এডিটর’স মাইন্ড

একদফা, এক-এগারো এবং মাইনাস ফর্মুলা


প্রকাশ: 17/07/2023


Thumbnail

১৬ জুলাই, ২০০৭। ঢাকার আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছিল। মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে সূর্য ওঠার আগেইসুধা সদনঘিরে ফেলে যৌথ বাহিনী। আওয়ামী লীগ সভাপতি জেগেই ছিলেন। তিনি জানতেন তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। যৌথ বাহিনীর লোকজন যখন সুধা সদনের ভেতরে প্রবেশ করেন, তখন শেখ হাসিনা শান্ত, দৃঢ়, উদ্বেগহীন। সশস্ত্র কর্মকর্তাদের একটু অপেক্ষা করতে বলে তিনি ফজরের নামাজ আদায় করেন। এরপর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অনুরোধ করে বলেন, কয়েকটি ফোন করতে হবে। টেলিফোনে কথা বলেন প্রয়াত অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতাধর উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের সঙ্গে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে যৌথ বাহিনী পরিবেষ্টিত অবস্থায় তিনি বেরিয়ে আসেন সুধা সদন থেকে। একটি মাইক্রোবাসে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে নিয়ে যাওয়া হয় পুরান ঢাকার কোর্টপাড়ায়।। সেখানে তাকে টানাহ্যাঁচড়া করা হয়। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, একজন বিরোধী দলের নেতা, সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের জাতির পিতার কন্যার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক এবং অসম্মানজনক আচরণ করেন যৌথ বাহিনীর কিছু অতিউৎসাহী কর্মকর্তা। আদালতপাড়ায় সাজানো আনুষ্ঠানিকতার পর একটি উদ্ভট চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাওয়া হয় সংসদ ভবন এলাকায়। সেখানে বসবাস অযোগ্য প্রায় একটি বাড়িকে সাবজেল ঘোষণা করে তাকে রাখা হয়। এটি ছিল রাজনীতি থেকে শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার চূড়ান্ত পদক্ষেপ। ২০০৭ সালে এক অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ছিল বিএনপি-জামায়াত জোটের শেষ দিন। ক্ষমতা পাকাপোক্ত এবং চিরস্থায়ী করতে বিএনপি ২০০১ সাল থেকেই নানা তৎপরতা শুরু করেছিল। ক্ষমতায় এসেই বিএনপি-জামায়াত জোট নিজেদের অনুগত এবং একান্ত বাধ্যগত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের নীলনকশা বাস্তবায়ন শুরু করে। একদা বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক বিচারপতি কে এম হাসানকে প্রধান বিচারপতি করা হয়। সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা ছিল, তাতে বলা হয়েছিল যে, সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান। সেই হিসেব মাথায় রেখে বিএনপি সংবিধান সংশোধন করে। প্রধান বিচারপতির চাকরির বয়সসীমা এমনভাবে বাড়ানো হয় যেন, বিচারপতি কে এম হাসানই তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হন। সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে যায় যে, কে এম হাসানই হবেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান। এটুকু করেই বিএনপি ক্ষান্ত হয়নি। নির্বাচন কমিশনকে কিছু ভাঁড়ের আড্ডাখানায় পরিণত করে বিএনপি। অযোগ্য, অথর্ব, অনুগত নির্বাচন কমিশন গঠন করে বিএনপি পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করে। দেড় কোটি ভুয়া ভোটার ভোটার তালিকায় সংযুক্ত করা হয়। হাওয়া ভবনে প্রস্তুতকৃত তালিকার কথা শুধু বিএনপিই জানত। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় ছড়িয়ে থাকা এসব জাল ভোট দেওয়া হলে, বিএনপিকে ভোটে হারানো হতো অসম্ভব ব্যাপার। মাঠ প্রশাসন থেকে সর্বোচ্চ প্রশাসনে বিএনপিপন্থিদের বসানো হয়। তিন স্তরে বিএনপিপন্থি প্রশাসন ক্যাডারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। যাতে আর যাই হোক, বিএনপিপন্থি ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তা নির্বাচনের দায়িত্ব না পায়। পুলিশ প্রশাসনকে বিএনপির ক্যাডার বাহিনীতে পরিণত করা হয়। সেনাবাহিনী যেন বিএনপির বাধ্যগত থাকে, সে জন্য সাতজনকে ডিঙ্গিয়ে সেনাপ্রধান করা হয় মইন আহমেদকে। বেগম জিয়ার বিশ্বস্ত, মাই ম্যান। কিন্তু সব আয়োজন ভেস্তে যায় আওয়ামী লীগের তীব্র আন্দোলনে। ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর তীব্র গণআন্দোলনের মুখে বিচারপতি কে এম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণে অসম্মতি জানান। সংবিধান অনুযায়ী, ক্ষেত্রে কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হবেন, তার অনেক ধাপ ছিল। যেমন দ্বিতীয় অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ইত্যাদি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার শেষ বিকল্প ছিলেন রাষ্ট্রপতি। অন্য কাউকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে পাওয়া না গেলেই শুধু রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হবেন, এমন ব্যবস্থা ছিল সংবিধানে। কিন্তু বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিজেদের হাতের মুঠোয় রাখার জন্য অন্য সাংবিধানিক ধাপগুলো যথাযথ অনুসরণ না করেই তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণে প্ররোচিত করে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গৃহপালিত, বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক জিয়ারগৃহভৃত্যতুল্য . ইয়াজউদ্দিন বিএনপির নির্দেশে নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধী দল তাকেপর্যবেক্ষণকরার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে . ইয়াজউদ্দিন আসলে সীমাহীন অযোগ্যতার পরিচয় দেন। হাওয়া ভবনের সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই করতেন না মি. ইয়েসউদ্দিন। বিএনপি যেভাবে সাজানো একটি নির্বাচন চেয়েছিল, তেমনি একটি পাতানো নির্বাচনের পথে হাঁটতে থাকেন . ইয়েসউদ্দিন ওরফে ইয়াজউদ্দিন। কিন্তু ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি সেই নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হয়নি। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি এক সংকটময় পরিস্থিতিতে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। এক-এগারোর সরকার ক্ষমতা দখল করে। তীব্র গোলযোগ, রাজনৈতিক সহিংসতায় অতিষ্ঠ জনগণ সেনাসমর্থিত . ফখরুদ্দীনের সরকারকে স্বাগত জানায়। সবাই আশা করেছিল, এক-এগারো সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করবে। কিন্তু গণতন্ত্রকামী মানুষের ভুল ভাঙতে সময় লাগেনি। দ্রুতই সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে, এক-এগারো আসলে একটি ক্যু। আর অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছিল সুশীল সমাজের একটি অংশ এবং তাদের বিদেশি প্রভুরা। এক-এগারো ছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার নিপুণ বাস্তবায়ন। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা তাদের পছন্দের একটি সুশীল শাসনব্যবস্থা দেশে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। . ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে এক-এগারো সরকারের প্রধান এজেন্ডা ছিল বিরাজনীতিকরণ। যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল তাদের অনুগত রাজনীতিমুক্ত একটি সরকার। জন্য রাজনীতিবিদদের চরিত্র হননের মিশনে তারা নেতৃত্ব দিয়েছিল। . ফখরুদ্দীনের সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই শুরু হয় ধরপাকড়। ঢালাওভাবে রাজনীতিবিদদের গ্রেপ্তার করা হতে থাকে। নির্বিচারে চলে তাদের চরিত্র হনন। দেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করে শুরু হয় গোয়েবলসীয় মিথ্যাচার। অচিরেই মইন আহমেদ এবং . ফখরুদ্দীন আহমদ বুঝতে পারেন দীর্ঘমেয়াদি সুশীল সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা শেখ হাসিনা। এক-এগারোর সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি দ্রুত নির্বাচনের দাবি করতে থাকেন। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। এটি সুশীল সরকারের পছন্দ হয়নি। জন্য তারা শেখ হাসিনাকেই মাইনাস করার উদ্যোগ শুরু করে। আওয়ামী লীগ সভাপতি তার কন্যাকে দেখার জন্য ১৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা সফরে যান। তার বিদেশ সফরকালে . ফখরুদ্দীন সরকার এক নজিরবিহীন ন্যক্কারজনক সিদ্ধান্ত নেয়। শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়েই বঙ্গবন্ধুকন্যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে লন্ডনে আসেন। ২৩ এপ্রিল তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত জানান। দেশে ফেরার জন্য হিথ্রো বিমানবন্দরে যান। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে তাকে বোডিং পাস দিতে অস্বীকৃতি জানায় সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস। শেখ হাসিনা এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। অন্যায় করিনি। সরকার যদি আমার বিচার করতে চায় তাহলে দেশে নিয়ে বিচার করুক। কিন্তু দেশে যেতে দেওয়া হবে না, এটা অসাংবিধানিক। মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন।

দেশ-বিদেশে তৎকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত ব্যাপক সমালোচিত হয়। অবশেষে পিছু হটে সুশীল সরকার। তারা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। বীরদর্পে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। তখনই তিনি জানতেন, সুশীলরা তাকে ছাড়বে না। গ্রেপ্তার, কিংবা হত্যার আশঙ্কাকে উপেক্ষা করেই দেশে ফেরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সময় বিরাজনীতিকরণ ফর্মুলার বাস্তবায়নকারী সুশীল নিয়ন্ত্রিত এক-এগারো সরকারও বুঝতে পারে, তাদের লক্ষ্য অর্জনের প্রধান বাধা শেখ হাসিনা। জন্য তারা নতুন করে তাদের পরিকল্পনা সাজায়। বানোয়াট, উদ্ভট এবং অবাস্তব চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার করে শেখ হাসিনাকে। ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের প্রধান লক্ষ্য ছিল তাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করা। কারণ শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে পারলেই দীর্ঘমেয়াদি সুশীল শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। জন্য ওই সরকার শুধু শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করেই ক্ষান্ত হয়নি, আওয়ামী লীগেও বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করে। দলের শীর্ষ এবং গুরুত্বপূর্ণ চার নেতা প্রায় অভিন্ন সুরেসংস্কার প্রস্তাবউত্থাপন করেন। যার মূল বক্তব্য ছিল, শেখ হাসিনা আর আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকতে পারবেন না। কিন্তু তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বিপুল প্রতিরোধে আওয়ামী লীগের সংস্কারপন্থিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। দলে তারাখলনায়কেপরিণত হন। তৃণমূলের ভালোবাসা সমর্থনে, নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শিতায় সেদিন শেখ হাসিনা প্রতিকূলতাকে জয় করেছিলেন। মাইনাস ফর্মুলা বাস্তবায়িত হয়নি, বরং অনির্বাচিত সরকার একটি নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অভূতপূর্ব বিজয়ের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০০৭ সালে যে মাইনাস ফর্মুলাকে পরাস্ত করেছিলেন শেখ হাসিনা, সেই ফর্মুলা আবার নতুন করে সামনে এসেছে। গত ১২ জুলাই বিএনপিসহ কিছু সাইনবোর্ডসর্বস্ব দলএক দফাঘোষণা করেছে। সমাবেশ করে তারা বলেছে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। একটি রাজনৈতিক দল কতটা দেউলিয়া হলে ধরনের রাজনৈতিক দাবি উত্থাপন করতে পারে! বিএনপি যদি বলত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে না, তাহলে এর একটি মর্মার্থ থাকত। রাজনৈতিক দর্শন থাকত। কিন্তু ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতার এক প্রকাশ্য দলিল। বিএনপি আগে বলছিল নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সংসদে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখন তারা বলছে, সবার আগে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। তার মানে কী? বিএনপি কি একটি অসাংবিধানিক সরকার গঠন করতে চায়। আরেকটি এক-এগারো আনতে চায়। বিএনপি এমন এক সময়ে একদফা ঘোষণা করে, যখন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল ঢাকা অবস্থান করেছিল। ১১ জুলাই ঢাকায় আসেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। আর জুলাই থেকে ১৫ দিনের সফরে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। তাদের উপস্থিতিতে একদফা ঘোষণা করে বিএনপি কী বার্তা দিল? তারা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিল যে, সুশীল সমাজ আবিষ্কৃত এবং যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশীর্বাদপুষ্টমাইনাস ফর্মুলাবিএনপি সমর্থন করে। বিএনপিরএকদফাআসলে এক-এগারোর মাইনাস ফর্মুলারই পুনরুচ্চারণ। ২০০৬ সালে মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান . মুহাম্মদ ইউনূস। মূলত . ইউনূসের নেতৃত্বে একটি সুশীল সরকার ক্ষমতায় বসানোর জন্য তখন থেকেই প্রক্রিয়া শুরু করেছিল পশ্চিমা দেশগুলো। . ইউনূসকে দিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সেই সময়। কিন্তু সেই উদ্যোগ সফল হয়নি। এরপর সংলাপ-সংলাপ খেলার আড়ালে দুই দলকে অনড় এবং সহিংসতায় উসকে দেয় পশ্চিমারা। তাদের নিপুণ পরিকল্পনায় এক-এগারো সরকার ক্ষমতায় আসে। দুই বছরের চেষ্টায় তারা সুশীল রাজত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়। কিন্তু মাইনাস ফর্মুলা এবং বিরাজনীতিকরণের মডেল থেকে সুশীল এবং পশ্চিমারা সরে আসেনি। জন্য মৃত প্রায় বিএনপিকে জাগিয়ে তুলতে সব চেষ্টা করছে তারা। বিএনপিকে মাঠে নামিয়ে দেশে একটি অস্থির এবং সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে সৃষ্টি করা হচ্ছে অনিশ্চয়তা। আবার একটি সংলাপ নাটক মঞ্চায়নের চেষ্টা চলছে। ২০০৬ সালের মতোই কূটনৈতিকপাড়া সরব। বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের ঘুম হারাম। কিন্তু ২০০৭ সালের এক-এগারোর অভিজ্ঞতা থেকে সুশীল, পশ্চিমারা ভালো করেই জানে শেখ হাসিনাই তাদের লক্ষ্য অর্জনের একমাত্র বাধা। সে জন্যই বিএনপিকে দিয়ে কি এক দফা ঘোষণা করা হলো? বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখেশুনে আমার মনে হয়, বিএনপি আসলে পুতুল নাচের পুতুল। পশ্চিমা দেশগুলো তাদের আদর-আপ্যায়ন করছে আসলে একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আনতে। আর প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যে জড়িত, তা একটু খোঁজখবর নিলেই জানা যায়। আবার সেই মাইনাস ফর্মুলা। এবারও লড়াইটা শেখ হাসিনার একার। ঘরে বাইরে বিশ্বাসঘাতক এবং ষড়যন্ত্রকারী। শেখ হাসিনা কি পারবেন আবারও জয়ী হতে?

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

poriprekkhit@yahoo.com



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭