প্রায় ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তার জন্য সরকার এ বছরই ব্যয় করছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া আগামী জুলাই থেকে তাদের জন্য মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধির প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে জাতীয় সংসদে। সরকারি কর্মচারীদের এই প্রণোদনার জন্য ব্যয় হবে বিপুল পরিমাণ টাকা। যখন দেশে অর্থনৈতিক সংকট, যখন সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃচ্ছতার কথা বলছে, তখন এই প্রণোদনার যৌক্তিকতা নিয়ে উঠেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, নির্বাচনের আগে সরকারি কর্মচারীদের তুষ্ট করার জন্য সরকার এই বিপুল পরিমাণ ব্যয়ভার বহন করতে যাচ্ছে।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য মূল বেতনের ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বৃদ্ধি ১লা জুলাই থেকে কার্যকর হবে। তবে এই বছরের জুলাই মাসে, অর্থাৎ জুন মাসের জন্য তারা যে বেতন পাবে সেই বেতনে ২০১৫ সালের ঘোষিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা তাদের জন্য যুক্ত হবে।
বাংলাদেশের মোট সরকারী কর্মচারীদের সংখ্যা ১৩ লক্ষ ৯৬ হাজার ৬১৮ জন। আর এর ফলে শুধুমাত্র প্রণোদনায় ব্যয় হবে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। অন্যদিকে বেতন বৃদ্ধির ফলে যে ব্যয় হবে তার পরিমাণ আরও বেশি। মাত্র ১৪ লাখ সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য এই বিপুল পরিমাণ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে এর ফলে বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম আরও বেড়ে যাবে বলে কোন কোন অর্থনীতিবিদ মনে করছে। কারো কারো মতে, এর ফলে বেসরকারি চাকরিজীবীরা আরও চাপে পড়বে। মাত্র ১৪ লাখ মানুষের জন্য এই বিপুল পরিমাণ প্রণোদনার ফলে সামগ্রিকভাবে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি করছেন তারা একটি বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়তে পারেন বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রোববার ২০২৩-২৪ অর্থবছের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে।
আগামী ৬ মাসের মধ্যেই দেশে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, চলতি বছরের ডিসেম্বরে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। নির্বাচনের আগে এটি সরকারের সরকারি কর্মচারীদের তুষ্ট করার নীতি কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে যোগাযোগ করে জানা গেছে তারা এই প্রণোদনা দেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এখন এটির সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হবে অর্থমন্ত্রীর কাছে। এরপর তা অনুমোদনের জন্য যাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। জুলাইয়ের প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যেই সব কাজ শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার সব কর্মচারীর ক্ষেত্রেই বেতন বৃদ্ধি প্রযোজ্য হবে বলেও জানা গেছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত যে ৫ শতাংশ মূল বেতন বাড়ে তার অনুপাতে বাড়ি ভাড়া ভাতাও বৃদ্ধি পায়। তবে প্রণোদনা বাবদ যে ৫ শতাংশ দেয়া হবে তা মূল বেতনে যোগ হবে না। অর্থাৎ এই অনুপাতে বাড়ি ভাড়া ভাতা বাড়বে না, শুধু থোক হিসেবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ পাবেন সরকারি কর্মচারীরা। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতির এই পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীরা যে একটু ভাল অবস্থায় থাকবেন তা মোটামুটি নিশ্চিত।
অন্যদিকে আসন্ন জুলাই থেকে সরকারি কর্মচারীরা মূল বেতনের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ পাবেন। বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের সাথে যুক্ত হবে প্রণোদনার আরও ৫ শতাংশ। তাদের মোট বেতন বাড়বে ১০ শতাংশ। এই সিদ্ধান্তের ফলে চাকরির ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি কর্মচারীদের মধ্যে একটি বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে বলেও অনেকেই মনে করছেন।