ইনসাইড পলিটিক্স

শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন যারা


প্রকাশ: 16/07/2023


Thumbnail

আজ রোববার (১৬ জুলাই) আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস। ২০০৭ সালের এ দিনে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলাকালে কথিত দুর্নীতির অভিযোগে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হন। এই ওয়ান-ইলেভেন সরকারের পেছনে দেশের সুশীল সমাজের একটি অংশের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। তারা চেয়েছিল রাজনীতিমুক্ত একটি সরকার গঠন করতে, রাজনীতিবিদদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করতে। আর এই জন্যই রাজনীতিকে বিভক্ত করার এক কূট কৌশলে নেমেছিল ওয়ান-ইলেভেন সরকার। আর এই কৌশলে আওয়ামী লীগের মধ্যেও বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের অনেক নেতারাই তখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিরোধিতা করেছিলেন। তারা সংস্কার দাবি করেছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের জন্য। আর সেই সমস্ত নেতাদেরকে এখনো আওয়ামী লীগে সংস্কারপন্থী নেতা বলা হয়। যারা সেসময় এই সংস্কার করেছিল, বিরাজনীতি প্রক্রিয়াকে বুঝে না বুঝে সহযোগিতা করেছিল তাদের মধ্যে রয়েছেন;
 
আমির হোসেন আমু: আমির হোসেন আমু ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই সংস্কার প্রস্তাবে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির ক্ষমতা খর্ব করা, দুই মেয়াদের বেশি সভাপতি না থাকাসহ বিভিন্ন রকম প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং সেই সময় তাঁর স্ত্রী অসুস্থ থাকার পরও তিনি দেশে এসে এই সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে সকলকে বিস্মিত করেন।

তোফায়েল আহমেদ: তোফায়েল আহমেদ ছিলেন আরেক সংস্কার প্রস্তাব দানকারী। প্রায় আমির হোসেন আমুর অনুকরণেই এই সংস্কার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। যে কারণেই হোক এই সংস্কার প্রস্তাব ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতিকে মাইনাস করার পক্ষে। পরবর্তীতে তোফায়েল আহমেদ নিজেই স্বীকার করেছেন যে, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির চাপে তিনি এই সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদের একজন সদস্য এবং তিনি ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও আওয়ামী লীগে তিনি এখন অপাংক্তেয় হয়ে পড়েছেন।

সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত: প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও চার সংস্কার প্রস্তাব প্রদানকারী আওয়ামী লীগ নেতাদের অন্যতম শিষ্য ছিলেন। তিনি এই সংস্কার প্রস্তাব সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছিলেন। যা অন্য তিন নেতার প্রায় অনুরূপ।

আব্দুর রাজ্জাক: আওয়ামী লীগ থেকে শেখ হাসিনা মাইনাস করতে যারা রঙিন স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনা বিরোধী ছিলেন। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে বাকশাল গঠন করেছিলেন। পরে আবার আওয়ামী লীগের ফিরে এসেছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে এলেও ২০০৯ সালের দলের সম্মেলনে সভাপতিমন্ডলী থেকে বাদ দিয়ে তাকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়। ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।

মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন: ১/১১ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের যে ক’জন নেতা সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পান, তার মধ্যে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনও ছিলেন। গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে তিনি দলের  সভাপতিমন্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত হন।

আ খ ম জাহাঙ্গীর: সংস্কারপন্থি আওয়ামী লীগ নেতাদের তালিকায় স্থান হয়েছে আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন এর নামও। সংস্কারপন্থি অভিযোগে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন তিনি। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে ফের এমপি নির্বাচিত হন।

অধ্যাপক আবু সাঈদ: অধ্যাপক আবু সাঈদ ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থীদের তাত্ত্বিক গুরু হিসেবে আবির্ভূত হন এবং তার বাড়িতেই সংস্কারপন্থীরা বিভিন্ন বৈঠকে উপস্থিত হতেন বলে জানা যায়।

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ: সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং ওয়ান ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শুধু সংস্কারপন্থী ছিলেন না, তিনি গোপনে সেনা সমর্থিত সরকারের বিরাজনীতির প্রক্রিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন এবং তাদেরকে সহযোগিতা করেছিলেন। মইন উ আহমেদ যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সূচনা করেছিলেন সেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন বলেও বিভিন্ন মহল মনে করেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না: মাহমুদুর রহমান মান্না সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের মতো শেখ হাসিনা বিরোধী অবস্থানে চলে যান এবং ওয়ান-ইলেভেন সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী হিসেবে রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছিলেন।

তবে এই সংস্কারপন্থীরা শেষপর্যন্ত সফল হননি। তারা কোণঠাসা হয়েছেন এবং এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতিতে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭