ইনসাইড থট

‘আমেরিকার চরিত্র বদলাতে সময় লাগে না’


প্রকাশ: 24/06/2023


Thumbnail

আগত বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে বর্তমানে আলাপ-আলোচনার কোনো শেষ নেই- এটা অবশ্য খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যখন নির্বাচনের মাত্র পাঁচ মাস বাকি, তখন আলাপ-আলোচনা হবে-এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে বাঙালিরা সকলেই অত্যন্ত রাজনৈতিক সচেতন এবং রাজনীতি নিয়ে আলাপ করতে যতো আনন্দ পান, আমার মনে হয়- সিনেমা দেখেও ততো আনন্দ পান না। এর প্রমাণ হলো- রাস্তার পাশে সামান্য পানের দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় অফিসে, বড় বড় রাজনীতিবিদদের অফিসসহ সব জায়গায় মূলত রাজনীতিকেন্দ্রিক আলাপ-আলোচনা। আপনারা যদি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দিকে লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন- যে সকল ইলেকট্রনিক মিডিয়া আছে, শুধু খবরের উপরেই একটি টেলিভিশন চলতে পারে, কিন্তু শুধু বিনোদন দিয়ে কোনো টেলিভিশন বাংলাদেশে চলবে না। কারণ আমরা মানসিকভাবে সেইভাবে প্রস্তুত না। সুতরাং সেই কারণে নির্বাচন নিয়ে এতো আলাপ-আলোচনা হয়। এতে আমিও ব্যতিক্রম নই।

গত তিন-চার বছর ধরে আমি একটি কথাই বলে যাচ্ছি, বাংলাদেশের নির্বাচন জনগণের দ্বারা নির্বাচিত বর্তমান সরকার প্রধান দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার অধীনেই হবে এবং সংবিধানের দাড়ি, কমাসহ কোনো ধরনের পরিবর্তন বা কোনো প্রকার অন্যথা হওয়ার সুযোগও নেই- হবেও না এবং জনগণও এটা চায় না। এখন অনেকে রাজনীতি করার জন্য, অনেকে বিদেশিদের বুদ্ধিতে, অনেকে নিজেদের বুদ্ধির দৈন্যতার জন্য- এসব করছে। তারা বুঝেও না যে, তাদের বুদ্ধির দৈন্যতা আছে। এর প্রমাণ হচ্ছে এদেশে এক-এগারো। ঝানু ঝানু রাজনীতিবিদরা বুঝতে পারলো না, দেশ কোন দিকে যাইতে পারে? তারা জীবন সায়াহ্নে এসে মারাত্মক ভুল করেন এবং কবরে যাওয়ার আগে তার সে ভুল সংশোধনের কোনো সুযোগ পাবেন না। কারণ রাজনীতিতে এই সুযোগ কাউকে দেওয়া হয় না। এখন সেই কারণের জন্যই আমার ধারণা, যে সকল এইসব তথাকথিত- যারা নিজেদের বুদ্ধিজীবী হিসেবে দাবি করেন, তাদের সবকিছুই আছে, শুধু কমতি আছে বুদ্ধির। মনে রাখতে হবে- একজন বুদ্ধিমান এবং আরেকজন কানিং আমরা যাকে বলি ধূর্ত- এক বিষয় নয়। আমাদের অনেক ধূর্ত লোক আছে, যারা নিজেদেরকে বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচয় দেন। আসলে তারা ধূর্ত, তারা বুদ্ধিজীবী নয়।- এই বিষয়টি আমরা অনেক সময় সাধারণ মানুষরা বুঝতে পারি না। 

এই ধূর্ত লোকরাই বিএনপিকে বুদ্ধি দিয়েছে, নির্বাচন নিয়ে এইসব কথা বলো এবং এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না, যেটা সংবিধানে নেই, সংবিধান পরিবর্তন করে করতে হবে। তারা কত বুদ্ধিহীন হতে পারে, যখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে গেছেন, তখন তারা বলে, এই রাষ্ট্রপতিকে-তো আমরা মানিই না, তার সঙ্গে কি আলাপ করবো! তাহলে তো তাদের উচিৎ ছিল সরাসরি বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যাওয়া, তাতো তারা কেউ করে নাই। এরকম কোনো আবেদনও পাওয়া গেছে, এরকমও শোনা যায় নাই। বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রত্যেক বুদ্ধিজীবীরা টিকিট করে রেখেছেন, অথচ তারা আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে বলেন- এরা বিদেশে যাবে। কিন্তু নির্বাচনের পরে তার ঠিক বিপরীত ফল হবে। নির্বাচনের পরে দেখবেন, কত লোক বিদেশে। যেমন ভিয়েতনামে হয়েছিল- যারা আমেরিকার দালালি করেছিল- তারা যেরকম আমেরিকায় গিয়েছিল, এ রকম সব দেশেই দালালির ইতিহাস একই। বাংলাদেশেও তাই হবে। উদাহরণ হিসেবে বলতে চাই, এখানে প্রাসঙ্গিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে, যেহেতু অনেকেই এই ব্যাপারে আগ্রহী। সে কারণে আমিও এই ব্যাপারে আগ্রহী।

বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং আমার যতটুক বিবেক-বুদ্ধি রয়েছে, তা দিয়ে ভাবছি যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমেরিকায় গেলেন, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের সাথে আলাপ-আলোচনা করলেন। সেখানে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসবে কি না? একজন অপদার্থ লোকও বোঝে- অবশ্যই সেখানে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসবে, আলাপ-আলোচনা হবে। কিন্তু আমার সাধারণ জ্ঞান বলে, এটা পাবলিক ইস্যু হিসেবে, জনগণের ইস্যু হিসেবে সেইভাবে কোনো একটা সংবাদপত্রে ছাপা হবে বা বাইরে কোথাও এ বিষয়টি প্রকাশ পাবে- এটা আমার মনে হয় না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কি জন্য এই এ বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে? আমি এতো নিশ্চিতভাবে কি জন্য বলছি? কারণ হচ্ছে, ভারত তার প্রতিবেশি পরিবর্তন করতে পারবে না। এখানে তার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশি হচ্ছে বাংলাদেশ। একমাত্র বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্কই রক্তের অক্ষরে লেখা। মনে রাখতে হবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়, আমরা বাঙালিরা- যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি, ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন, চার লাখ মা-বোন ইজ্জত দিয়েছেন। এখানে কিন্তু ভারতীয়দেরও রক্ত আছে।

সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু- যার নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করলাম, একটি স্বাধীন দেশ পেলাম- তারও রক্ত এই মাটিতে। মিত্র বাহিনীর রক্ত, জাতির পিতার রক্ত, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের রক্ত, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের রক্ত- এই সকল রক্তের উপর দাঁড়িয়ে এবার দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা নির্বাচন করছেন। সুতরাং মনে রাখবেন, যিনি এই পবিত্র রক্তের উপর দাঁড়িয়ে নির্বাচন করছেন, তার কাছে আপনি দেশ চাইলেন, দেশ দিয়ে তিনি নির্বাচনে ক্ষমতায় আসবেন! তিনি বলে দিয়েছেন-তো, কোনো কিছু দিয়েই কিছু হবে না। সুতরাং নির্বাচন হবে। এখন ভারত তাদের দায়িত্ব হিসেবে, যেহেতু তাদের এই পূর্বাঞ্চল- শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য দৈনিক যত কোটি টাকা তাদের খরচ হয় এবং অন্য দল ক্ষমতায় আসলে তাদের যে খরচ হয়, সেই খরচটা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তাদের হয় না।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের বায়োডাটা যদি আপনারা দেখেন, তাহলে দেখবেন তার শিক্ষা, যোগ্যতা, বিদ্যা-বুদ্ধি কোন পর্যায়ের- তা আপনাদের বুঝতে হবে। এরা কিন্তু হঠাৎ করে আকাশ থেকে নাজিল হয় নাই । তারা সবকিছু বুঝেই এক একটা বক্তব্য দেন। যেহেতু তাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত রক্তের বাঁধনে যাদের সাথে বাঁধা- সেই বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ থাকবেই। তারা পাবলিকলি বলুক আর না বলুক- এটা স্বভাবিক প্রক্রিয়া। যে পাগল সে-ও তো খাইতে চায়, না খেয়ে থাকতে চায় না। যখন ভারত বলবে, আমাদের বাংলাদেশের সাথে যেহেতু বন্ধুত্ব স্থায়ী ব্যাপার, আমরা আমাদের প্রতিবেশি পরিবর্তন করতে পারবো না। এই কারণেই আমাদেরকে দেখতে হবে- যাতে অসাম্প্রদায়িক একটি সরকার ক্ষমতায় না আসে এবং এমন কোনো সরকার যেন না আসে- যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে এবং বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার হবে ভারতের বিরুদ্ধে। এই সমস্ত বিষয়গুলো যেন না হয়, তা আওয়ামী লীগ সরকার তা ১০০ ভাগ নিশ্চিত করেছে। এখানে তা ৯৯ ভাগেরও চান্স নিবে না ভারত। কারণ তাদের অতীত অভিজ্ঞতা আছে। 

ভারত অত্যন্ত পরিষ্কাভাবে জো বাইডেনকে বুঝিয়ে দিবে, আমেরিকা যদি চায়- বাংলাদেশতো প্রথম হচ্ছে, ব্রিকস-এ জয়েন করলো, একটি ম্যাসেজ দিয়ে দিলো যে, শুধু ডলারের অধীনে তারা থাকতে চায় না। জো বাইডেনকে এটা অবশ্যই বলবেন নরেন্দ্র মোদি- পরবর্তীতে আপনারা যদি চান, তারা চায়না ব্লকে যাক এবং সেন্ট মার্টিনে দুই বছর বা এক বছরের জন্য নৌঘাঁটি করার অনুমতি দিক- যেখানে শুধু যুদ্ধ নৌ জাহাজ থাকবে। তাহলে ভূ-রাজনীতির যে অবস্থা হবে, তাতে আমেরকিার কিছু আসে যায় না, কিন্তু ভারতের-তো সেই দিন থেকেই খবর হয়ে যাবে। সুতরাং ভারত-তো তার স্বার্থের বাইরে যাবে না। সতরাং ভারতের স্বার্থ যদি আমেরিকা রক্ষা করতে না পারে, প্রয়োজনে আমেরিকার সাথেই ভারতের সম্পর্কের অবনতি হবে। আমেরিকার বর্তমান বিশ্বে যে অবস্থান, তাতে ভারতকে বাদ দিয়ে আমেরিকার টিকে থাকাই সম্ভব না- অন্য কথা বাদ দিলাম। 

এটা ঠিক যে, ভারতের সাথে চায়নার সীমান্ত নিয়ে সমস্যা আছে। ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, তাদের কখন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে- সেটা তারা ঠিকই জানে। তারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবে- তার জন্য তাদের আমেরিকার সাহায্য লাগবে না। কিন্ত আমেরিকার ভারতের সাহায্য ছাড়া টিকে থাকা সম্ভব হবে না। কারণ তারা বিশ্বে কোনো জায়গায় নেই। মধ্যপ্রাচ্যে চায়না চলে গেছে, আফ্রিকায় চায়না চলে যাচ্ছে। এখন তাদের নিজের গরজে- ভারতকে যার জন্য এতো সম্মান দিচ্ছে। আমি অবাক হবো না যে, এই নির্বাচনের পরেই আবার শেখ হাসিনাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমেরিকার একই সম্মান দিতে হয়। তারা যে ধরনের ভয় দেখায়, আর্মিদের জাতিসংঘ মিশন বাদ হয়ে যাবে- এগুলো সম্পূর্ণ বাখোয়াজ, মিথ্যা কথা।  

মৌীলকভাবে যদি বলি, আমেরিকা যেমন বিশ্বাস করে- অবশ্যই মানবাধিকার থাকবে। মানবাধিকারে বাংলাদেশের সাথে সমকক্ষ কয়টি দেশ আছে? আমেরিকার তো ভুলে গেলে হবে না যে, নরেন্দ্র মোদির পাসপোর্টর উপরে কি সিল দেওয়া ছিল? আর এখন তাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হচ্ছে। এই হচ্ছে আমেরিকা- এদের চরিত্র বদলাতে সময় লাগে না। মোটামুটিভাবে ওরা কার সাথে বিছানায় যেতে হবে-সেটাও তারা অনেক সময় বুঝতে পারে না। এখন ইতিমধ্যেই বিএনপি পেছনে পড়ে গেছে। যারা সুবিধাবাদি লোক, যাদেরকে আমি বলবো- ধান্ধাবাজ। আমরা ভদ্রভাবে তাদের বলি ধূর্ত- এদের পাল্লায় পড়ে বিএনপি সেখান থেকে বের হতে পারছে না। পরিশেষে কিন্তু নির্বাচন হবে, জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের বা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির নির্বাচন হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭