ইনসাইড পলিটিক্স

বেগম জিয়া-ফখরুল বৈঠক: শুধুই সাক্ষাৎ নাকি নির্বাচনী সিদ্ধান্ত?


প্রকাশ: 26/06/2023


Thumbnail

গতকাল রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবনে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যদিও বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেছেন, বিএনপি মহাসচিব এই সাক্ষাতে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নিয়েছেন। কিন্তু এই সাক্ষাৎকে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থা-অবস্থান, সরকারের সাথে সমঝোতা এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আলোচনা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ঈদুল ফিতরের আগে রোজার সময় বেগম জিয়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফিরোজায় ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে ১ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তার সাথে আলাপ-আলোচনা করেছেন। এরপর তিনি ঈদের দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরকে ডাকেন এবং সেখানে তাদের সাথে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন। এ বৈঠকে তিনি বিএনপি’র নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করেন এবং গণতন্ত্র রক্ষার কথাও বলেন। যদিও দুটি বৈঠকের পরই সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমের কাছে কিছু বলেননি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে এড়িয়ে ফিরোজা থেকে বের হন। অন্যদিকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কি কথা হয়েছে- সে বিষয়টি এড়িয়ে যান। এর ফলে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং বিতর্ক তৈরি হয়।

তবে বিএনপি দেশের রাজনৈতিক অবস্থা এবং অবস্থান বিবেচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজধানীর গুলশানের বাসায় চিকিৎসারত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিএনপি মহাসচিব এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন। কেননা সরকারের সাথে বিএনপির সমঝোতার বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে বিএনপির নির্বাচন বর্জন ঘোষনাকে কেন্দ্র করে এই দর কষাকষিতে সমঝোতার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল সরকার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নতুন ভিসা নীতির কারণে সরকারের উপর পশ্চিমা বিশ্বের একটি চাপ রয়েছে। যার ফলে নতুন করে সরকারের কোনো সমঝোতার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে কি না- সেটিও একটি বড় বিষয়। বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে মূলত এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা করেছেন বেগম জিয়া।

জানা গেছে, চার দিন ধরে শারীরিক নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা শেষে ১৭ জুন হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় ফেরেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে গিয়েছিলেন। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাঁকে নির্বাহী আদেশে ‘সাময়িক মুক্তি’ দেয় সরকার। এর পর থেকে তাঁর দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে এবং গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় থেকেই তিনি চিকিৎসারত রয়েছেন। সেখানে থেকে তিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথেও যোগাযোগ রেখেই চলেছেন। সম্প্রতি বেগম খালেদা জিয়া যে কোনো সময় গুলশানে তার দলীয় কার্যালয়ে যাবেন- এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল বিএনপিতে এবং তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। গুলশান কার্যালয়ে ধোয়া-মোছার কাজও চলেছে। বেগম খালেদা জিয়া যে কক্ষটিতে বসতেন সেই তালাবদ্ধ কক্ষটিও খোলা হয়েছিল। সাফসুতরো চলছিল ওই ঘরটিতেও এবং বেগম খালেদা জিয়া যেন সেখানে বসতে পারেন- সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ২০০৭ সালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক-এগারো’র মতো একটি কালো অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দলের প্রধান দুই নেত্রীকে সরিয়ে দিয়ে বিরাজনীতিকরণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’। একটি অগণতান্ত্রিক সরকার জগদ্দল পাথরের মতো বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থায় চেপে বসেছিল। এমন একটি পরিস্থিতি বাংলাদেশে পুনরায় আসুক- সেটিও চান না বেগম জিয়া। পশ্চিমা বিশ্বের চাপে সরকারকে যদি নমনীয় করা যায়, তবেই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে বিএনপি- এমন বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব এবং দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এছাড়া, মার্কিন নতুন ভিসা নীতির ফলে সরকার ও রাষ্ট্র কাঠামোতে ঠিক কতখানি প্রভাব পড়েছে এবং বিএনপির রাজপথের আন্দোলনে সরকার কোনো প্রকার বাধা প্রদান করছে কি না- সেসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে আলোচনা এখানে শেষ নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এরকম পরিস্থতিতে আন্দোলনের পথে না গিয়ে দল গুছিয়ে নির্বাচন অভিমুখী হওয়া এবং নির্বাচনে ভালো ফলাফল করার চেষ্টা করাটাই বেগম জিয়ার রাজনৈতিক কৌশল। 

তবে সরকারের সাথে বেগম খালেদা জিয়ার দর কষাকষি একটি সমঝোতার পর্যায়ে এলেই নির্বাচনে অংশ নিবে বিএনপি- এমনটিই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যে তিনি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দিবেন এবং অন্যদিকে সরকার খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবার অনুমতি প্রদান করবে- এই দর কষাকষি অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এখন দেখার বিষয় পশ্চিমা চাপ এবং বেগম জিয়ার দর কষাকষি কতটুকু মেনে নেয় সরকার।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭