ইনসাইড গ্রাউন্ড

বর্ডারের এপার থেকে ওপারের দ্বৈরথ কেন ক্রিকেটে?


প্রকাশ: 26/06/2023


Thumbnail

    “লাহোরে তুষারপাত হতে পারে, কিন্তু ভারত-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সিরিজ নয়।”

কথাটি বলেছিলেন ভারতের সাবেক কিংবদন্তি ওপেনার এবং টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম দশ হাজার রানের মালিক সুনীল গাভাস্কার। গাভাস্কারের মন্তব্যটিই প্রমাণ করে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ মাঠে গড়ানোর প্রতিবন্ধকতা।

ক্রিকেট প্রসঙ্গ উঠলেই অবধারিত চলে আসে ভারত-পাকিস্তানের নাম। বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা এ দু’টি দেশের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্রিকেটীয় অনুপম সৌন্দর্য্য দেখতে পাই। দেশ দু’টির প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিশ্ব ক্রিকেটকে করেছে সমৃদ্ধ, এবং দর্শকমনেও জাগিয়ে তুলেছে ক্রিকেটের প্রতি ব্যাখ্যাতীত রোমাঞ্চ।

এই দুই দেশের দ্বন্দ্বের মাশুল গুনতে হচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বকে। এশিয়া কাপের অনিশ্চয়তার পাশাপাশি বিশ্বকাপ নিয়েও রয়েছে জটিলতা। এখনও মেগা ইভেন্টের ভেন্যু ও সূচি ঘোষণা করতে পারেনি আইসিসি। তবে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণে ক্রিকেটারদের ভারত সফরের বিষয়ে পাকিস্তানের সোজা কথা, পাকিস্তান ভারতে গেলে ভারতকেও এশিয়া কাপ খেলতে ভারতকেও আসতে হবে পাকিস্তানি ভূমিতে।


গত অক্টোবরে এসিসির সভাপতি ও বিসিসিআইর সেক্রেটারি জয় শাহ বলেছিলেন, এশিয়া কাপ নিরপেক্ষ ভেন্যুতেই হবে কারণ ভারত পাকিস্তানে ভ্রমণ করবে না। এরপর তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে। ভারত এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে না গেলে, পাকিস্তানও বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে না, এমন কড়া মন্তব্য আসে পিসিবির পক্ষ থেকে।  পিসিবির নতুন প্রধান নাজাম শেঠিও তাদের এই অবস্থান বাহরাইনের সভায় তুলে ধরেছেন।

নাজাম শেঠির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) প্রস্তাবিত ‘হাইব্রিড মডেল’টি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) অনুমোদন পায়। হাইব্রিড মডেলে পাকিস্তান দ্বিতীয় ভেন্যু হিসেবে প্রস্তাব করেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। তবে সেখানের আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করে এসিসি দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বেছে নেয় শ্রীলঙ্কাকে। পাকিস্তান মূল আয়োজক হলেও অবশ্য ম্যাচ বেশি পাচ্ছে শ্রীলঙ্কাই। মোট ম্যাচ ১৩টি, শ্রীলঙ্কায় হবে ৯টি ম্যাচ। বাকি ৪টি ম্যাচ পাকিস্তানে হবে। পাকিস্তানে হওয়া সব কটি ম্যাচই হতে পারে লাহোরে।

আবার নাজাম শেঠীর পদত্যাগের পর  সংবাদমাধ্যমে কথা বলার সময়ে নতুন পিসিবি কর্তা জাকা আশরাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এই হাইব্রিড মডেলের বিপক্ষে, ‘আমি হাইব্রিড মডেলের পক্ষে না। টুর্নামেন্টের পুরোটাই পাকিস্তানে হওয়া উচিত। কারণ, এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল সেই স্বত্ব পাকিস্তানকে দিয়েছে। কিন্তু বড় ম্যাচগুলোতে এই মডেল অনুযায়ী অন্য জায়গায় হবে, শুধু নেপালের মতো ছোট দলগুলো এখানে খেলবে। পাকিস্তানের সঙ্গে ন্যায়বিচার হয়নি।

ক্রীড়া ও ভূ-রাজনীতি বিষয়ক এই  প্যারিসের এসকেএমইএ বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক সাইমন চ্যাডউইকের এশিয়ান এক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই বিষয়টা স্রেফ দু’টি দেশ আর একটি টুর্নামেন্টের নয়, বরং কারা ক্রিকেট খেলে, কোথায় খেলে এবং কারা এই খেলাটার উপর ছড়ি ঘোরায় সবকিছুর সাথেই সম্পর্কিত। বৈশ্বিক কোন ক্রীড়া আয়োজন থেকে একটি দেশের রাজনৈতিক হর্তাকর্তাদের বাদ রেখে কার্যসিদ্ধি করা সম্ভব নয়। পাকিস্তান-ভারত বৈরিতা স্রেফ একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে নয়। সেখানে আরও বহু বিষয় জড়িয়ে আছে।

এই কাঁদা ছোড়াছুড়ি বিষয়টি চলমান রয়েছে বিগত বেশকিছুদিন ধরে। তবে বাস্তব চিত্র বেশ ভিন্ন। পাকিস্তান হাজারটা হুঙ্কার দিলেও শেষ অবধি তাদের কাছে বিশ্বকাপ না খেলবার কোন পথ খোলা নেই। পাকিস্তান চাইলেই আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপ বয়কট করতে পারবে না। পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তাদেরকে সে সুযোগটুকু দিতে চাইবে না। তাছাড়া বিশৃঙ্খল পাকিস্তানকে একত্রিত করতে পারবে ক্রিকেট সেটাও অবিশ্বাস করাবর মত নয়।


২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা দলের বাসে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যায়। লম্বা সময় পর ধীরে ধীরে দেশটিতে নিরাপত্তা সংকট পার করে ফিরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মত দলগুলোও সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান সফর করেছে। এই অবস্থায় নিজেদের হোস্টিং ইভেন্ট নিরপেক্ষ ভেন্যুতে সরিয়ে নিতে কোনভাবেই চায় না পাকিস্তান।

২০১২-১৩ মৌসুমের পর থেকেই আর দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলে না ভারত-পাকিস্তান। কেবল এসিসি বা আইসিসির ইভেন্টেই মুখোমুখি হয় দুদল।


এদিকে ভারত-পাকিস্তানের মুখোমুখি অবস্থানে নিজেদের কোন পক্ষেই নিয়ে যায়নি বাকি সদস্য দেশগুলো। পাকিস্তান সফরের ব্যাপারে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার মতন দলগুলো নিজ নিজ সরকারের সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করবে।

ভারত-পাকিস্তান সর্বশেষ টেস্ট খেলে ২০০৭-০৮ সালে। ২০০৭ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজ স্বাগতিক ভারত জিতে নেয় ১-০ ব্যবধানে। সেবারই টেস্টে তাদের সর্বশেষ মুখোমুখি হওয়া। সর্বমোট ৫৯ দেখায় ১২ ম্যাচ জেতে পাকিস্তান, ভারত ৯ ম্যাচ, বাকি ৩৮ ম্যাচ ড্র।

তবে এই দুই দেশের ম্যাচের তীব্র উত্তেজনা দু’দেশ ছাপিয়ে এক সময় ছড়িয়ে পড়ে পুরো উপমহাদেশজুড়ে। এ যেন ক্রিকেট ম্যাচের চেয়েও বেশি কিছু। কিন্তু গত এক দশক ধরে দেশ দু’টিতে বিবাদমান রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলস্বরূপ মুখোমুখি ম্যাচসংখ্যা কমে যাওয়ায় সে উন্মাদনায় ভাটা পড়েছে অনেকখানিই।

ভারত-পাকিস্তানের অনড় অবস্থানে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। আগামী মার্চে আরেকটি সভায় বসবেন এসিসির সদস্যরা। সেখানেই ২০২৩ এশিয়া কাপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এশিয়া কাপের উপর নির্ভর করছে ২০২৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও। সেই টুর্নামেন্টও আয়োজিত হওয়ার কথা পাকিস্তানে।

শেষ অবধি জল কতদূর গড়ায় সেটা হয়ত সময়ই বলে দেবে। তবে পাকিস্তানের কাছে পথ খোলা নেই। পাকিস্তান চাইলেই আগ্রাসী কোন পদক্ষেপ এই মুহূর্তে করতে পারছে না। তবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড তথা সরকারকেও একটু নমনীয়তা দেখানো উচিত বলে মত বহু ক্রিকেট বোদ্ধাদের।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭