ব্লকচেইন প্রযুক্তি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার তাগিদ

ব্লকচেইন প্রযুক্তি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার তাগিদ দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন। তিনি বলেছেন,‘ব্লক চেইন সম্পর্কে অনেকেই অপরিচিত। তাই এই প্রযুক্তি সবার সামনে তুলে ধরতে হবে এবং এটি কিভাবে কাজ করে-তা সবাইকে জানাতে হবে।’

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব বলেন, ‘আমরা যদি ডাটা সিকিউরিটি নিয়ে চিন্তা করি, তাহলে ব্লক চেইন এই ডাটা সিকিউরিটি হতে পারে।’

আগামী ২৩ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে ‘ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ ২০২৩’। ‘ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ ২০২৩’- এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ কম্পিটার কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সময়ে ডাটা জালিয়াতি, প্রতারণা ও হ্যাকারদের মোকাবেলায় ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এই অলিম্পিয়াড ব্লকচেইন ব্যবহার সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে চতুর্থবারের মতো আয়োজিত হতে যাচ্ছে এই প্রতিযোগিতা। তিন দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতা শেষ হবে ২৫ জুলাই। সমাপনী দিনে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে পুরস্কার বিতরণীর মধ্যে দিয়ে প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। উক্ত অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। 

সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার, ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের সমন্বয়ক হাবীবুল্লাহ এন করিম।

স্বাগত বক্তব্যে সমন্বয়ক হাবীবুল্লাহ এন করিম বলেন, ২০২০ সালে বাংলাদেশে প্রথম ব্লক চেইন অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হয়। এই প্রযুক্তি আয়োজনের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ব্লক চেইন অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হয়। শুরুর দিকে ব্লক চেইন প্রযুক্তির ডেভেলপারের সংখ্যা বাংলাদেশে কম থাকলেও এখন তা ১ হাজারেরও উপরে। এই প্রযুক্তির ব্যাপারে অনেকেই আগ্রহী। 

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধন বিভাগের লাখো মানুষের তথ্য ফাঁস হওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ব্লক চেইন প্রযুক্তি তথ্যকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সংরক্ষণ করে। তাই এই পদ্ধতিতে তথ্য ফাঁস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে এই পদ্ধতিতে তথ্য ভুল হলে- তা সংশোধনের কোনো উপায় নেই, সেক্ষেত্রে সংশোধীত তথ্য নতুন করে আবার সংরক্ষণ করতে হবে এবং পুরোনো ভুল তথ্যটিও থেকে যাবে। এই প্রযুক্তিতে ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।          

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এবারের প্রতিযোগিতায় ১১৮টি দল নিবন্ধন করে, যাদের মধ্যে থেকে ৪০টি দলকে চূড়ান্ত পর্বে মনোনীত করা হয়। এদের মধ্যে থেকে  ‘হোয়াইটপেপার’ মুল্যায়নের মাধ্যমে চারটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। স্টুডেন্ট ক্যাটাগরিতে বিজয়ী এই চারটি দলের মধ্যে প্রথম পুরস্কার হিসেবে পাবে ‘প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী’ চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার, দ্বিতীয় পুরস্কার রানার্স আপ, চতুর্থ পুরস্কার ব্রোঞ্জ এবং চতুর্থ পুরস্কার ‘বেস্ট প্রোটোটাইপ’। চ্যাম্পিয়ন, রানার্স আপ এবং ব্রোঞ্জ পুরস্কার হিসেবে থাকছে যথাক্রমে ২ লাখ, ১ লাখ এবং ৫০ হাজার টাকা নগদ অর্থ পুরস্কার। আর প্রফেশনাল ক্যাটাগরিতে নগদ ৫ লাখ টাকা পুরস্কার জেতারও সুযোগ থাকছে এই প্রতিযোগিতায়।

এছাড়াও তিন দিনের এই আয়োজনে অনলাইনে চারটি সেমিনারের আয়োজন করা হবে যেখানে দেশি বিদেশি বক্তারা অংশ নেবেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার বলেন, ব্লক চেইন একটি অ্যাডভান্স প্রযুক্তি। এটি নতুন প্রজন্মের মাধ্যমে আরও বেশি বেশি প্রয়োগ করতে হবে এবং এই প্রযুক্তিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।  

ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে সমাপনী বক্তব্য রাখেন। সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, খুব ভালো কাজ, খুব বেশি মানুষে করে না। ব্লক চেইন একটি নতুন প্রযুক্তি। এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন। বাংলাদেশের তরুণ ছেলে-মেয়েদের এ বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।   

ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই প্রতিযোগিতার আয়োজনে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে টেকনহেভেন কোম্পানি লিমিটেড, আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বেসিস। পার্টনার প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, আইএফসি, বিকাশ, জনতা ব্যাংক, এবং রুপালি ব্যাংক।