গ্রেপ্তার হতে পারেন নুরুল হক নুর?

গণ অধিকার পরিষদ। সমসাময়িক সময়ে দেশের রাজনীতিতে একটি আলোচিত নাম। ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ‘গণ অধিকার পরিষদ’। দলটির সূচনা হয়েছিল সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সমমনা দল হিসেবে। দলটির সদস্য সচিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এবং আহ্বায়ক আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতার অন্তঃকোন্দল এবং অর্থ লেনদেনের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দলটির মনোমালিন্য, মতানৈক্যের কারণে দুই নেতা পরস্পর দুই মেরুতে অবস্থান করছেন।  

এদিকে গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে শাহবাগ থানায় মামলার আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। সূত্রটি বলছে, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এই মামলার আবেদন করেছেন। এই আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, তাঁরা আবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখছেন।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন হয়। মামলাটির পর্যবেক্ষণ বলতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির অপেক্ষা। অনুমতি হয়ে গেলেই মামলা রুজু হবে এবং মামলা রুজু হলেই যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন নুরুল হক নুর। মূলত নুরুল হক নুর ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সাথে দুবাইয়ে সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানে তারা বাংলাদেশের সরকার হঠানোর আন্দোলনের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করেছেন। এজন্য গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব সেই গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টের কাছ থেকে অর্থও সংগ্রহ করেছেন। যে অর্থের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়েই আজকে গণ অধিকার পরিষদে অস্থিরতা এবং ভাঙন। নুরুল হক নুর যখন দুবাইয়ে অবস্থান করছিলেন, তখন ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সাথে তার একটি ছবিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় এবং ছবিটি ভাইরাল হয়েছিল।   

জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার বিকেলে শাহবাগ থানায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক বিদেশে গিয়ে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নুরুল হক বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকার উৎখাতের রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। নুরুল হক গণ অধিকার পরিষদ নেতা-কর্মীদের উসকে দিয়ে রাষ্ট্রের মধ্যে ঘৃণা, বিদ্বেষ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছেন। বৈধ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে নুরুল হক রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২৪(ক), ১২০ (থ) ও ৫০৬ ধারায় মামলা রুজু করা আবশ্যক। 

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি নুর মোহাম্মদ আজ শনিবার বলেন, ‘নুরুল হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা পরবর্তী সময়ে জানাতে পারব।’

তবে নুরুল হক ইসরায়েলি নাগরিকের সঙ্গে সভা করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, আমার বৈঠক হয়নি। হোটেলে অনেক ভিড় ছিল, অনেকেই আমার সঙ্গে ছবি তুলেছে। আমি তো সাফাদিকে চিনতাম না। যে ছবিটির কথা বলা হচ্ছে কখন তুলেছে, সেটা আমার বোঝার কথা না।’

উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরে গণ অধিকার পরিষদের শীর্ষ দুই নেতা রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হককে ঘিরে দলটিতে অস্থিরতা চলছে। সম্প্রতি সেই অস্থিরতা প্রকট রূপ নিয়েছে। দলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে পাল্টাপাল্টি অব্যাহতি, আহ্বায়ককে অপসারণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ইসরায়েলের নাগরিকের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি নিয়ে নিজ দলেও চাপে আছেন নুরুল হক।