প্রকাশ: 19/06/2023
পত্রাঘাতে
জর্জরিত এখন বাংলাদেশ। প্রতিদিনই
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চিঠি লিখছেন বিদেশি
প্রভাবশালীরা। চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের
ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা
এখন দৃশ্যমান। এসব চিঠি আবার
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত
হচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতারা এসব
চিঠিতে উল্লাসে আত্মহারা। কৈশোরোত্তর যৌবনে প্রেমিকার প্রথম চিঠির চেয়েও যেন তাদের কাছে
এসব চিঠি মধুময়। একদা
বাম, কিছুদিন আওয়ামী লীগ থেকে এখন
বিএনপির চেয়েও বড় আওয়ামীবিরোধী নেতা
দেখলাম, এরকম একটি চিঠি
নিয়ে খুশিতে রীতিমতো নৃত্যরত। এসব যেন চিঠি
নয়, শব্দবোমা। বোমাবর্ষণ করে আগামী নির্বাচনের
আগে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির
চেষ্টা এখন দৃশ্যমান। চিঠিবোমায়
যে কাজ হচ্ছে, তা
সরকারের মন্ত্রী-নেতাদের আবোল-তাবোল বক্তৃতা
শুনলেই বোঝা যায়। একমাত্র
শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই সাহসের
সঙ্গে চিঠির ব্যাপারে কথা বলতে পারছেন
না। একের পর এক
বিভিন্ন চিঠি বাংলাদেশের জনগণের
মধ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তি
সৃষ্টি করেছে। মানুষের মধ্যে প্রশ্ন, আসলে কী হচ্ছে?
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে,
এসব কিছু নয়। আমাদের
এসবে কিছু যায়-আসে
না। কিন্তু এসব চিঠি বিশ্ব
অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। চিঠির
ভাষা আপত্তিকর এবং আক্রমণাত্মক। এসব
চিঠিতে ন্যূনতম কূটনৈতিক শিষ্টাচার মানা হয়নি। বাংলাদেশ
সম্পর্কে কম জানেন, এমন
যে কেউ এসব চিঠি
পড়ে মনে করতেই পারেন,
বাংলাদেশ বোধহয় মিয়ানমার, কিংবা পাকিস্তানের মতো একটি রাষ্ট্র।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো,
সব চিঠির ভাষা প্রায় একইরকম।
বাংলাদেশের
ওপর চিঠিবোমা শুরু হয় গত
২৬ মার্চ থেকে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জো
বাইডেন প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এ চিঠি লেখেন।
কিন্তু বাইডেনের চিঠি শুধু শুভেচ্ছাবার্তা
ছিল না। চিঠিতে তিনি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়;
সেই বার্তাও দেন। এটি মার্কিন
প্রেসিডেন্টের প্রত্যাশা নয়, ছিল সতর্কবার্তা,
প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি। এরপরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ৩ মে বাংলাদেশের
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে
রেখে নতুন ভিসা নীতি
চূড়ান্ত করেন। ব্লিঙ্কেন ২৪ মে আনুষ্ঠানিকভাবে
এ ভিসা নীতি ঘোষণা
করেন। ২ জুন মার্কিন
কংগ্রেসের ছয় রিপাবলিকান সদস্য
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বাংলাদেশ
সম্পর্কে চিঠি লেখেন। ভার্জিনিয়ার
কংগ্রেস সদস্য বব উড ওই
চিঠি তার ওয়েবসাইটে প্রকাশ
করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে লেখা চিঠিতে
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করা হয়। চিঠিতে
বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ,
সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করার জন্য মার্কিন
প্রেসিডেন্টকে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। ৮ জুন
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট-দলীয় ছয়জন কংগ্রেসম্যান
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রায় একইরকম
চিঠি দেন। আর ১২
জুন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয়জন এমপি তাদের
পররাষ্ট্র এবং নিরাপত্তাবিষয়ক উচ্চপ্রতিনিধি
জোশেফ বারিলের কাছে চিঠি লেখেন।
ওই চিঠিতে তারা বাংলাদেশে আগামী
নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করার
লক্ষ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি করেন। মার্কিন
কংগ্রেসম্যানদের অনুকরণে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, সংখ্যা নিপীড়নের মতো কিছু বিষয়
উত্থাপন করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় এমপির চিঠিবোমার
দিনই আরেক চিঠি আঘাত
হানে বাংলাদেশের ওপর। বিতর্কিত মানবাধিকার
সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এদিন তাদের
ওয়েবসাইটে একটি চিঠি প্রকাশ
করে। চিঠিটি লেখা হয়েছে জাতিসংঘের
আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জাঁ পিয়ের লাক্রোয়ারকে।
চিঠিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, জাতিসংঘে শান্তি মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয় যাচাই করার
আহ্বান জানায়। শোনা যায়, সামনে
নাকি আরও এরকম ভয়ংকর
চিঠিবোমার আক্রমণ হবে।
বাংলাদেশ
একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশে নির্বাচন কীভাবে হবে, সেটি এ
দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধ
থাকতেই পারে। কীভাবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন
করা যায়—তা নিয়ে
রাজনৈতিক বিতর্ক হতেই পারে। কিন্তু
বাংলাদেশের ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের জনপ্রতিনিধি ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো
যেভাবে প্রকাশ্যে চিঠি চালাচালি করছে,
তা শুধু কূটনৈতিক রীতিনীতির
লঙ্ঘন নয়। একটি স্বাধীন
দেশে নোংরা হস্তক্ষেপ। বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলেরই
এসব হুমকি আমলে দেওয়া উচিত
নয়। ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করা উচিত। প্রত্যেকটি
রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হলো,
তাদের প্রশ্ন করা—এসব নিয়ে
তোমাদের অতি আগ্রহের কারণ
কী? প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ১২ জন
আইনপ্রণেতা বাংলাদেশ নিয়ে আর্তনাদ করেছেন।
কেউ কি জিজ্ঞেস করেছেন
মার্কিন গণতন্ত্রের হালহকিকত কী? সেখানে আইনের
শাসনের কী অবস্থা? এই
মুহূর্তে দেশটির ৫৩ শতাংশ নাগরিক
মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত। ৭১
ভাগ জনগোষ্ঠী মনে করেন দেশটি
গণতন্ত্র সংকটাপন্ন। ৫৩ শতাংশ ভোটার
বিশ্বাস করেন, বিগত নির্বাচনে ট্রাম্পকে
জোর করে হারানো হয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একের পর এক
মামলা হচ্ছে। নিউইয়র্কের কোর্ট, ফ্লোরিডার আদালতে ঘুরছেন ৭৭ বছর বয়সী
এ সাবেক প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প মার্কিন বিচার বিভাগকে ঠগদের আখড়া বলেছেন। এফবিআইকে
চিহ্নিত করেছেন ‘দুর্নীতিবাজ’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, আগামী
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে তাকে দূরে
সরিয়ে রাখার জন্যই এসব হয়রানি করা
হচ্ছে। কোথাও কেউ তো যুক্তরাষ্ট্রের
আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে
না। যে দেশের কংগ্রেসম্যানরা
নিজের দেশের গণতন্ত্র ঠিকঠাক রাখতে পারেন না, তারা বাংলাদেশের
গণতন্ত্র নিয়ে এত উদ্বিগ্ন
কেন? মজার ব্যাপার হলো,
যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা মুখোমুখি,
যুদ্ধাংদেহী। তারা বিশ্বের অন্যতম
সুন্দর দেশটাকে বিভক্ত করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে তারা একাট্টা।
এ দেশে কী এমন
মধু আছে যে, দুপক্ষ
মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল! যে
কোনো মনোযোগী পাঠক ডেমোক্র্যাট ও
রিপাবলিকানদের চিঠিগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লে বুঝবেন,
এগুলো একই। এমনকি বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রীর নামটিও একইরকম ভুলে লেখা হয়েছে
দুটো চিঠিতেই। অর্থাৎ দুটি চিঠিই একই
ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত। মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের দুর্নীতির নানা কেচ্ছাকাহিনি সেখানকার
পত্র-পত্রিকাতেই নানা সময়ে প্রকাশিত
হয়। এ নিয়ে অনেক
বই-পুস্তকও আছে। কংগ্রেসম্যান কিংবা
সিনেটররা লবিস্টদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনেক বক্তৃতা-বিবৃতি দেন, এটা সবার
জানা। অনেক বড় বড়
কোম্পানি রাষ্ট্রীয় নীতি, আইন এবং সিদ্ধান্ত
তাদের পক্ষে আনতে কংগ্রেসম্যান, সিনেটরদের
নানাভাবে প্ররোচিত ও প্রভাবিত করেন।
লবিস্ট দ্বারা প্ররোচিত হয়ে কিংবা উপঢৌকন
(সেটি আর্থিকও হতে পারে) নিয়ে
কারও পক্ষে চিঠি দেওয়া মার্কিন
রাজনীতিতে জায়েজ। গত কয়েক বছর
ধরেই বিএনপি ও জামায়াত সরকারকে
কাবু করতে মার্কিন প্রশাসনকে
প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।
বেশ কয়েক বছর ধরে
বিএনপি বিপুল অর্থ দিয়ে কিছু
লবিস্ট ফার্ম ভাড়া করেছে। বিএনপি
নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেই এ ধরনের লবিস্ট
ফার্ম ভাড়া করার কথা
স্বীকার করেছেন। অতিসম্প্রতি মার্কিন গণমাধ্যম, স্থানীয় বিএনপি নেতা আবদুস সাত্তারের
বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বিএনপি
‘ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিক’ নামে একটি লবিস্ট
ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছে। এটি মার্কিন নীতিনির্ধারকদের
মধ্যে অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি প্রতিষ্ঠান। নিউইয়র্ক
পোষ্টের খবর অনুযায়ী, মার্কিন
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে
হান্টার বাইডেন ব্লু স্টারের একজন
পরামর্শক। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে
যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভাবিত করতেই বিএনপি যে এরকম একটি
ব্যয়বহুল প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া করেছে, এটা
বোঝার জন্য পণ্ডিত হওয়ার
দরকার নেই। কাজেই সামনে
নির্বাচন নিয়ে মার্কিন প্রশাসন
যে বাংলাদেশের ওপর আরও চাপ
দেবে, তা বলাইবাহুল্য। লবিস্টদের
নেতিবাচক প্রচারণার কারণেই র্যাবের ওপর
নিষেধাজ্ঞা। এ জন্যই গণতন্ত্র
সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। এ
জন্যই বাংলাদেশে মানবাধিকার ইস্যুকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন। বিএনপি এটা জেনেবুঝেই করছে।
এ কারণেই দেশে আন্দোলনের চেয়ে
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দলটি এখন বেশি
ব্যস্ত। সরকারকে চাপে ফেলতে গিয়ে
বিএনপির লবিস্টরা বাংলাদেশকেই বাজেভাবে উপস্থাপন করছে। বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট করছে।
এটা নিয়ে বিএনপিকে সমালোচনা
করা যেতেই পারে। কিন্তু বিএনপি নেতারা এসব সমালোচনায় লজ্জিত
হন না। তারা মনে
করেন, যে কোনো উপায়ে
সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে।
এমনকি ‘বাংলাদেশ’কে ভয়ংকরভাবে বিশ্বে
চিত্রিত করে হলেও। কিংবা
এ দেশের জনগণের মুখে চুনকালি মাখিয়ে
দিয়েও আওয়ামী লীগকে হটাতে চায় বিএনপি। কিন্তু
বিএনপির এ হিংসাত্মক কূটনীতির
বিরুদ্ধে সরকার কী করছে? যুক্তরাষ্ট্র
যখন সাত কর্মকর্তাসহ র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা
করল, তখন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ
দূতাবাস ছিল অন্ধকারে। মার্কিন
ওয়েবসাইট দেখে তারা এটি
জানতে পারে। অথচ কূটনীতি সম্পর্কে
ন্যূনতম জ্ঞান রাখা মানুষও জানেন
এটা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার
ব্যাপার। বাংলাদেশ দূতাবাস কি তাহলে নাকে
তেল দিয়ে ঘুমিয়ে ছিল?
র্যাব এবং তাদের
কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার
পর সরকারের টনক নড়ে। ওয়াশিংটনে
দায়িত্ব পালন করা সাবেক
ছাত্রদল নেতা রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে
আনা হয়। দায়িত্ব দেওয়া
হয় আরেক ‘চৌকস’ কূটনীতিককে। কিন্তু তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের
দূতাবাসের দায়িত্ব গ্রহণের পরও কি পরিস্থিতির
উন্নতি হয়েছে? মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ৩ মে নির্বাচন
সামনে রেখে বাংলাদেশে নতুন
ভিসা নীতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত
নেয়। তখনই দূতাবাস বিষয়টি
জানতে পারে। উন্নতি বলতে এটুকুই। ৩
মের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় ২৪
মে। এ সময়ের মধ্যে
দূতাবাস কী করেছে, তা
জানার অধিকার এ দেশের জনগণের
আছে। একের পর এক
মার্কিন আইনপ্রণেতারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চিঠি লিখছেন। এসব
চিঠিতে অবাস্তব, আজগুবি সব অভিযোগ উত্থাপন
করা হচ্ছে। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাসের করিৎকর্মারা কি ওইসব আইনপ্রণেতার
সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন? তাদের বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের তথ্য ভুল। খ্রিষ্টান
ধর্মাবলম্বীদের ওপর কোনো নিপীড়ন
হয়নি। আমাদের ‘অতি মেধাবী’ ডিপ্লোম্যাটরা
কেন ছয়জন কংগ্রেসম্যান কিংবা
সিনেটর জোগাড় করতে পারেন না।
তাদের কাছ থেকে একটি
বিবৃতি আদায় করা কি
অসম্ভব? এ প্রসঙ্গে ২০১৪
সালের একটি ঘটনার উদাহরণ
দিতে চাই। যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের
রাষ্ট্রদূত তখন এস জয়শঙ্কর।
কাশ্মীর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ১০
জন আইনপ্রণেতা একটি চিঠি দিলেন।
জাতিসংঘের মহাসচিবকে লেখা চিঠিতে কাশ্মীর
নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান সমর্থন করলেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা। ভারতের রাষ্ট্রদূত তাৎক্ষণিকভাবে তার তীব্র প্রতিবাদ
করলেন। এ সপ্তাহের মধ্যে
প্রত্যেক স্বাক্ষরদাতার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করলেন। ১০ দিন পর
এক বিবৃতি দিয়ে কংগ্রেস সদস্যরা
তাদের বক্তব্য প্রত্যাহার করলেন। আমি জানি, এ
ঘটনা জানার পর অনেকেই বলবেন,
ভারত বড় দেশ। তারা
যা পারে, আমরা কি তা
পারি? এ ধরনের কথাবার্তা
দায় এড়ানোর কৌশল ছাড়া আর
কিছুই নয়।
’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তাহলে
আমাদের কূটনীতিকরা কীভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিতে পেরেছিলেন? তখন
তারা রাষ্ট্রদূতও ছিলেন না। তাদের ছিল
না বেতন, ভাতা। তবুও তারা বাংলাদেশের
পক্ষে বিশ্ব জনমত জাগ্রত করেছিলেন
অসম্ভব দক্ষতায়। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী,
এম হোসেন আলী, শাহ এম
এস কিবরিয়া, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীরা তো
কোনো সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিলেন। কারণ
তাদের দেশপ্রেম ছিল। এটাকে তারা
চাকরি হিসেবে নেননি। এখন বিদেশি দূতাবাসগুলোর
পেছনে সরকার অনেক ব্যয় করে।
তাদের সুযোগ ও সুবিধাও অনেক।
বাংলাদেশের জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় বিদেশে বাংলাদেশের এলিট ডিপ্লোম্যাটরা আরামে
আয়েশে জীবনযাপন করেন। অনেক রাষ্ট্রদূত এবং
কূটনীতিকের কাজকর্ম দেখে মনে হয়
যেন তারা বিনোদন ছুটিতে।
প্রটোকল দেওয়া আর আনুষ্ঠানিক বৈঠক
ছাড়া অনেকের কোনো কাজ নেই।
প্রবাসী বাঙালিদের দূতাবাস নিয়ে আছে অনেক
দুঃখ-বেদনার গল্প। অধিকাংশ বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো নিষ্ক্রিয়। অনেকে অবসরোত্তর পুরস্কার পেয়ে সেখানে আমোদফুর্তিতে
ব্যস্ত। সাইবার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তাদের তৎপরতা নেই। বাংলাদেশবিরোধী নেতিবাচক
প্রচারণার বিরুদ্ধে তাদের কূটনীতি নেই। এমনকি বিভিন্ন
রাষ্ট্র বাংলাদেশ সম্পর্কে যে বিভ্রান্তিকর তথ্য
পাছে, তার পাল্টা পদক্ষেপও
নেই। তাই বাংলাদেশের ইমেজ
নষ্টের এক প্রকাশ্য যুদ্ধ
এখন দৃশ্যমান। এটাও ’৭১-এর মতোই
এক যুদ্ধ। স্যুট-টাই পরা আমাদের
মেধাবী ফরেন সার্ভিস ক্যাডারের
ঘুম ভাঙাবে কে?
লেখক
: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭