ইনসাইড বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্র কি শুনবে ভারতের কথা?


প্রকাশ: 21/06/2023


Thumbnail

আগামীকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবার কথা আছে। হোয়াইট হাউজে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। তাকে স্মরণীয় অভ্যর্থনা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নানা কারণে কৌশলগত দিক থেকে ভারত এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে মার্কিন আধিপত্য এবং নেতৃত্ব এখন চ্যলেঞ্জের মুখে। রাশিয়া-চীন মার্কিন নেতৃত্বকে শুধু চ্যালেঞ্জই করেনি বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে রীতিমত কোণঠাসা করে ফেলেছে। ক্ষয়িষ্ণু ইউরোপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের জন্য যথেষ্ট নয়। ইউরোপের মধ্যে তুরস্ক এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চোখ রাঙাচ্ছে। এরকম একটি পরিস্থিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে মরিয়া মার্কিন প্রশাসন জো বাইডেন। এই প্রেক্ষাপটেই নরেন্দ্র মোদির সফর। 

নরেন্দ্র মোদির এবারের সফরটিকে মার্কিন যুক্ত্রাষ্ট্রের প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক সফর বলা হচ্ছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি এখানে স্বাক্ষর হবে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টি এই সফরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাংলাদেশের ব্যপারে কি আলোচনা করে তা নিয়ে। আজ প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়টিকে কৌশলে উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তাদের নিজস্ব পররাষ্ট্র নীতি আছে। কাজেই তারা বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কি বলবে এটি তাদের নিজস্ব ব্যপার। তবে প্রধানমন্ত্রী এটিও বলেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক রয়েছে। 

স্পষ্টতই ইঙ্গিত করে যে বাংলাদেশের সরকার জানে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হবে। হিন্দুস্তান টাইমসের খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ভারতের পররাষ্ট্র জয়শঙ্করকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। আজ এই বিষয়টি নিয়েও সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে একাধিক সূত্র বলছে যে, বাংলাদেশ নিয়ে যে নরেন্দ্র মোদি কথা বলবেন এটি নিশ্চিত এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত চাপ কমানোর লক্ষে কাজ করবেন সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আসা না আসা যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় সেটিও মার্কিন প্রশাসনকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যপার। সেই নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ হয় সেটি সকলের প্রত্যাশা করা উচিৎ এমন মনোভাব তুলে ধরবেন। 

বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কয়েকটি বিষয়ে অভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাপারে চীনের বাড়াবাড়ি রকমের আগ্রহ এবং চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের উত্থান দুটি দেশের কেউই খুব একটা পছন্দ করছে না। আর তাই চীনের সঙ্গে সম্পর্কের লাগাম টেনে ধরার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভারতই বেশি সফল হবে এই বার্তাটি নরেন্দ্র মোদি জো বাইডেনকে দেবেন বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছে । এই বার্তাটি যদি যথাযথ ভাবে দেওয়া হয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে আর কোনো বিকল্প থাকবে না। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র ভারতের শান্তি, স্থিতিশীলতার একটি পূর্বশর্ত। কারণ ২০০৯ সালের আগে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যেভাবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারতে অশান্তি সৃষ্টি করত ভারত সেই জায়গা থেকে মুক্ত হয়েছে। ভারত এখন বাংলাদেশের মাধ্যমে সেভেন সিস্টারে সহজেই যাতায়াত করতে পারছে। এই সম্পর্কটা ভারত কিছুতেই নষ্ট করতে চাইবে না। কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতে কথা শুনবে কি না সেই প্রশ্নের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতে কথা কতটুকু শুনবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭