ইনসাইড বাংলাদেশ

পদত্যাগ করতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি লাগবে কেন?


প্রকাশ: 27/06/2023


Thumbnail

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচন করেন। মন্ত্রীদের নিয়োগ দেয়ার একক ক্ষমতা সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছে। আবার প্রধানমন্ত্রী চাইলে যেকোনো মন্ত্রীকে পদত্যাগ করার অনুরোধ করতে পারেন, এরকম অনুরোধ করলে সেই মন্ত্রীর পদত্যাগ করবেন। যদি তিনি পদত্যােগ অস্বীকৃতি জানান তাহলে প্রধানমন্ত্রী তাকে বরখাস্ত করতে পারেন। এর বাইরেও যেকোনো মন্ত্রী যদি মনে করেন যে, তিনি দায়িত্ব পালনে অক্ষম, অপারগ, অসুস্থ বা অন্য কোনো কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন এবং সেই পদত্যাগ প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হলো বাংলাদেশে কোন অযোগ্য ব্যর্থ ও দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি। বরং তাকে পদত্যাগ করার কথা প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হয়েছে। 

তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি। প্রধানমন্ত্রী তাকে পদত্যাগের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তারপর তিনি পদত্যাগ করেছেন। এসব আলোচনার প্রধান উদ্দেশ্য গতকাল জাতীয় সংসদে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছে। সীমিত সংখ্যক বিরোধী দলের সদস্য অধ্যুষিত জাতীয় সংসদে তোপের মুখে পড়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এই সময় তিনি সিন্ডিকেটের হোতা কিনা এরকম প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী এসব আমলে নেননি। বরং তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে তিনি পদত্যাগ করবেন। আর পদত্যাগ করে তিনি দায়িত্ব গণফোরামের নেতা মোকাব্বির খানকে দিতে চেয়েছেন। টিপু মুনশির এই বক্তব্যের পর অনেকগুলো প্রশ্ন উঠেছে। 

২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং সেই সময় টিপু মুনশিকে বাণিজ্যমন্ত্রী দেয়া হয়। দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর এই মন্ত্রী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তার নেতৃত্বে বাজারে এক নজিরবিহীন নৈরাজ্য চলেছে পুরো সময় জুড়ে। কখনো পেঁয়াজের দাম, কখনো আলুর দাম, কখনো চিনির দাম, কখনো চালে কারসাজি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বরং গতকালকে সংসদে তিনি সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। একজন মন্ত্রী যখন স্বীকার করেন যে সিন্ডিকেট রয়েছে এবং এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তারা সবকিছু বন্ধ করে দেবে তখন কি তার ওই দায়িত্বে থাকার কোনো যোগ্যতা থাকে? তিনি যখন দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না তখন তিনি সরে দাঁড়ান না কেন? পৃথিবীতে এরকম বহু নজির আছে। 

বাংলাদেশ সবসময় বলে থাকে যে তারা ওয়েস্টমিনস্টার ডেমোক্রেসি বা সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি অনুসরণ করে। সেই রীতি অনুযায়ী নির্বাচন করছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি বড় ঐতিহ্য হলো একজন মন্ত্রী যখন দায়িত্ব পালনে অক্ষম অপারগ হন, তিনি যখন মনে করেন যে তাকে দিয়ে কাজ হচ্ছে না তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতার কাছে গিয়ে বলেন যে তিনি পদত্যাগ করতে চান। বাকিটা প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপার। টিপু মুনশি কি তেমনটি কিছু করেছেন? 

একজন মন্ত্রী যখন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন, ব্যর্থতার দায়ে অভিযুক্ত হন, তার অযোগ্যতার কারণে দেশবাসী বেশি কষ্ট পায় তখন তার সরে দাঁড়ানোটা মন্ত্রিসভার জন্য, দেশের জন্য মঙ্গল। মন্ত্রীরা যখন নানারকম অপকর্মের দায়ে দুষ্ট হন, তাদের বিরুদ্ধে যখন সমালোচনা ওঠে সেই সমালোচনা কাজগুলো কি তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে করেন? একজন মন্ত্রী সংসদ সদস্য বটে। তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত। জনগণের কাছে তার একটা জবাবদিহিতা থাকা উচিত। তার নিজেরই একটি বোধশক্তি থাকা উচিত যে তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন কি পারছেন না। একজন মন্ত্রী তার চেয়ার রাখার জন্য কেন দেশকে, সরকারকে এবং প্রধানমন্ত্রীকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেন। সব ব্যাপারে কেন প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। মন্ত্রী কি নিজে জানেন না যে, তিনি আদৌ দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না? 

একজন মন্ত্রী যখন দুর্নীতি করেন, একজন মন্ত্রী যখন অন্য কাজ করেন তখন কি তা প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নেন? তাহলে পদত্যাগ করতে তার অনুমতি নিবেন কেন? যেকোন মন্ত্রী যেকোন সময় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন। বাংলাদেশ যদি সত্যি সত্যি গণতান্ত্রিক ধারাকে বিকশিত করতে চায় তাহলে অযোগ্য মন্ত্রীদের পদত্যাগের সময় এসেছে। তারা যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন তাহলে দেশ বাঁচবে, আওয়ামী লীগের ইমেজ বাড়বে। সবচেয়ে বড় কথা হলো ওই মন্ত্রী সম্মানিত হবে। জনগণ অন্তত বুঝবে যে, মন্ত্রীর এতোটুকু বোধশক্তি হয়েছে যে তিনি পারছেন না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭