ইনসাইড বাংলাদেশ

কূটনীতিকদের সফরের মধ্যেই রণক্ষেত্র গুলশান: সরকারের সর্ষের মধ্যে ভূত!


প্রকাশ: 13/07/2023


Thumbnail

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর চার দিনের সফরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে মার্কিন প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) নয়াদিল্লি হয়ে সন্ধ্যায় মার্কিন প্রতিনিধি দলটি নিয়ে ঢাকায় আসেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। উজরা জেয়ার নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধি দলটি ১১ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করছেন। প্রতিনিধি দলে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া ব্যুরোর অ্যাসিন্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু-সহ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি ও নিরাপত্তা কাউন্সিলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন। গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই) মার্কিন প্রতিনিধি দলটিকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।

এছাড়াও, এই একই সময়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। ইইউ প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের ২ সদস্য শনিবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান। পরে রোববার (৯ জুলাই) ভোরে ইইউ প্রাক নির্বাচনী প্রতিনিধি দলের নেতা রিকার্ডো শেলেরিসহ আরও চার সদস্য ঢাকায় পৌঁছান। আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবেন ছয় সদস্যের ইইউ প্রতিনিধি দলটি। ইইউ প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তারা সম্ভাব্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের কর্মপরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট, লজিস্টিকস ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়গুলো মূল্যায়ন করবেন। 

কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার এরই মধ্যে রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরে গুলশান শপিং সেন্টার সিলগালা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এ ঘটনার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শপিং সেন্টারের ব্যবসায়ীরা। সড়ক অবরোধের কারণে গুলশান ও বনানীসহ আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে গুলশান শপিং সেন্টার সিলগালা করা হলেও এর প্রতিবাদে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে ব্যবসায়ীদের তুমুল আন্দোলন। প্রায় ৬ ঘন্টা সময় গুলশান এবং আশেপাশের সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখেন ব্যবসায়ীরা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

কিন্তু এ ঘটনাটিকে পূর্বপরিকল্পিত এবং সরকারকে বিতর্কিত ও বিব্রত করার জন্যই করা হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের মধ্যেই সরকারকে বিব্রত ও বিতর্কিত করার মতো ব্যক্তিরা লুকায়িত রয়েছে। যাকে বলা হয় সর্ষের মধ্যে ভূত। কেননা এই সময়ে বাংলাদেশে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন। এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলও বাংলাদেশ সফর করছেন, এমনকি বিদেশি এসব প্রতিনিধিরা রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানেই অবস্থান করছেন, রাত্রীযাপন করছেন। ঠিক সেই সময়ে গুলশানের মতো এমন একটি জায়গায় এই ঘটনাটি তারা কেন ঘটিয়েছেন?- এটিই একটি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের লোকেরা অন্তত দুই/চার/পাঁচ দিন পরেও-তো গুলশান শপিং সেন্টার সিলগালা করতে পারতো! তারা এটি কেন করেছে? সরকারকে বেইজ্জতি করার জন্য? তারা কি দেখাতে চাইছে যে, সরকারের নিয়ন্ত্রণে কোনো কিছু নেই? জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন করছে- এটিই কি তারা মার্কিনী এবং ইইউ প্রতিনিধিদের কাছে প্রমাণ করতে চাইছে? আজকেই কেন এটি (মার্কেট সিলগালা) করতে হবে? ক’টা দিন পরেও তো করা যেত!              

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, দুপুরের দিকে গুলশান-১ নম্বর চত্বরের রাস্তা সিমেন্টের ব্লক দিয়ে বন্ধ করে দেন গুলশান শপিং সেন্টারের ব্যবসায়ীরা। এর ফলে গুলশান চত্বর দিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের রাস্তা দখলের পর মহাখালী থেকে গুলশান-১, হাতিরঝিল থেকে গুলশান-১, গুলশান-২ থেকে গুলশান-১ ও বাড্ডা থেকে গুলশান-১ নম্বরের যানচলাচল বন্ধ থাকে। হঠাৎ রাস্তা অবরোধের ফলে চারদিক দিয়ে শত শত যানবাহন রাস্তায় আটকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিকেল ৪টার দিকে গুলশান-১ নম্বর গোল চত্বর থেকে পুলিশ আন্দোলনরত ব্যবসায়ীদের সরিয়ে সড়ক খুলে দিলে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এতে বেশ কয়েকটি যানবাহনের গাড়ির কাঁচ ভেঙে যায়। সড়কে চলাচলরত পথচারীদেরও দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। পরে পুলিশ আন্দোলনরত ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এতে আন্দোলনরত ব্যবসায়ীরা চারদিক থেকে পুলিশ ও চলাচলরত যানবাহনকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। এ সময় ব্যবসায়ী-পুলিশ সংঘর্ষে গুলশান এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়। 

সূত্র জানায়, বিএনপির ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালের শাসনামলে সাদেক হোসেন খোকার সময় মেট্রো গ্রুপের (বিএনপি নেতা এবং তারেক রহমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আমিনের কোম্পানী) সাথে গুলশান -১ এর ডিসিসি মার্কেট উন্নয়নের জন্য লোক দেখানো টেন্ডারের মাধ্যমে করপোরেশনের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে একটি অসম চুক্তি সম্পন্ন করা হয়। পরবর্তীতে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে কোনো মেয়রই এ চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়রের সাথে একটি গোপন সমঝোতার হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছিল, যার ফলশ্রুতিতে আজকের এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলেই জানিয়েছে সূত্র।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের আস্থাভাজন ব্যক্তিরাই সরকারকে বিতর্কিত করার জন্য, বেইজ্জতি করার জন্য- এই সময়ে এই ধরনের কর্মকান্ড করেছেন বলেই জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার বিরোধী চক্রের সাথে সমঝোতা অথবা কোনো প্রকার লেনাদেনার ভিত্তিতেই এই কাজ করতে পারেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তা-না হলে গুলশানের মতো এমন একটি জায়গায় বিদেশি কূটনীতিকদের অবস্থানকালে কেন এই কাজটি করা হলো? -এই প্রশ্নটিই এখন সবচেয়ে বড় একটি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭