প্রকাশ: 21/06/2023
এজবাস্টনে বৃষ্টিস্নাত দিনে মাঠের কোনা ধরে হাঁটছিলেন ইংলিশ দলপতি বেন স্টোকস। অত্যন্ত চিন্তিত, উদ্বিগ্ন মনে ভেজা বর্ষায় তার মন আটকে ছিলো কেবল পিচের দিকেই। উমর খাজা নামে এক পিলার গেঁথে আছে তার মনে। অনেক পরিকল্পনা অনেক কারিগরি চেষ্টা কোনো ভাবেই সেই পিলারটা সরছে না মন থেকে। সেই সময় ‘বাজ’ পাখির মত উড়ে এলো ইংল্যান্ড কোচ ব্রান্ডন ম্যাককালাম। ভেজা মাঠ দেখে বেন স্টোকসের সাথে গল্প জুড়ে দিলেন এজবাস্টনের পুরনো রূপ নিয়ে। কিভাবে এজবাস্টনে আমব্রেলার মত কভার ব্যবহার করত বৃষ্টি থেকে পিচ বাঁচানোর জন্য। এই থেকেই ইংলিশ দলপতি বুদ্ধি আটে কিভাবে শায়েস্তা করা যায় খাজা নামক এই পিলারটি। পিচের চারপাশে তৈরিও করেন এক মানব আমব্রেলা যাতে ধরা দেয় সেই বেদনা দায়ক পিলার।
উপরের গল্পটি কেবল লেখকের কল্পনা। বাস্তবে এমনটা না ঘটার সম্ভাবনা প্রবল। আসলে, গত
রোববার (১৮ জুন) এজবাস্টনে
অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনে চমক উপহার দেন স্টোকস। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে লম্বা সময় ধরে উইকেটে থাকা অস্ট্রেলিয়ার উসমান খাওয়াজাকে চাপে ফেলতে তিনি ব্যবহার করেন 'ব্রামব্রেলা'। হাতেনাতে সেটার
সুফলও পায় ইংল্যান্ড। এগিয়ে এসে ক্রিজের দুই পাশে সমান তিন জন করে ক্যাচিং
পজিশনে থাকা মোট ছয় জন ফিল্ডারের
মাথার উপর দিয়ে বল হাঁকাতে গিয়ে
কুপোকাত হন খাজা। ডানহাতি
পেসার অলি রবিনসনের নিখুঁত ইয়র্কারে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় স্টাম্প।
ব্রামবেলা আসলে কি? কোথা থেকে আসলো এই নাম?
'ব্রামব্রেলা'কে 'রিভার্স আমব্রেলা'ও (উল্টো ছাতা)
বলা হচ্ছে গণমাধ্যমে। বোলার ও উইকেটরক্ষকের মধ্যে
একটি কাল্পনিক রেখা টানা হলে সেটা যেন ছাতার ডাঁট এবং ক্রিজের দুই পাশে থাকা তিন জন করে ফিল্ডার
যেন ছাতার একেকটি শিক!
১৯৮১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত বার্মিংহামের এজবাস্টন মাঠে যে কভার পিচ
ব্যবহার করা হতো, সেটা ছিল অনেকটা ছাতা আকৃতির। এর সুবিধা ছিল
বৃষ্টি শুরু হলে দ্রুত পিচের ওপর নিয়ে বসিয়ে দেওয়া যেত। বার্মিংহামের ডাকনাম ‘ব্রাম’ শব্দের সঙ্গে ‘আমব্রেলা’কে যুক্ত করে
ব্রামব্রেলা নামে ডাকা হতো বড় আকারের ওই
পিচ কভারকে।
তবে
দুই দশক ব্যবহারের পর এটি পাল্টে
ফেলা হয়। বড় কারণ ছিল,
ব্রামব্রেলা থেকে পানি চুইয়ে পড়ত, যা দীর্ঘসময় বৃষ্টির
ঘটনায় পিচের আরও ক্ষতি করতো। বিশ বছরের বেশি সময় পর এজবাস্টনে আবারও
ব্রামব্রেলা ফিরেছে। তবে এই ফেরাটা পিচ
কভার রূপে নয়, ফিল্ডিং সেটআপ হিসেবে।
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার উসমান খাজাকে যখন সুইং, বাউন্সার বা স্পিন কোনোভাবেই
আউট করা যাচ্ছিল না, ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস এক অভিনব ভঙ্গিমার
ফিল্ডিং সাজান। অলি রবিনসনের ওভারে খাজার বিপক্ষে কাছাকাছি ছয়জন ফিল্ডার দাঁড় করানো হয়।
লেগ
সাইডে শর্ট স্কয়ার লেগ থেকে শর্ট মিড অনের মধ্যে তিনজন আর অফ সাইডে
শর্ট কভার থেকে শুরু করে শর্ট মিড অফ পর্যন্ত তিনজন।
ফিল্ডারদের নিজেদের মধ্যে দূরত্ব ছিল দুই থেকে তিন মিটারের মতো। আর ব্যাটসম্যান খাজা
থেকে দূরত্ব ছিল ১২ থেকে ১৫
মিটার। ব্যাটসম্যানের কেন্দ্র করে ছয়জন ফিল্ডারের এভাবে ছাতার মতো দাঁড়িয়ে থাকাকে বলা হচ্ছে ব্রামব্রেলা। যা কিছুক্ষণের মধ্যেই
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিসহ ভাইরাল হয়ে যায়।
স্টোকসের
ব্রামব্রেলায় ইংল্যান্ডের লাভই হয়েছে। উসমান খাজা সাধারণত উইকেট ছেড়ে খেলেন না। কিন্তু ব্রামব্রেলা ফিল্ডিংয়ের সুবিধা নিতেই হয়তো রবিনসনকে উইকেট ছেড়ে জায়গা করে খেলার চেষ্টা করতে গেছেন তিনি। আর সেটা করতে
গিয়েই ৭ ঘণ্টা ৫৮
মিনিট ক্রিজ আকড়ে থাকা খাজা ইয়র্কারে বোল্ড হন।
যাই হোক,এজবাস্টন টেস্ট শেষে ফলাফল অজিদের ঘরে। মানসিক
চাপের সঙ্গে যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নদের কাছে অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে ইংলিশদের হারতে হয়েছে দুই উইকেটে।
মোটামুটি চ্যালেঞ্জ
দিয়েই “বাজবলের” বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের ঘরের মাঠে তাদের হারিয়েছে প্যাট কামিন্স বাহিনী।
ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস এই ‘ব্রামব্রেলা’ কৌশলের রুপকার। ফলকেন্দ্রিক ভাবনায় আক্রমণাত্মক ও ইতিবাচক ক্রিকেটের
যে ধারা ইংল্যান্ড দল গত এক
বছর খেলে চলেছে, তাকে বলা হচ্ছে ‘বাজবল’। ইংল্যান্ডের টেস্ট
কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ডাকনাম ‘বাজ’।
নিউজিল্যান্ডের সাবেক এই অধিনায়ক ইংল্যান্ডের কোচ হওয়ার পর দলের মধ্যে যে পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন, সেটিকে তার নামের সঙ্গে মিলিয়ে ডাকা হচ্ছে। ‘ব্রামব্রেলা’র গল্পটা অবশ্য ম্যাককালাম বা স্টোকসের সঙ্গে নয়, বার্মিংহামের এজবাস্টন স্টেডিয়ামের সেই ছাতার মত পিচ কভারের সঙ্গে মিল রেখেই নামকরন করা হয়েছে।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭