কালার ইনসাইড

নাটকের সিন্ডিকেটের শেষ কোথায়?


প্রকাশ: 04/07/2023


Thumbnail

বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম টেলিভিশন নাটক। একসময় ধারাবাহিক বা প্যাকেজ নাটকের দৌরাত্ম্য থাকলেও গত এক দশকে খণ্ড নাটক দর্শক চাহিদার শীর্ষে। অবসর সময়ে বিনোদিত হওয়ার জন্য টেলিভিশন কিংবা অনলাইনে নাটক দেখছেন প্রচুর সংখ্যক দর্শক। তবে দর্শকের সেই আগ্রহকে পুঁজি করে কিছু সংখ্যক নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পী সিন্ডিকেট করে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বেশ কয়েক বছর ধরেই ইন্ডাস্ট্রিতে সিন্ডিকেট নিয়ে বেশ চর্চা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে কেউই মুখ খুলতে চান না। ভুক্তভোগী কিছু নির্মাতারাও এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। যার ফলে রকেটের গতিতে বেড়েই চলছে এসব সিন্ডিকেটের আধিপত্য। এ জন্য সম্ভাবনাময় অনেকের ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে।

সম্প্রতি এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সাধারণ দর্শকের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন সিনিয়র অভিনয় শিল্পী, , লাইট ম্যান, মেকাপ আর্টিস্টরাও মুখ খুলেছেন। আবার কেউ কেউ পুরো বিষয়টিকেই মিডিয়ার সৃষ্টি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

ঈদ বা বিশেষ দিবসের আগে সিন্ডিকেট মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। এ সময় চাহিদা সম্পন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা নির্দিষ্ট পরিচালক ও সহশিল্পীর বাইরে গিয়ে কাজ করেন না। এমনকি কাজের প্রস্তাব দিলেও, সিন্ডিকেটের বাইরের পরিচালকদের শিডিউল নেই বলে ফিরিয়ে দেন। পাশাপাশি কিছুদিন ধরে অভিযোগ উঠেছে কিছু আর্টিস্ট এখন তাদের পছন্দের ক্যামেরা মেন, লাইট মেন কিংবা মেকাপ আর্টিস্ট নিতে বাধ্য করেন নির্মাতাদের। 

সম্প্রতি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্যামেরা ম্যান বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে এখন কাজ করা কঠিন হয়ে গিয়েছে। ঈদের আগে এই সিন্ডিকেটের কারণে আমাকে পাঁচটি কাজ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখন তাদের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে যাচ্ছি আমরা। এতবছর ধরে কাজ করে আসছি এই ইন্ড্রাস্টিতে এখন এই সিন্ডিকেটের কারণে পরিবার নিয়ে আমাদের রাস্তায় বস্তে হবে কিছুদিন পর।  

ফলে বছর জুড়ে একসময় টিভি পর্দায় দেখা যেত  জিয়াউল হক অপূর্ব, তৌসিফ মাহবুব, সাফা কবির, নিলয় আলমগীর, জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি, শামীম হাসান সরকার, অহনা, আরশ খান, তানিয়া বৃষ্টি, মিশু সাব্বির, যাহের আলভী, প্রভা, ইফফাত আরা তিথি প্রমুখ।

অভিযোগ রয়েছে, তৌসিফ মাহবুব, শামীম, আরশ ও আলভীরা নিজেদের পছন্দের নির্মাতা ও শিল্পীদের বাইরে কাজ করেন না। তাছাড়া, প্রতিটি কাজে সহশিল্পী হিসেবে নিজেদের পছন্দের শিল্পী ও ক্যামেরাম্যানকে কাজে নেয়ার কথা বলেন। এর মধ্যে ওইসব অভিনেতার পছন্দের তালিকায় রয়েছে তাদের গার্লফ্রেন্ড অভিনেত্রীরাও। 

নাটক এখন সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেছে জানিয়ে প্রখ্যাত অভিনেত্রী ডলি জহুর এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আগের মতো এখন আর মানসম্মত নাটক নির্মাণ হয় না। তা ছাড়া নাটকে চরিত্র কমে গেছে। আমাদের মতো সিনিয়রদের কথা চিন্তা করে কোনো চরিত্রও রচিত হয় না। এখন তো এক জোড়া নায়ক-নায়িকা থাকলেই নাটক হয়ে যায়, ফলে দর্শক মন ভরাতে পারছে না এসব নাটক। এটা যেন একটা ট্রেন্ড চালু হয়ে গেছে। পারিবারিক গল্প বলতে গেলে এখনকার নাটকে প্রায় উপেক্ষিত। আগে বিটিভিতে কত সুন্দর নাটক হতো। নাটক নাকি এখন সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেছে। তাই দর্শকের চাহিদা বরাবরই উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টেলিপ্যাব)-এর এক প্রযোজক নেতা ও পরিচালক বলেন, বর্তমানে বেশ কয়েকজন শিল্পীদের কাছে নির্মাতারা জিম্মি। ওইসব শিল্পীরা নির্দিষ্ট ঘরানার বাইরে কাজ করে না। অনেকে তো ফোনই ধরে না। ফোন দিতে দিতে ফোন ধরলেও ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে কথা বলবে জানিয়ে রেখে দেয়। পরে আর তাদের খবর থাকে না। গল্প পাঠাতে বলে নানা রকম তালবাহনা করে। অথচ অনেক বড় মাপের শিল্পীদের ফোনে পাওয়া গেলেও গল্প না দেখেই শিডিউলে নেই জানান সিন্ডিকেটের ওইসব শিল্পীরা। আবার এও বলে থাকেন যে, অমুকের সঙ্গে কাজ করিনি তার সঙ্গে কাজ করতে চাই না। নানান রকমের কথা। এ সময়ের বেশ কয়েকজন শিল্পীদের কারণে পুরো ইন্ডাস্ট্রির বদনাম হচ্ছে।

এক সাক্ষাৎকারে হাজির হয়ে ছোট ও বড় পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেছিলেন, টেলিভিশন নাটকে এক ধরনের বাজে সিন্ডিকেট রয়েছে। তার পরপরই একই দাবি করেন অভিনেত্রী ফারিয়া শাহরিন। তার দাবি, এই সিন্ডিকেটে কিছু জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা রয়েছেন, যারা নির্দিষ্ট কয়েকজনের বিপরীতে ছাড়া কাজ করেন না।

অর্থাৎ ফারিয়া শাহরিন বোঝাতে চেয়েছেন, নাটকের ওই সকল নায়ক-নায়িকা নিজেই ঠিক করেন তাদের বিপরীতে কোন অভিনেতা বা অভিনেত্রী কাজ করবেন। যাতে তাদের অভিনীত নাটক হিট হয়। সিন্ডিকেটের বাইরে তারা কারও সঙ্গে অভিনয় করতে চান না। ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এই বিষয়গুলোর দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন ফারিয়া শাহরিন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭