প্রকাশ: 27/06/2023
সিকান্দার-এ-আজম, মধ্য যুগীয় রাজা আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট উর্দুতে এবং হিন্দিতে এই নামে সকলের কাছে পরিচিত। ৩৫৬ খ্রিষ্টপূর্বে জন্ম নেন এই বিখ্যাত সিকান্দার যিনি লিখিত ইতিহাসের শ্রেষ্টতম যোদ্ধা আর যিনি প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যর মধ্যে তৈরি করেছিলেন সেতুবন্ধন। যুদ্ধক্ষেত্রে আলেকজান্ডার চিরকাল সামনে থেকে লড়াই করেছেন।প্রতিটি দুর্গ আক্রমনে বা দুর্গের দেয়াল ভাঙ্গার সময় সরাসরি নিজের সৈনিকদের সাথে তিনি অংশ নিতেন। ঠিক তেমনি মনে হয় জিম্বাবুয়ের সেরা অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজা। রাজার মতই দলের প্রয়োজনে লড়ে গেছেন, জয় করেছেন শক্ত দুর্গের দেয়ালর মত বড় বড় দল।
ইতিহাসে যেমন স্বনার্ক্ষরে লেখা আছে সিকান্দার-এ-আজম এর নাম এবং বিরত্বগাথা, তেমনি জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট ইতিহাসে এই অলরাউন্ডারের নাম থাকবে পাতায় পাতায়।
পাকিস্তানের শিয়ালকোটে জন্ম নেয়া এ জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটার নিশ্চয়ই বিরাট কোহলি,
রোহিত শর্মা,
বাবর আজম কিংবা ডেভিড ওয়ার্নার থেকে উচ্চ পর্যায়ে নন কিন্ত অলরাউন্ড ক্ষেত্রে তিনি কম পিছিয়ে এই। সাকিব-আল-হাসান, রবিন্দ্র জাদেজার পরেই চলে আসে তার নাম।
পাকিস্তানে জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটারের জন্য ক্রিকেটে আসার পথটা সহজ ছিল না। দুর্দান্ত কোনও প্রতিভা ছিলেন না তিনি। ক্রিকেট খেলাটাকে আয়ের উৎস হিসেবেই দেখেছেন সবসময়।
সিকান্দার রাজা ২০২২শে বাংলাদেশের সাথে ম্যাচে জয় তুলে নেয়ার পর নিজের অতীতে ফিরে গিয়েছিলেন।
"আমি বিমান বাহিনীতে ছিলাম। আমরা কখনো হার মানি না। আমি ব্যথা পাই,
আমার আঙ্গুল ভাঙ্গে কিন্তু এসবে আমার কোনও কিছু যায় আসে না"।
সাড়ে তিন বছর পাকিস্তানের এয়ার ফোর্স কলেজে পড়ার স্মৃতিতে ফিরে যান তিনি, "আমি হয়তো যোদ্ধা পাইলট হতে পারিনি শেষ পর্যন্ত। কিন্তু আমি মানুষ হিসেবে একজন যোদ্ধা”।
তার এই যোদ্ধা হয়ে উঠার বিরত্ব থেকেই আলেক জান্ডার দ্যা গ্রেটের নাম আনা। তার জীবন যেন হলিউড সিনেমার কোনো নায়কের চরিত্র। শৈশবে স্বপ্ন দেখতেন যুদ্ধ বিমানের পাইলট হবেন। সেই লক্ষ্যে পাকিস্তান এয়ার ফোর্স (পিএএফ) কলেজে পড়াশোনাও করেছিলেন। যদিও চোখের সমস্যার কারণে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে পারেননি। সেই কষ্ট ভুলতে চেয়েছিলেন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে। সেটাও পূরণ হয়নি। জীবনের স্রোত তাকে বানিয়েছে বাইশ গজের সৈনিক। যেখানে ব্যাট-বল হাতে যুদ্ধ করছেন জিম্বাবুইয়ের হয়ে। ক্রিকেটে আফ্রিকান দেশটির সোনালি সেই সময় আর নেই।
কিন্তু রাজকীয় নৈপুণ্যে রাজা বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি ফিরে এসেছেন এ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, এ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ক্লোন হয়ে। ধুঁকতে থাকা দলটির হয়ে এক হাতেই বদলে দিচ্ছেন দৃশ্যপট। একের পর এক দূর্ভেধ্য শক্তিশালী দলকে নাকাই চুবানি খাইয়েছেন কখনো তার স্পিনঘূর্নিতে আবার কখনো তার ব্যাটের গতি এবং ফ্রি-স্ট্রোক প্লে তে।
২০১৯ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে অতি মানবীয় ইনিংস খেলেও দলকে তুলতে পারেনি আসরে। ক্রিকেটের ওপর টান উঠে গিয়েছিলো তার। জিম্বাবুয়ের হয়ে ২০১৩ সালে অভিষেক হওয়া সিকান্দার তখন বোর্ডকে জানিয়ে দিলেন,
তিনি আর খেলবেন না। ফলে কেন্দ্রীয় চুক্তি হারালেন সিকান্দার। সেই সাথে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে স্কোয়াডে রইলেন না তিনি। সিকান্দার এই সবকিছু ছেড়েছুড়ে চলে গেলেন ইংল্যান্ডে।
তবে আবার ফিরলেন, অনেক চেষ্টাড় পরে ২০২২ সালে ফুল ফর্মে বীরদর্পে টানা ১৯ জয়ে উড়তে থাকা বাংলাদেশকে মাটিতে নামিয়ে এনেছেন ৩৬ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৩০৩ রান টপকে জিম্বাবুইয়ের জয় এনে দিয়েছেন ৫ উইকেটে। অপরাজিত ১৩৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে নায়ক সেই অকুতোভয় যোদ্ধা।
আবার যেমন ২০২৩ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের কথা। তার অলরাউন্ড নৈপূন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনেকটা ছিটকে গেছে এই বছরের বিশ্বকাপের আসর থেকে। ব্যাট হাতে ৬৮ রান এবং ২ উইকেট সহজ জয় এনে দেয় আফ্রিকান সিংহদের। সকলেরই আশা এই বিশ্বকাপে হয়ত ফিরে আসবে সেই দুই দশক আগের জিম্বাবুয়ে।
সিকান্দার আশাবাদী হতে চান। নিজের জীবনে যেমন আবার আশাটা খুঁজে পেয়েছেন,
তেমনই জিম্বাবুয়েকেও আবার স্বরূপে দেখতে চান,
‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা আবার দ্রুত সেই উন্নয়নের মইটা বেয়ে উঠতে পারবো। আমরা স্রেফ বাছাইপর্ব পার হতে পারিনি বলে লোকেরা দুই বছরের পরিশ্রমটাকে ওভাবে বিচার করছে। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের এখন যে অবস্থা, দেশের লোকেদের এর চেয়ে ভালো ফলাফল প্রাপ্য।’
চলতি ওয়ার্ল্ডকাপ বাছাইপর্বে বড় আশা দেখাচ্ছে আফ্রিকান দল জিম্বাবুয়ে। হয়ত সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালে দেখা যেতে পারে লাল রাঙ্গা জার্সি। হাসি পাচ্ছে? সিকান্দাররা অবিশ্বাস্য রক্তাক্ত আরববেলার যুদ্ধ জয় করতে জানে আবার বিশ্বকাপ সে তো স্রেফ ব্যাট বলের লড়াই।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭