ইনসাইড বাংলাদেশ

মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনিতে পাথর উত্তোলন বন্ধের আশংকা


প্রকাশ: 20/06/2023


Thumbnail

দীর্ঘ দুমাস ধরে বকেয়া পাওনা না মেলায় ৭০ বিদেশী খনি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী শতাধিক বাংলাদেশী দেশি খনি শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা দিতে হিমশিম খাচ্ছে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) এতে খনি ভুগর্ভে নতুন নতুন স্টোপ উন্নয়ন, উৎপাদন রক্ষণাবেক্ষণ কাজ ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। খনি কর্তৃপক্ষ সময়মতো ঠিকাদারি কাজের বিল পরিশোধ না করায় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে ভুক্তভোগি শ্রমিক-কর্মচারীরা জানিয়েছেন।

 

জানা গেছে, ২০০৭ সালে উত্তর কোরীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নামনাম মধ্যপাড়ায় খনিজ পাথরের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। এরপর পর থেকে নানা প্রতিকুলতায় পেট্রোবাংলার প্রকল্প প্রস্তাব (পিপি) অনুযায়ী প্রতিদিন তিন শিফটে হাজার টন পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পাথর উৎপাদন শুরুর করলেও দিনে মাত্র এক শিফটে টনের বেশি পাথর উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি। এতে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত বছরে খনিটি লোকসান দিয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা। অবস্থায় ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বছরের জন্য খনির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় বেলারুশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)কে।

 

বর্তমানে খনির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভূগর্ভে অত্যাধুনিক মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট বসানো হয়েছে। ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী দক্ষ শ্রমিক দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির হাত ধরে খনিটি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রথমবারের মত লোকসানের গন্ডি পেরিয়ে লাভের মুখ দেখে। এভাবে সক্ষমতার পুরোটা কাজে লাগিয়ে বিগত টানা চার অর্থবছর ধরে খনিটি মুনাফা করে আসছে। প্রথম দফায় জিটিসির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় দফা চুক্তির আওতায় বছরের জন্য ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পাথর উৎপাদন শুরু করে তারা। চুক্তি অনুযায়ী এসময়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৮৮ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করবে।

 

ইতিমধ্যে চুক্তির প্রায় দুই বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। পাথর উৎপাদনে ধারাবাহিক সাফল্যও অব্যাহত রয়েছে। কেবল গত মে মাসেই অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে খনি থেকে প্রতিদিনি তিন শিফটে প্রায় সাড়ে হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে।

 

পেট্রোবাংলার একটি সুত্র জানায়, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রতি মাসের ২৮ তারিখের মধ্যে খনি কর্তৃপক্ষ (পেট্রোবাংলা) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাদের পুর্ববর্তী কাজের পাওনা পরিশোধ করবে। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিগত দুই মাসেরবকেয়া বিলএখনও পরিশোধ করা হয়নি। এতে একদিকে যেমন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে খনির উৎপাদন রক্ষণাবেক্ষন কাজ পরিচালনা এবং কর্মকর্তা-শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন পরিশোধে গভীর সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।

 

অন্যদিকে, খনির কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শংকা বাড়ছে। এমন সংকটের মধ্যে গত ১০ জুন খনির ওয়েলফেয়ার ভবন চত্বরে উৎপাদিত পাথরের বিল পরিশোধের দাবিতে সংকট নিরসনের আশায় জিটিসি অধীনে কর্মরত খনি শ্রমিকরা এক দোয়া মাহফিল প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে  গত দুমাস ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় খনি শ্রমিক হাফিজুর রহমান, আনিছুর রহমান, লোকমান আলীসহ অনেকে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের মানবেতর জীবন যাপনে কথা তুলে ধরেন। বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খনি ভূগর্ভে নতুন নতুন স্টোপ উন্নয়ন পাথর উত্তোলন কাজের প্রস্তুতি সময়মতো সম্পন্ন করতে না পারায় পাথর উত্তোলন কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে তারা আশংকা প্রকাশ করেন। মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড (এমজিএমসিএল) এর একটি প্রভাবশালী চক্র পাথর উত্তোলন বন্ধে এসব অপৎপরতা শুরু করেছে বলে শ্রমিক-কর্মচারীরা সমাবেশে অভিযোগ উত্থাপন করেন।

 

এব্যাপারে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আবু দাউদ মোহাম্মদ ফরিদুজ্জামান বলেন- পাথর বিক্রির জন্য দারে দারে ঘুরছি। বাজারের তুলনায় মধ্যপাড়া খনির পাথর গুনে-মানে ভাল, দামও কম। তা সত্বেও পাথর বিক্রি না হওয়ায় ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭