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে ভারত কোনো পক্ষ না নিয়েও নিজেদের দেশের স্বার্থ রক্ষা করেছে, তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সুসম্পর্কও বজায় রেখেছে। বিশ্ব রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব আগের চেয়েও অনেক বেশি। এ রকম বাস্তবতায় বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী হিসেবে- এই দেশের নির্বাচনে ভারতের অবস্থান এবং ভূমিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের অবস্থানের কতটুকু বিরোধীতা করতে পারবে- সেটা নিয়েও সংশয় রয়েছে। শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনে যা চায়- সেটি অর্জন করতে গেলে ভারতকে পাশে রাখতেই হবে। 

অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন অবস্থানের সাথে এখন পর্যন্ত একমত নয়। বরং তারা মনে করে, বাংলাদেশের নির্বাচন বাংলাদেশের মতো করেই হতে হবে। এই নির্বাচন একটি দেশের নিজস্ব ব্যাপার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি- এমনকি তাদের কঠোর অবস্থান ভারতের থিঙ্ক ট্যাঙ্করা যে পছন্দ করছে না- ভারতের গণমাধ্যমে সে সম্পর্কে একাধিক খবর প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের অবস্থানের মধ্যেও বাংলাদেশ নিয়ে কিছু কিছু বিষয়ে ভারতের অস্বস্তি রয়েছে এবং এই অস্বস্তিগুলো নির্বাচনের আগেই সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভারতের নিরঙ্কুশ সমর্থন পাওয়া নিয়ে কারো কোনো সংশয় রয়েছে। 

বাংলাদেশের যে পাঁচটি বিষয় নিয়ে ভারতের অস্বস্তি রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে:-

১. চীনের সঙ্গে সম্পর্ক: চীনের সঙ্গে বাড়াবাড়ি রকমের সম্পর্ক ভারতের একটি উদ্বেগের কারণ। ভারত-চীন বিরোধ দীর্ঘ দিনের পুরোনো এবং এই বিরোধের কারণে উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে চীনের যে বিনিয়োগ, সে বিনিয়োগ ক্রমশ ভারতের একটি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত চায়না বাংলাদেশ চীনের সাথে আরও গভীর সম্পর্কে জড়াক। যদিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, এই সম্পর্কটি কেবল অর্থনৈতিক। কিন্তু এ নিয়ে ভারতের অস্বস্তি কাটেনি। 

২. জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক: ভারতের দ্বিতীয় অস্বস্তি রয়েছে- সরকারের সঙ্গে জামায়াতের রহস্যময় সম্পর্ক। বিশেষ করে সম্প্রতি জামায়াতকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ায় নানা রকম প্রশ্ন উপস্থাপিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের আদর্শগত জোট ১৪ দল থেকেও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মার্কিন ভিসা নীতির প্রভাবের কারণেই জামায়াত সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে, অনেকেই মনে করছেন আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই জামায়তকে সুযোগ করে দিচ্ছে। 

৩. সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান: শুধু জামায়াত নয়, বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটছে এবং বাংলাদেশের যে অসম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনা, যেটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লালিত এবং বিকশিত- সেই চেতনায় আঘাত হানছে। ফলে ভারত মনে করে যে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে গেলে- এখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বিকাশ করতে হবে। আর সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান বাংলাদেশের জন্য যেমন ইতিবাচক হবে না, তেমনি ভারতও এটা পছন্দ করছেনা। 

৪. আওয়ামী লীগের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প: আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে অনেকেই আছেন- যারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি লালন-পালন করছেন এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা দান করছেন। এটি ভারতের অস্বস্তির একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা পাকিস্তানপন্থি এবং ভারতবিরোধী- এমন তথ্য ভারতকে পীড়া দেয় বলেও কেউ কেউ মনে করেন। 

৫. রাজনীতিতে চীনপন্থিদের দাপট: বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এখন চীনপন্থি হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন এবং চীনের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের দৃশ্যমান ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটি ভারতের কাছে একটি বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয় রয়েছে বলে বিভিন্ন মহল মনে করেন। কারণ চীন যদি বাংলাদেশের রাজনীতির উপর প্রভাব বিস্তার করে, সেটি ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে বলেই তারা মনে করছেন। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭