ইনসাইড বাংলাদেশ

মানবাধিকার কর্মী গবেষণা: উদ্ভট, পক্ষপাতপূর্ণ এবং দুরভিসন্ধিমূলক


প্রকাশ: 23/07/2023


Thumbnail

মানবাধিকার কর্মীদের মতামত ভিত্তিক এক উদ্ভট গবেষণায় করা হয়েছে নজীর বিহীন জালিয়াতি। নির্বাচনের আগে মনগড়া একপেশে এই তথাকথিত গবেষণাকে দুরভিসন্ধিমূলক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গবেষণায় ন্যূনতম নিয়মনীতি অনুসরণ না করে কিছু মনগড়া তথ্য উপাত্ত দিয়ে একটি রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান সিজিএস।

শনিবার (২২ জুলাই) সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) ‘প্রতিবাদীদের কে রক্ষা করবে, বাংলাদেশে মানবাধিকার কর্মীদের দুর্দশা’ শিরোনামে কথিত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দেশের ৩৬টি জেলার তৃণমূল পর্যায়ের ৫০ জন মানবাধিকারকর্মীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

প্রতিবেদনটিতে সিজিএস বেশকিছু গুরুতর তথ্য প্রকাশ করে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মানবাধিকারকর্মীদের কাজে ৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে বাধা এসেছে রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও ক্ষমতাসীন দল থেকে। এর মধ্যে ৪১ শতাংশ ক্ষেত্রে কাজে বাধা দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তারা। নানা ধরনের বাধা ও হুমকির মুখে প্রতি ১০ জন মানবাধিকারকর্মীর ১ জনকে এলাকা ছাড়তে হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, হুমকি, হয়রানি, ভয়ভীতি ও নিপীড়নের মতো প্রতিবন্ধকতায় মানবাধিকারকর্মীদের কর্মক্ষেত্র সীমিত হয়ে আসছে। প্রভাব পড়েছে তাদের জীবনে। কিন্তু সিজিএস-এর প্রতিবেদনটিকে মনগড়া, ভিত্তিহীন এবং তাৎপর্যহীন বলছে বিশেষজ্ঞ মহল। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী মানবাধিকার কর্মীদের অভিজ্ঞতা ও সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। মাত্র ৫০ জন মানবাধিকার কর্মীর সাক্ষাৎকার দিয়ে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সঠিক চিত্র কখনোই ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। মূলত তিনটি কারণে এই প্রতিবেদনকে একপাক্ষিক এবং ভিত্তিহীন বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রথমত, বাংলাদেশে কর্মরত মানবাধিকার কর্মীদের গোঁড়া অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে, দেশের বেশীরভাগ মানবাধিকার কর্মীরা রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত এবং বিরোধী দলের লোকজনরা, বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল ব্যক্তিরাই মানবাধিকার কর্মী হিসেবে কাজ করে থাকে। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলেরই তৃণমূলের কর্মীরা রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সাথে নানাভাবে সম্পৃক্ত এবং তাদের একটি রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। এ রকম বাস্তবতায় প্রশ্ন থেকেই যাই যে, ৩৬ টি জেলার যে ৫০ জন মানবাধিকার কর্মীর সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে তারা আসলে কারা এবং তাদের রাজনৈতিক পরিচয় কি? যদি ৩৬ টি জেলার ৫০ জন সরকারপন্থী মানবাধিকার কর্মীর সাক্ষাৎকার নিলে অবশ্যই ভিন্ন তথ্য উঠে আসত। এই প্রতিবেদনে যে সকল তথ্য উঠে এসেছে তাতে নিশ্চিত বোঝা যায় যে শুধু সরকার বিরোধী মানবাধিকার কর্মীদের থেকে তথ্য নিয়েই সিজিএস এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। কোন পদ্ধতিতে এই ৫০ জন মানবাধিকার কর্মীদের বাছাই করা হয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ নেই। তাই এই প্রতিবেদনটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দুরভিসন্ধিমূলক বলেই মনে করা হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, যারা এ ধরণের মানবাধিকার কর্মী হিসেবে কাজ করে তারা মানবাধিকার কর্মী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি অন্য কাজও করেন। মানবাধিকার কর্মী হিসেবে কাজ করাই তাদের মূল কাজ নয়। বাংলাদেশের মানবাধিকার চর্চাকে একটি নাগরিক বিষয় বলা যায়। কিছু সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাই এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলে থাকে। মাঠ পর্যায়ে সাধারণত এ ধরনের মানবাধিকার সংক্রান্ত তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না। বিভিন্ন জায়গায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে আমরা দেখা যায় যে, ঢাকা থেকেই মূলত তৎপরতা শুরু হয় তারপর সেটি তৃণমূলে পৌঁছায়। কাজেই আমাদের দেশের মানবাধিকার কর্মীদের তৃণমূল বিস্তৃতি এত গভীর নয় যে, তারা যেকোন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদারকি করবেন এবং সেটির প্রতিবাদ করবেন।

তৃতীয়ত, এই প্রতিবেদনটির গবেষক দলের প্রধান ডা. আলী রিয়াজ নিজেই দেশে থাকেন না। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আরেকটি বিষয় যেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল প্রত্যেকটি দেশের মানবাধিকার সংরক্ষণ, মানবাধিকার হনন এবং মানবাধিকার চর্চার একটি নিজস্ব ধরন রয়েছে। বাংলাদেশে সেই মানবাধিকার চর্চার পথ খুবই সরু। বিভিন্ন সময় যখন কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি কোন দুর্নীতি কিংবা অপরাধের সাথে যুক্ত হয় তখন সেটিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মোড়কে পরিবেশন করা হয়। তাই আলী রিয়াজদের সুদূর প্রবাস থেকে এসে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনাকে দিয়ে পুরো মানবাধিকার পরিস্থিতির বিচারক হিসেবে আবির্ভুত হওয়াকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।

বিগত ১৪ বছরে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অকল্পনীয় পরিবর্তন ঘটেছে এবং এটিও সত্য যে আরও ভাল করার সুযোগ রয়েছে। তবে গবেষণা প্রতিবেদনের নামে এ ধরণের একপাক্ষিক এবং ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিসংগত নয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭