ইনসাইড থট

দেশ-বাংলার মুখ


প্রকাশ: 28/06/2023


Thumbnail

দেশের একটা বহুল প্রচারিত দৈনিকের শিরোনাম, 'বসবাসে কোটিপতিদের পছন্দ দুবাই'। ভাবছিলাম, এক সময়ের সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা সোনার বাংলা ছেড়ে এরা কারা স্হায়ীভাবে বসবাসের জন্য মরুভূমির কোলে মাথা রাখে?  

এ কথা সত্যি যে, খেটে খাওয়া গরীব মানুষগুলোর নিবিড় ও অপরিসীম ত্যাগের কারণেই আমাদের দেশটা টিকে আছে। লক্ষ লক্ষ নিম্ন আয়ের সাধারণ পরিবারের সন্তানেরা ভিটেমাটি বিক্রি করে দিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া,মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছে। গত চল্লিশ বছরের অধিককাল ধরে এ শ্রেণির মানুষগুলোই তা করে এসেছে। বিদেশে গিয়ে কায়িক শ্রমের বিনিময়ে হাতে পাচ্ছে কিছু বৈদেশিক মুদ্রা। জীবন ধারণের পর অবশিষ্ট সবটুকুই পাঠিয়ে দিচ্ছে স্বদেশের স্বজনদের ঠিকানায়। পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র সবাই অপেক্ষায় থাকে তার এমন বৈধ উপার্জনে জীবিকা নির্বাহ করতে। বিদেশ বিভূঁইয়ে একটানা কয়েক বছর হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর অর্জিত অর্থ নিয়ে দেশে ফিরে এসে একটু নির্ভার নিশ্বাস নেওয়াই এদের সর্ব্বোচ্চ চাহিদা।

না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বর্তমানে তাও সম্ভব হয়ে ওঠছে না। দেশের বিমানবন্দরে এরা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। নিজের গ্রামে অশিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত গ্রাম্য টাউট শ্রেণির ক্রমাগত শালিসি অত্যাচারেও অতিষ্ঠ তারা। সামান্য ছুতায়, যেমন, বিদেশে থেকে এক টুকরো জমি কিনেছে সে, এতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু গ্রামে থাকা বড় নেতার ছত্রছায়ায় ক্রমাগত গজে উঠা ছোট ছোট দুর্বৃত্তরা জমিতে  (microlevel miscreants)  ওমুকের ওয়ারিশ সূত্রে দাবি আছে, হিস্যা পাবে এমন ঘোষণা দিয়ে প্রথমে দখল করে নিচ্ছে,পরে আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে আলোচনার নামে এমনকি ইউনিয়ন পরিষদে শালিসি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।  তখন অসহায় সেই শ্রমিকরা বিদেশ থেকে আরও বেশি শ্রম দিয়ে তা পরিশোধ করছে। দেশব্যাপী এমন দুর্বিষহ কর্মকান্ড অদৃশ্য জালের মত বিস্তার লাভ করে আছে। অন্যদিকে দেশের ভেতরে থাকা এ প্রতারতক শ্রেণির সন্তানরা ভালো মানের বা শহরের উন্নত স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করছে। এভাবে তারা গ্রাম থেকে উপজেলা, জেলা, বিভাগ এবং রাজধানী পর্যায়ে স্তরে স্তরে গড়ে উঠেছে।

আবির্ভূত হয়েছে অর্থ লিপ্সু, পরজীবি, টাউট শ্রেণি, মাদকসেবী, মাদক বহন ও পাচারকারী, দলীয় পদ পদবি বিক্রয়কারী, মধ্যসত্বভোগী অমানবিক এক অপ্রতিরােধ্য শ্রেণি। এরাই দেশে থেকে অবৈধভাবে কামাই করে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি পাচার করছে দেশের অর্থ-বিত্ত- সম্পদ। এদেরই বিদেশে বাড়ি, দামি গাড়ি, বিদেশে চিকিৎসা, সুইস ব্যাংকে টাকা আরও কত কিছু! এদের চাহিদার শেষ নেই। অন্তহীন এদের বাসনা, বিলাসিতা এদের আনন্দ। জন্মভূমি এদের ভালো লাগেনা, ভালো লাগে জন্মভূমির মাটির পরতে পরতে বিছিয়ে থাকা সম্পদ তুলে নিয়ে পরদেশে বিলিয়ে দিতে। 

বাংলার শ্রমজীবি কৃষক, কলকারখানার শ্রমিক বা এ মানুষগুলো বিদেশে অমানবিক কাজ করে মাত্র  কয়েক হাজার টাকা করে  দেশে পাঠায়। এরা কী কখনো অন্য দেশে কিছু পাঠাচ্ছেন? তাহলে এ দেশের প্রকৃত শত্রু কারা? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার অল্প কিছুকাল পরেই এমন কথা একাধিক জনসভায়  বলেছিলেন, "আমার কৃষক, আমার শ্রমিক, আমার সাধারণ মেহনতি মানুষ কোনো দিন চুরি করে না"। 

গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহবানে  দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য  যারা সর্বাগ্রে সাড়া দিয়ে রাতের আঁধারে ঘর ছেড়েছিলেন , তারা বেশির ভাগই গ্রামের খেটে খাওয়া কৃষকের সন্তান। তাদের সংখ্যা ছিল শতকরা ৬৯%। 

বাকী ৩১% ছিলেন সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। জনৈক অর্থনীতিবিদ এবং গবেষক বলেছেন, যে শ্রেণি মুক্তি যুদ্ধ করে এ দেশকে একদিন স্বাধীন করেছিলেন, আজও সে শ্রেণিই বিদেশে থেকে  মানবেতর কষ্ট করে, নিঃসঙ্গ সময় যাপন করে অর্জিত অর্থ পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে ঘুরিয়ে রেখে চলেছেন। অন্যদিকে চাকাটি একেবারে বন্ধ করে দিতে  কারা চাচ্ছে তাও এখন দিবালোকের মতন স্পষ্ট। 

ভাবুন তো, সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে ? 

ঈদ মুবারক।। 

লেখক : গল্পকার ও কলামিস্ট। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭