টেক ইনসাইড

বাড়ছে সাইবার অপরাধ, সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে


প্রকাশ: 04/07/2023


Thumbnail

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও বেড়ে চলছে ইন্টারনেটের ব্যবহার। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে সর্বসাধারণের জন্য ইন্টারনেট চালুর পর থেকে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটিতে পৌঁছেছে। এটি অবশ্যই দেশের জন্য গর্ব করার মত একটি বিষয়। কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপরাধের প্রবণতাও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। অনলাইনে পর্নোগ্রাফি, পর্নো ভিডিও, ছবি বিকৃতি, মানসিক হয়রানি ইত্যাদির শিকার হচ্ছে নারী-পুরুষ এমনকি শিশুরাও।

অপরাধীরা এই ইন্টারনেট ব্যবহার করে কম্পিউটার, মোবাইল বা বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের মাধ্যমে যেসব অপরাধ ঘটিয়ে থাকে তাকে সাধারণত সাইবার অপরাধ বলে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে হ্যাকাররা মানুষের ডিভাইস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে নানা অপকর্ম করছে।

সাইবার অপরাধের ধরনঃ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, ইমেইল ইত্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট প্রচার, অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া, ছবি বিকৃতি করে অপপ্রচার, মানসিক হয়রানি, যৌন হয়রানি, সম্মানহানির জন্য অনলাইনে ও ফোনে হুমকি ইত্যাদি সাইবার বুলিং নামে পরিচিত। এই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে অনেক নারী আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ পথ বেছে নিয়েছেন।

সাইবার অপরাধের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অপরাধীরা সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিষাক্ত মাদক, ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কম্পিউটার ভাইরাস। এমনকি ইকমার্সের নামে ভুয়া পেজ খুলে নিম্নমানের পণ্য বিক্রি হচ্ছে অহরহ।

বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার ওয়েব সাইট হ্যাক, ক্রেডিট কার্ডের নম্বর চুরি, জাল সার্টিফিকেট তৈরি, জাল টাকা বা ভেজাল পাসপোর্ট, বিভিন্ন প্রকার দলিল-দস্তাবেজ কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরির ঘটনাও উদ্ঘাটিত হচ্ছে।

সাইবার অপরাধের মধ্যে আরো রয়েছে তথ্য চুরি, তথ্য বিকৃতি, প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইল, অর্থ চুরি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে নেটে প্রচার, রাষ্ট্রবিরোধী তত্পরতা নেটে প্রচার, মুক্তিযুদ্ধের কর্মকাণ্ড, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ইত্যাদি।

যেভাবে করবেন সাইবার অপরাধের মামলাঃ

কেউ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাইবার হামলার শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে হয়রানির বিষয়গুলো স্ক্রিন শট দিয়ে রাখতে হবে, ওয়েবসাইট ও পেজের ইউআরএলগুলো সংরক্ষণ এবং ছবি ও ভিডিওগুলো সংগ্রহ করে রাখতে হবে।

যদি থানায় সাইবার অপরাধের মামলা থানা না নেয় তাহলে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে পিটিশন মামলা দায়ের করা যায়। অপরাধী যদি হয়রানিমূলক তথ্য মুছেও ফেলে, তাহলেও ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের মাধ্যমে হয়রানিমূলক তথ্য অনুসন্ধান করা সম্ভব।

সাইবার অপরাধের জন্য দণ্ডসমূহঃ

সাইবার অপরাধের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ অধীনে উল্লেখযোগ্য দণ্ডসমূহ হলো : ক. কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার সিস্টেম ইত্যাদি প্রবেশের দণ্ড হিসেবে ১৮ (৩) অধীনে অপরাধের জন্য আমাদের তিন বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। খ. মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা প্রচারের দণ্ড হিসেবে ২১ (২) ধারার অধীনে আমাদের ১০ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। গ. পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণার অপরাধে ২৪ (২) ধারা অধীন পাঁচ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ লাখ টাকা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। ঘ. আক্রমণাত্মক মিথ্যা বা ভীতিপ্রদর্শক, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশের অপরাধে ২৫ (২) ধারা মোতাবেক তিন বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। ঙ. সাইবার সন্ত্রাসী কার্য সংগঠনের অপরাধে ২৭ (২) ধারা মোতাবেক অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।

সাইবার বুলিং স্বতন্ত্র কোন অপরাধ নয় বরং সাইবার অপরাধেরই একটি অংশ। বর্তমানে উঠতি বয়সী তরুণেরা বিশেষ করে মেয়েরা প্রতিনিয়ত সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। এর ফলে অনেক তরুণ তরুণী মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে আত্মহননের মতো জঘন্য পথ বেছে নিচ্ছে। কার্যত সাইবার অপরাধের লাগাম টানতে দেশে যে প্রচলিত আইন রয়েছে সেগুলোর সুষ্ঠু প্রয়োগ ঘটাতে হবে।

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭