ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচন এবং আন্দোলন, দ্বিমুখী পরিকল্পনায় বিএনপি


প্রকাশ: 09/07/2023


Thumbnail

প্রকাশ্যে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও ভেতরে ভেতরে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। ইতিমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে, তাদেরকে গ্রীন সিগন্যাল দিয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় হাই কমান্ড এবং তাদেরকে নির্বাচনী মাঠ গোছানোর কাজ করতে বলা হয়েছে। বিএনপির একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

সূত্রগুলো বলছে, একদিকে যেমন বিএনপি সরকার পতনের বৃহৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, অন্যদিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতিও নিচ্ছে বিএনপি। এটি বিএনপির নতুন এক রাজনৈতিক কৌশল। কেননা বিএনপি মনে করছে, খুব শিগগিরই এই সরকার ক্ষমতা ছেড়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে এবং সেই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখা আবশ্যক। তাই নতুন এই রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দ্বিমুখী পরিকল্পনা অবলম্বন করেছে বিএনপি।          

বিএনপি সূত্র জানায়, বিএনপি আগামী ১২ জুলাই সরকার বিরোধী একদফা আন্দোলনের চূড়ান্ত ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠেয় ‘বিশাল’ সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেবে বিএনপি। এ জন্য বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শনিবার (৮ জুলাই) নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের (ভার্চুয়ালি) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রায় এক ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে লিখিত আবেদন করা হবে। অভিন্ন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও জোট আলাদা মঞ্চ থেকে একই ঘোষণা দেবে। শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

এক দফার আন্দোলনের সিদ্ধান্তসহ সার্বিক পরিস্থিতি চেয়ারপারসনকে অবহিত করতেই মহাসচিব এ সাক্ষাৎ করেন বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা। সেই সঙ্গে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির ব্যাপারেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা নিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে পৌনে এক ঘণ্টার মতো আলাপ-আলোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পর্কেও বেগম জিয়াকে অবহিত করেন মির্জা ফখরুল।  

অন্যদিকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট এলাকায় যেতে বলা হয়েছে। তাদেরকে এলাকায় জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে বলা হয়েছে। এই নেতারা কেন্দ্রীয় এক দফা আন্দোলনে চাইলে থাকতেও পারেন, না চাইলে  না-ও থাকতে পারেন। তাদের মূল কাজ হচ্ছে নির্বাচনে প্রস্তুতি গ্রহণ। যে কারণে বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের দীর্ঘ দিন রাজধানীতে অবস্থান করতে দেখা গেলেও নির্বাচনের আগে অনেকেই রয়েছেন এলাকায়। তারা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সামাজিক আচার অনুষ্ঠান, যেমন- বিয়ে-বৌভাত, মিলাদ-মাহফিল, জানাজা ইত্যাদিতে নিয়মিত যোগদান করছেন।      

বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, ১৫ জুলাই একদফা ঘোষণার প্রস্তুতি ছিল দলটির। এ লক্ষ্যে সমমনাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেন নেতারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচন বিষয়ক ৬ সদস্যের তথ্যানুসন্ধানী মিশন ১৬ দিনের সফরে ঢাকা আসছেন। এদের মধ্যে দুজন শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছেছেন। বাকি ৪ জন আজ রোববার আসছেন। তাদের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া এ সপ্তাহে ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী একটি প্রতিনিধি দল। তাই কিছুটা আগেই সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এই এক দফার আন্দোলনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপি বিদেশি প্রতিনিধিদের কাছে বার্তা পৌঁছাতে চায় যে, তারা এই সরকারের পতনের আন্দোলনে চূড়ান্ত ধাপে নেমেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকের পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে বিএনপি। বিএনপির প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলকে সরকার পতনের দাবির ব্যাপারে বোঝাতে পারলেই, সরকার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হবে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। তখনই প্রকাশ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি খোলাসা করবে দলটি। এর আগে নির্বাচনের ব্যাপারে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। 

তবে বিএনপির এমন দ্বিমুখী পরিকল্পনাকে হঠকারি সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি ভেতরে ভেতরে যে পরিকল্পনা নিয়েছে, সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না-ও হতে পারে। বিএনপি ভেতরে ভেতরে জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের যে প্রস্তুতি নিয়েছে, সেটিই গণতান্ত্রিক এবং সঠিক সিদ্ধান্ত। বিদেশিদের কাছে নালিশ করে বিএনপি সরকারকে হঠানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি সংবিধান পরিপন্থি। বিএনপির সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না-ও হতে পারে। এখন অপেক্ষার বিষয় বিএনপির দ্বিমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয় কি না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭