ইনসাইড বাংলাদেশ

সুইস ব্যাংক থেকে পাচারের টাকা যাচ্ছে দুবাইয়ে


প্রকাশ: 23/06/2023


Thumbnail

সুইস ব্যাংকের অর্থ তুলে নিচ্ছে বাংলাদেশিরা। সুইস ব্যাংক ব্যাংক থেকে বিস্ময়কর গতিতে বাংলাদেশিদের আমানত তুলে নেওয়া হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী মাত্র এক বছরে সুইস ব্যাংকগুলো থেকে ১০ হাজার পাঁচশ সাইত্রিশ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশিরা। ২০২১ সালে যেখানে বাংলাদেশিদের আমানত ছিল ৮৭ কোটি এক লাখ সুইস ফ্রাঁ, ২০২২ তা কমে দাঁড়িয়েছে টাকা 5 কোটি ৫২ লাখ ফ্রাঁ-তে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে এই চিত্র পাওয়া যায়। প্রশ্ন উঠেছে যে, এই ১০ হাজার পাঁচশ সাইত্রিশ কোটি টাকা কোথায় গেল। সুইজারল্যান্ড থেকে এই টাকা যদি বাংলাদেশে আসত তাহলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের এই হাল হতো না। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এই দুরবস্থা হতো না। অর্থনীতিবিদরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, এই টাকা বাংলাদেশে আসেনি। 

নানা কারণেই সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশগুলো এখন পাচার করা অর্থ রাখার জন্য নিরাপদ জায়গা বলে বিবেচিত হচ্ছে না। কারণ আন্তর্জাতিক অর্থ পাচার তদারকি এবং তদন্ত এখন আগের চেয়ে অনেক জোরদার হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গুলো একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ থেকে যারা অর্থ পাচারকারী তাদেরকেও নানাভাবে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আরেকটি কারণ হলো সামনে নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তার মধ্যে যদি ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয় তাহলে যে সমস্ত দেশগুলোতে পাচারকৃত অর্থের দিকে নজর যাবে তার মধ্যে অন্যতম হলো সুইস ব্যাংকগুলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি এবং অন্যান্য পদক্ষেপের কারণে ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও পাচারকারীরা অর্থ সরাতে শুরু করেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো পাচারকারীরা এসব অর্থ সরিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে আসছে না। বাংলাদেশে টাকা আসার পরিমাণ খুবই কম। 

দুমাস আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে বেশকিছু অর্থ আসছিল। কিন্তু এ নিয়ে আলোচনার পর এখন সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বা তদন্ত করলে দেখা যাবে যে সুইস ব্যাংকের টাকা গুলো যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। দুবাই এখন অর্থপাচারের বড় হাব হয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তিরা অর্থ পাচার করে, অর্থ সম্পদ লুট করে দুর্নীতি করে এখন টাকা রাখা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচনা করছেন দুবাইতে। যে ১০ হাজার পাঁচশ সাইত্রিশ কোটি টাকা সুইস ব্যাংক থেকে এ বছর উত্তোলন করা হয়েছে সেই টাকা যে দুবাই গেছে এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদদের কোন রকম সন্দেহ নেই। তারা মনে করছেন যে, এই টাকাগুলোর গতিপথ পর্যবেক্ষণ করলে পাওয়া যাবে যে অর্থ পাচারকারী কারা। কিন্তু সেটা সরকার করবে কিনা তা নিয়ে কোনো কোনো অর্থনীতিবিদের সংশয় রয়েছে। 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে দুবাইয়ে সম্পদশালীদের অর্থ পাচারের প্রবণতা এবং ঝোঁক বেড়েছে। তারা কথায় কথায় দুবাই যাচ্ছেন এবং দুবাইতে দোকানপাট, শপিং মল, আবাসন খাতে বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ হচ্ছে। এই টাকা যে পাচারের টাকায় এ নিয়ে কারো কোনো সন্দেহই নেই। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন, নানা কারণেই সুইস ব্যাংক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার চেয়ে দুবাইয়ের টাকা রাখা সুবিধাজনক হচ্ছে। পাচারের এই টাকা বেহাত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। দুবাই পাচারকৃত অর্থ কোন সরকারের অনুরোধে ফেরত দেয় না। দুবাই বা সংযুক্ত আরব আমিরাতে অর্থ পাচারকারীদের তথ্য প্রকাশ করা হয় না। সেখানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে যে কেউ যে কোনো পরিমাণ অর্থ রাখতে পারে। সেখানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ  কর দিয়ে যে কেউ যেকোনো সম্পদের মালিক হতে পারে। দুবাই বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধান নীতি হলো সেখানে বসে যদি কেউ কোন অপরাধ না করে তাহলে অন্য দেশের অপরাধের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। আর এর ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিভিন্ন দেশের লুণ্ঠনকারী, দুর্নীতিবাজ, দুর্বৃত্তদের অভয়াস্থলে পরিণত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। 

অনুসন্ধান করে দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে দুবাইয়ের যে পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে তা বিস্ময়কর। সুইস ব্যাংকগুলো নিরাপদ নয়, সেখানকার গুচ্ছিত অর্থ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নানারকম লেখালেখি হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা পাচার তদারকি সংস্থাগুলো সুইস ব্যাংক বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থপাচার গভীরভাবে মনিটরিং করে। এ কারণেই এখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো পাচারকারীদের নতুন ঠিকানা হয়েছে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭