ইনসাইড বাংলাদেশ

নির্বাচনকালীন সরকারের আগেই মন্ত্রিসভার রদবদল?


প্রকাশ: 28/06/2023


Thumbnail

বর্তমান সরকারের মেয়াদ মাত্র ছয় মাস। কিন্তু এই ছয় মাসের মধ্যে অক্টোবর থেকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ নির্বাচনকালীন সরকার সাধারণত আকারে ছোট হবে। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে জানিয়েছেন যে, নির্বাচন হবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরের ১ থেকে ৭ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে অক্টোবর মাসের কোন এক সময় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করবেন। 

নির্বাচনকালীন সরকার বরাবরের মতোই আকার ছোট হবে এবং সেখানে কারা থাকবেন সেটি প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত করবেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, জাতীয় সংসদে যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে তাদেরকে নির্বাচনকালীন সরকারের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে বর্তমান মন্ত্রিসভার আয়ু আছে মাত্র তিন মাস। এই তিন মাস নানা কারণে সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নৈরাজ্য বন্ধ করা ইত্যাদি বিষয়গুলো জনস্বার্থে সরকারের জন্য অত্যন্ত জরুরী। সরকারকে নির্বাচনের আগে এমন একটি পরিস্থিতি করতে তৈরি করতে হবে যেন জনগণ সন্তুষ্ট থাকে এবং জনগণ সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে পারে। আর এ কারণেই জাতীয় বাজেটে শেষ পর্যন্ত দুই হাজার টাকা সর্বনিম্ন আয়কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর অন্যদিকে সরকার জনতুষ্টি অর্জন করার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য নানারকম উদ্যোগ এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, যে সমস্ত মন্ত্রীরা দায়িত্বে আছেন তাদেরকে রাখলে জনগণের মধ্যে আস্থার সংকট থেকেই যাবে। জনগণের কাছে আস্থা অর্জনের জন্য দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন দরকার। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মনে করা হয় যে, একটি মন্ত্রিসভায় যে সমস্ত মন্ত্রীরা অযোগ্য, অদক্ষ ও দুর্নীতি গ্রস্থ এবং নানা কারণে জনগণের কাছে সমালোচিত তাদেরকে পরিবর্তন করে ক্লিন ইমেজের মন্ত্রীদেরকে সামনে নিয়ে আসাই সরকারের সাফল্য অর্জন করার সহজ সমাধান। আর এই সমাধানের জন্য সরকার তিন মাসের জন্য মন্ত্রীসভা রদবদল করবে কিনা এ নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। অবশ্য টানা তিন মেয়াদে থাকা আওয়ামী লীগ সরকার এর আগেও এটি করেছে। ২০১৩ সালে নির্বাচনের সামান্য আগেই মন্ত্রিসভা রদবদল করার উদ্যোগ নেয়া হয়। সে সময় তোফায়েল আহমেদ, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তোফায়েল আহমেদ এবং রাশেদ খান মেনন তখন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিন্তু এরাই আবার যখন নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হয়েছিল তখন এই দুইজন নির্বাচনকালীন সরকারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। সেই সময় অবশ্য হাসানুল হক ইনু তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং নির্বাচনকালীন সরকারে অধীনে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। 

পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্যমন্ত্রী হিসেবে ৫ বছরের দায়িত্ব পালন করেন হাসানুল হক ইনু। অবশ্য তখনকার পরিস্থিতি সঙ্গে এখনকার পরিস্থিতি তুলনা করা যায় না। কারণ ওই সময় প্রধানমন্ত্রী বারবার মন্ত্রিসভা রদবদল করতেন। কিন্তু গত পাঁচ বছর মন্ত্রিসভা রদবদলের ক্ষেত্রে তিনি অনেকটাই অনমনীয় অবস্থায় রয়েছেন। একজন মন্ত্রী নিয়োগ যেন তার পাঁচ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মতো। তাকে খুব বড় ধরনের কারণ ছাড়া পরিবর্তন করা হচ্ছে না। এই মন্ত্রিসভার রদবদল হয়েছে হাতে গোনা দুই তিনবার। এর মধ্যে একবার অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিমকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সময় মন্ত্রিসভায় সংক্ষিপ্ত পরিবর্তন করা হয়েছিল। 

এরপর মন্ত্রিসভার আরেকটি ছোট্ট পরিবর্তন হয়েছিল। মোস্তফা জব্বার এবং জুনায়েদ আহমেদ পলকের মধ্যে দপ্তর ভাগাভাগি করা হয়েছিল। তথ্য প্রযুক্তি বিভাগে পুরোপুরি জুনায়েদ আহমেদ পলক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রেখে দেওয়া হয়। আর অন্যদিকে মোস্তফা জব্বারকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। এছাড়া ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুর পর একজন নতুন প্রতিমন্ত্রীকে হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর তথ্যপ্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের আপত্তিকর অডিও টেপ জনসম্মুখে প্রকাশিত হলে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে সরে যেতে হয়। প্রশ্ন হল, এই সময় সরকার তার ইমেজ পুনরুদ্ধার এবং জনগণ আস্থা অর্জনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের আগেই মন্ত্রিসভা রদবদল করবেন কিনা। এটা দেখার জন্য ঈদের পরে অপেক্ষা করতে হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭