ইনসাইড থট

আমাদের স্বার্থ রক্ষা করার দায়িত্ব কার?


প্রকাশ: 02/07/2023


Thumbnail

সংবাদপত্রে পড়লাম যে তথাকথিত এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে একজন উচ্চ মার্কিন কর্মকর্তা বললেন “আমেরিকা নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য যা যা করা দরকার সব সময়ই তারা তা করবে এবং স্বার্থ হাসিলের জন্য কিছু করতে দ্বিধা করবে না” (আমি সত্যিই বুঝতে পারি না কেন বা কি করে প্রতিবার মার্কিন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রেস কনফারেন্সে কেউ একজন সর্বদা বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে!! জানতে খুবই ইচ্ছা করে কারা, কার স্বার্থে তারা এ কাজ করছে?)। রাষ্ট্রদূতরা তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করে, তার দেশের স্বার্থ রক্ষায় তার সরকারের নির্দেশ পালন করে (তবে দাদাগীরি না করে কূটনৈতিক নিয়ম এবং সৌজন্য অনুসরণ করে তা করা উচিত বলে আমি মনে করি)। তাই মার্কিন রাষ্ট্রদূত যে কোনও উপায়ে তার আদেশের কাজ সম্পন্ন করার তার দায়িত্ব পালন করছেন। মার্কিন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিরা একের পর এক বাংলাদেশ সফরে আসছেন আর তাদের নিজস্ব স্বার্থ প্রাপ্তির জন্য যাকে যা বলা তাই বলছেন। অতিথিদের সাথে ভালো ব্যবহার নিশ্চিত করার আমাদের সংস্কৃতির কারণে, সরকার তাদের আগমনে আপত্তি করছে না বা আমাদের সার্বভৌমত্বে তাদের হস্তক্ষেপেও আপত্তি করছে না। আমি জানি না সরকার, বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি করার জন্য তাদের সাহায্য চেয়েছে কি না। আমার তা মনে হয় না, তাহলে এই দাদাগীরি কেন? আমরা প্রশ্ন করতে পারি, ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কী আগ্রহ বা স্বার্থ থাকতে পারে যা তাদের যে কোন উপায়ে অর্জন করতে হবে?

১। গণতন্ত্রের বিস্তার, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে নৈতিক আগ্রহ বা স্বার্থ: সত্যিই কি তাই? কেউ কি আমাকে একটি উদাহরণ দিতে পারবেন যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র এনেছে বা প্রতিষ্ঠা করেছে? অথবা কোন দেশে মানবাধিকার বা বাকস্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে লড়াই করেছে? তারা কি ইরানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যুত্থান সংগঠিত করে অপসারণ বা চিলির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করে, স্বৈরশাসকদের বসিয়ে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, এবং বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিল? আফগানিস্তান, ইরাক বা লিবিয়ায় ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে, বোমা মেরে দেশগুলি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে, হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে, ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশ দখল করে রাখার পর কোথায় গণতন্ত্র, কোথায় মানবাধিকার, কোথায় বাক স্বাধীনতা সে দেশগুলোত ? কোথায় গণতন্ত্র, কোথায় মানবাধিকার ও বাক স্বাধীনতা মিশর বা ইসরায়েল বা পাকিস্তানে? তাই এগুলো নৈতিক স্বার্থ নয় বরং তাদের স্বার্থের বিরোধিতাকে দমন করে তা পাবার তাদের ব্যবহৃত নিষ্ঠুর অস্ত্র।

২। অর্থনৈতিক বা ব্যবসায়িক স্বার্থ: আমি শুনেছি যে বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ যথেষ্ট পরিমানের এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি সহ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কারনে বাংলাদেশে ভবিষ্যতে বিশাল বিনিয়োগের সুযোগ তাদের আছে। তারা অবকাঠামো নির্মাণেও বিনিয়োগ করতে পারে। বা শ্রম খরচ কম হবার কারনে ইলেকট্রনিকসের মতো উত্পাদন সুবিধা তৈরি করতে পারে। কিন্তু এই অল্প পরিসরের বিনিয়োগের স্বার্থ তাদের ৩১ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের জন্য তেমন বড় বিনিয়োগ নয়।

৩। অস্ত্র রপ্তানির স্বার্থ: সামরিক বাহিনীর জন্য বাংলাদেশের বাজেট বরাদ্দ এত বড় নয় যে এটি কোন উল্লেখযোগ্য স্বার্থ রক্ষার ব্যাপার। তারা ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করছে বা বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি তারা ভারতের সাথে করেছে যা অনেক বেশি লাভজনক।

৪। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণের স্বার্থ: হ্যাঁ, বাংলাদেশে কিছু গ্যাস ও তেল আছে এবং আরো অনুসন্ধানের কিছু সম্ভাবনাও আছে। কিন্তু এই সম্ভাবনা এত ছোট যা উল্লেখযোগ্য নয়। বাংলাদেশে এমন কোন বিরল খনিজ নেই যার জন্য বাংলাদেশকে একটি আকর্ষণীয় দেশ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

৫। ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ: চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশে তাদের প্রভাব বিস্তার করছে। শ্রীলঙ্কায় চীনের সমুদ্রবন্দরের সুবিধা রয়েছে। মিয়ানমারেও চীনের সমুদ্রবন্দরের সুবিধা রয়েছে। মালদ্বীপে ভারতের প্রভাব রয়েছে এবং অন্যদের ভারত সেখানে আসতে দেবে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফর দেখে মনে হচ্ছে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রের যতটা না প্রয়োজন আমেরিকার তার চেয়ে বেশি ভারতকে প্রয়োজন। তার সফরের সময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাথে সম তালে বা কিছুটা উর্ধ্বে দাডিয়ে নিজ নিজ স্বার্থের কথা বলেছেন। তাই ভারতে বাইরের কোনো দেশের প্রভাবের প্রশ্নই আসে না। তাই প্রধানত চীন এবং তার প্রভাবের ক্ষেত্র সীমিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক, বিশেষ করে বঙ্গোপসাগর এলাকার উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব আছে, তাই এই এলাকা তাদের হাত ছাড়া হউক বা তাদের প্রভাবের বাহিরে থাকুক তা তারা কখনও চাইবে না। কাজেই তাই যেকোন ভাবেই হোক তাদের একটা নতজানুর বাংলাদেশের দরকার। সোজা কথা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তাদের স্বার্থের ক্ষেত্র থেকে বের হতে না দেবার সব প্রচেষ্টা চালাবে। তারা এমন একটা সরকার নিশ্চিত করতে চাইবে, সে সরকার বা শাসক তাদের নির্দেশ অনুসরণ করবে, তাদের ইচ্ছা পূরণ করবে এবং হয়তো বাংলার উপসাগরে একটি ঘাঁটি তৈরি করার সম্মতি দেবে। প্রয়োজন হলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য অন্যান্য দেশের মতো, তারা তাদের ইচ্ছার সরকার চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। সম্প্রতি আমরা দেখেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার ফিলিপাইনে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করেছে এবং পাপুয়া নিউ গিনিতে একটি নতুন ঘাঁটি খুলেছে। তাহলে বাংলাদেশে কেন তা না মানার সাহস করবে?

বাংলাদেশে কিছু ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের নেতা, বাম কিম্বা ডান, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, ধনী শিল্পপতি, তথা কথিত বুদ্ধিজীবী, মিডিয়া মোগল, এনজিওর নির্বাহী কর্মকর্তা, বড় বড় মিডিয়া সাংবাদিক যাদের সন্তানরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডা বা যুক্তরাজ্য বা অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে, তাদের সেখানে বড় রকমের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, বাড়ি আছে বা যারা বাংলাদেশে বসে বিভিন্ন অজুহাতে অনেক আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। বিভিন্ন হুমকি ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ফলে বিদেশী প্রভুর কর্তৃত্বের বিরোধীতা এই স্বার্থপর লোকগুলো কখনই করবে না, বরং পর্দার আড়ালে তাদের জন্য কাজ করতে দ্বিধা করবে না। পরিস্থিতির পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে সবাই নীরবে অন্য নৌকায় লাফ দেওয়ার জন্য হয়ত অপেক্ষা করছে। ১৯৭৫ সালের মত, ঐ লোকগুলো সবাই সুবিধাবাদী, তাদের কোন আত্মসম্মান বা জাতীয় অনুভূতি নেই, দেশের স্বার্থ তাদের অগ্রাধিকার নয়। এই লোকগুলো মোট জনসংখ্যার ২-৩% হতে পারে কিন্তু এই গোষ্ঠীগুলি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রাখে। একমাত্র সমস্যা, পথের কাটা হল জাতির পিতা শেখ মুজিবের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে, তাদের কথা মানতে হবে অন্যথায় তাকে অপসারণ করা হবে। এখন প্রধান টার্গেট হল শেখ হাসিনা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আত্মসমর্পণ করবেন না এবং গদির লোভে বাংলাদেশকে কোনো স্বার্থের কাছে বিক্রি করবেন। লোকে বলে না তিনি হলেন “শেখের বেটি”। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ সমুন্নত রেখে সামনে পথ চলতে তিনি মরতেও ভয় পান না।

বাংলাদেশের বাকি ৯৮% মানুষের স্বার্থ কি? তারা চায় সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, একটি শালীন সম্মানজনক জীবনযাপন, যাতে তারা অন্তত দুই বেলা পেট ভরে খেয়ে নিজের ঘরে শান্তিতে ঘুমাতে পারে, তাদের ফসলের আর ঘামের সঠিক দাম পায়, যাতে তাদের সন্তানরা সঠিক শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসার সুযোগ পায় বা আরও উন্নতি করতে পারে, যাতে তারা বিদ্যুৎ সহ উন্নতির সমস্থ সুবিধা গুলো পায়, সহজে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে, অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, তাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারে। এগুলো সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা ও স্বার্থ। তারা চায় যেন তারা মর্যাদা, সম্মান ও গর্ব নিয়ে বাঁচতে পারে। প্রধানমন্ত্রী সাধ্যমত চেষ্টা করছেন, দিনরাত কাজ করছেন তাদের স্বার্থ পূরণে। তার জন্য তিনি দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, কিন্তু কখনো তিনি ভিক্ষা চাইবেন না, বা কারো কাছে মাথা নত করবেন না। তিনি একজন গর্বিত বাঙালি, বাংলাদেশের মা।

হয়ত আপনি উচ্চকণ্ঠে তার কিছু দুর্বলতা নিয়ে কথা বলতে পারেন, আপনি হয়ত, যা কিছু লোক করেন, তাকে খারাপ ভাবে চিত্রিত করার জন্য গালিগালাজের নোংরা ভাষা ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু বাংলাদেশ ও এর জনগণের প্রতি তার আন্তরিকতা, সাহসিকতা এবং ভালোবাসা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। আমি সবাইকে অনুরোধ করতে চাই, দয়া করে একজন সৎ মানুষের মত, আপনার বুকে হাত রেখে দয়া করে বলুন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প কে বা কি? কে আমাদের স্বার্থকে অন্য বিদেশী শক্তির কাছে বিসর্জন না দিয়ে সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য লড়াই করবে? ২০০৯ সাল থেকে অভূতপূর্ব অগ্রগতি কে বা কারা বজায় রেখে বাংলাদেশকে আরও শক্তিশালী করতে পারবে? কে সন্ত্রাসবাদকে দৃঢ়ভাবে পরাস্ত করতে পারবে, কে তার ভূমি থেকে অন্য সার্বভৌম দেশে আক্রমণ করতে দেবে না? কে হবে সেই ব্যক্তি যে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হবে যেখানে প্রত্যেকে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তুলতে এবং আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপ্ন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে? আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলব তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন জাতীয় পিতার মেয়ে শেখ হাসিনা। আমি বিশ্বাস করি এই ক্রান্তি কালে, সংকটময় সময়ে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। বাংলাদেশ তার বর্তমান অগ্রগতি আরও ১০ বছর অব্যাহত রাখতে পারলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কেউ আর আঙুল তুলে কথা বা হুমকি দেওয়ার সাহস পাবে না।

আসুন মর্যাদা, সম্মান, গর্ব এবং সমৃদ্ধির সাথে বাঁচতে শিখী। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করা আমাদের সাবার দায়িত্ব। আসুন আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করার জন্য আমাদের আওয়াজ তুলি আর জোর গলায় বলি অনেক রক্তের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের বাংলাদেশ কারো কাছে বিক্রির জন্য নয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭