ইনসাইড পলিটিক্স

এক দফা আন্দোলন নাকি নির্বাচনের ব্যাপারে নাটকীয় সিদ্ধান্ত


প্রকাশ: 30/06/2023


Thumbnail

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা করেছেন, ঈদের পরে তারা এক দফা আন্দোলনে যাবে। ইতিমধ্যে এক দফা আন্দোলনের একটি রূপরেখা নিয়েও তাদের কথাবার্তা হচ্ছে। জুলাই মাসের প্রথম দিকেই তারা এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করবে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। তবে ঈদের মধ্যেই বিএনপির অনেক নেতার মধ্যে ভিন্ন সুর শোনা গেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কথা না বললেও অনানুষ্ঠানিক ভাবে বিএনপির অনেক নেতাই বলেছেন যে, চমক আসছে। চমক দিয়েই তারা নির্বাচনের মাঠে আসতে পারে। নানা হিসেব-নিকেষ করেই বিএনপি মনে করছে এই মূহুর্তে এক দফা আন্দোলনের ঝুঁকি নেওয়ার চেয়ে নির্বাচনে যাওয়াই অনেক ভালো সিদ্ধান্ত। আর এ কারণেই বিএনপি নাটকীয় ভাবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে গেলে অবাক হবে না।

বিএনপির নেতারা মনে করছে যে, এবার যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে এবং নির্বাচন বাতিলের দাবিতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করে সেই আন্দোলনে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে বিজয়ী হওয়াটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। কারণ প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরকারের নিয়ন্ত্রেণে। সাংগঠনিকভাবে  বিএনপি এতো শক্তিশালী নয় যে তারা আন্দোলন করে সরকার ফেলে দিতে পারবে। তাছাড়া সাধারণ মানুষ এখন জীবন-জীবিকা সংগ্রামে এতো বেশি ব্যস্ত যে তারা রাজপথে নেমে বিএনপির পক্ষে আন্দোলন গড়বে এমন বাস্তবতা নেই। তাই বিএনপির মধ্যে আন্দোলন করে সরকার পতন ঘটানোর পরিকল্পনাকে অনেকে উচ্চাভিলাষী বলে মনে করছেন। 

বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করেন যে, আন্দোলন করলে আন্তর্জাতিক মহল হস্তক্ষেপ করবে। তারাও সরকারকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে বাধ্য করবে। কিন্তু বিএনপির কোনো কোনো নেতাই বলছেন যে, বিশ্ব বাস্তবতা তা বলে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বে প্রভাবশালী দেশ কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথাই এখন শেষ কথা নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্যের দিন শেষ হয়ে গেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চোখে চোখ রেখে বর্তমান সরকার কথা বলছে। কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত নানারকম বিধি নিষেধ দিলেও সরকার যে তা মানবে না তা সরকারের কথাবার্তায় স্পষ্ট। এরকম পরিস্থিতিতে বিভক্ত বিশ্বে সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চুকিয়ে হলেও নির্বাচন করার ঝুঁকি নিবে এবং একবার নির্বাচন হয়ে গেলে সরকারের সামনে একটা বড় সুযোগ তৈরি হবে। এক্ষেত্রে তারা নাইজেরিয়ার উদারহণ দিয়ে বলছেন যে, নাইজেরিয়াতে নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর এখন সব কিছু আস্তে আস্তে স্থিমিত হয়ে গেছে। কাজেই নির্বাচনে না যাওয়াটা কখনোই বর্তমান বাস্তবতায় বুদ্ধিমানের কাজ নয় বলে বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন। তারা মনে করেন বর্তমানে যে বাস্তবতাগুলো রয়েছে তাতে নির্বাচনে যাওয়াটাই উত্তম।

বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন, এখন যে মাঠের পরিস্থিতি এবং আওয়ামী লীগের যে জনপ্রিয়তার অবস্থা তাতে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ২০১৮ এর মত কারচুপি করে জয়ী হওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তাছাড়া এবারের বির্বাচন আন্তর্জাতিক মহল অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পর্যবেক্ষণ করবে। কাজেই নির্বাচনে কারচুপি করা খুবই কঠিন হবে। 

দ্বিতীয়ত, মার্কিন ভিসা নীতি এবং অন্যান্য কারণে পুলিশ প্রশাসন এবং সিভিল প্রশাসন নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালন করবে। তারা সরকারের পক্ষে কোনো ঝুঁকি নেবে না।

তৃতীয়ত, সরকারের প্রধান মিত্র ভারতও চায় বাংলাদেশে একটি অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ এবং কারচুপিবিহীন নির্বাচন। সরকার এবার তাই কারচুপির ঝুঁকি নেবে না। সবচেয়ে বড় কথা হল যে, ২০১৮ নির্বাচনের পর জনগণ এখন নির্বাচন নিয়ে অনেক সচেতন। তারা ২০১৮ মত নির্বাচন হতে দেবে না। বরং নির্বাচনে তারা ভোট প্রয়োগ করবে। আর এ কারণেই বিএনপির নেতারা মনে করেন যে, তাদের সামনে এখন একটা সুবর্ণ সুযোগ হয়েছে। আন্দোলনে জয়ী হওয়ার চেয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়া বিএনপির জন্য এখন সহজ। চমক দেখিয়ে নির্বাচনে গেলে আওয়ামী লীগও অপ্রস্তুত হবে এবং রাজনীতিতে একটা বড় ধরনের উল্টপাল্ট হবে। বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হবে বলেও কোনো কোনো নেতা মনে করছেন। আর একারণেই শেষ পর্যন্ত বিএনপি এক দফা আন্দোলন যাবে না নির্বাচনে যাওয়ার চমক সৃষ্টিাকরী ঘোষণা দেবে সেটাই দেখার বিষয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭