ইনসাইড পলিটিক্স

কৃতকর্মের অস্বীকার, গয়েশ্বরের মিথ্যাচার!


প্রকাশ: 26/06/2023


Thumbnail

দীর্ঘ দিন ধরে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করলেও সম্প্রতি বিএনপির একটি সমাবেশে ছিল ভিন্ন ধারা। এদিন বিএনপি যেন জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিল। ঢাকাস্থ ফেনী জেলা জাতীয়তাবাদী ফোরাম আয়োজিত এই সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলমসহ দলটির সব কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি করা হয়। গত ২৫শে জুন (রোববার) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশে ‘বিএনপির পক্ষ থেকে পুলিশের তালিকা করা হচ্ছে’- এমন খবরকে গুজব বলে মন্তব্য করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ওই প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক  আবদুস সালাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

কিন্তু গয়েশ্বয়ের এমন বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলে অভিহিত করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিএনপির এই নেতা কৃতকর্ম করে তা অস্বীকার করছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নতুন ভিসা নীতিকে কেন্দ্র করে নতুন ষড়যন্ত্রের কূটচালে মেতে উঠেছে বিএনপি। বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেশের জেলা-উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মীদের খুন-গুম এবং তাদের বিরুদ্ধে গায়েবি ও মিথ্যা মামলা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রেরণ করতে বলা হয়েছে। এই চিঠিতে মামলা ও ঘটনা সংশ্লিষ্ট ওই অঞ্চলের ওই সময়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের তথ্যাদিও চাওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমেই বিএনপি পুলিশের তালিকা তৈরি করছে।    

গত ২৫শে জুন, রোববারের সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকার নানাভাবে বিএনপির আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। তারা নানা মিডিয়ার মাধ্যমে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের এ ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। পুলিশ ও প্রশাসনের লোকদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সরকার নানা সময় নানা গুজব ছড়াচ্ছে। যেমন— একটা গুজব ছড়িয়েছে, তাঁরা (বিএনপি) নাকি পুলিশের তালিকা করছে! পুলিশের তালিকা বিএনপিকে করতে হবে কেন? আওয়ামী লীগ সরকার চলে গেলে, পুলিশের লোকজনই বলবে, কে অপকর্ম করেছে। পুলিশের তালিকা করার গুজবটি এ কারণে ছড়ানো হচ্ছে, যাতে সব পুলিশ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রাখার চেষ্টা করে।

এদিকে গত ৩ জুন (শনিবার) বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, খুন, গুমের সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ সংক্রান্ত একটি চিঠি আসে বাংলা ইনসাইডার প্রতিবেদকের হাতে। উল্লেখিত চিঠির বিষয়ে বাংলা ইনসাইডার প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় তথ্যাদি প্রদানের জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর মনোনীত ব্যক্তি জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সাবেক পুলিশ কতর্মকর্তা সালাউদ্দীন খানের সঙ্গে। ‘এসব তথ্য দিয়ে আসলে কি করা হবে?’-এমন প্রশ্নে তিনি বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, ‘এসব কার্যক্রম চলছে, এটা অনেক গোপন বিষয়। যারা নির্যাতিত হয়েছে, নির্যাতিত ব্যক্তিদের যারা নির্যাতন করেছে, মিথ্যা মামলাগুলো দায়ের করেছে- তাদের একটি তালিকা হচ্ছে। এটির কাজ সারা বাংলাদেশব্যাপী চলছে।’

সাবেক পুলিশ কতর্মকর্তা সালাউদ্দীন খান বলেন, ‘ধরেন অনেক জায়গায় কোনো ঘটনাই হয়নি, মামলা হয়েছে, মামলার বাদী হয়েছেন দাড়োগা সাহেব, এসপি সাহেব নির্দেশ দিয়েছেন, তারপর ওসি মিথ্যা মামলা করেছেন- এমন সমস্ত তথ্যগুলোই আমরা সংগ্রহ করছি এবং তাদের তালিকা করছি। এসব বিষয়কেই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। এটা উপর পর্যায়ে যাবে।’

‘উপর পর্যায়ে যাবে বলতে- কোথায় যাবে?’- এমন প্রশ্নে বিএনপি নেতা সালাউদ্দীন খান বলেন, ‘দেশের বাইরেও যাবে।’

‘আমেরিকান নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পরই কি আপনারা এটা করছেন? এটা কি নতুন ভিসা নীতির মধ্যে পড়ে কি না?’- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ভিসা নীতি পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন। এইটা ভিসা নীতিতে পড়ে কি না। তারা জনসমাবেশে বাধা দিল, মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করলো- এগুলোতো ভিসা নীতিতে বলাই আছে। চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমাদের জনসমাবেশে বাধা সৃষ্টি করেছে, পূর্বেও করেছে এবং এখনও করছে -এরকম।’                         

‘কবে থেকে এটা শুরু হয়েছে?’- প্রশ্নে তিনি জানান, এটার  কার্যক্রম আনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। চিঠি দেওয়া হয়েছে অনেক পরে। এ কার্যক্রম ২০১৭ সাল থেকে শরু হয়েছে। এর আগে এটা সামনে আসেনি, কারণ হচ্ছে- এখন আমরা সারা বাংলাদেশে অফিসিয়ালি চিঠি দিয়েছি। আগে বিষয়টি গোপন ছিল, এখন সেটা প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিএনপির এই নেতার স্বীকারোক্তি এবং দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্যকে সাংঘর্ষিক বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুলিশের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহল এ বিষয়ে অবগত রয়েছেন। এছাড়াও সচেতন জনগণও বিষয়টি নিয়ে বেশ আলাপ-আলোচনা করেছে। বিএনপির একজন বয়জেষ্ঠ্য নেতার পক্ষে কৃতকর্মের অস্বীকার করাটা নিতান্তই মিথ্যাচার। এ ধরনের মিথ্যাচার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করে বিএনপি রাজনীতিকে কলুষিত করছেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭