ইনসাইড বাংলাদেশ

বর্ষায় অপরূপ চলনবিল


প্রকাশ: 24/07/2023


Thumbnail

বর্ষাকাল আসলে মন ছুটে যায় চলনবিলের পানে। এ মৌসুমে চলনবিলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকন না করলে যেন এক অতৃপ্ততাকাজ করে। চলনবিলের অথৈ জলে ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার দৃশ্য, দ্বীপের মতো জেগে থাকা ছোট্ট ছোট্ট গ্রাম, নৌকায় ভেসে ভেসে জেলেদের মাছ আহরণ, নৌকাযোগে পর্যটকদের ছুটে চলা ও মাছ-পাখিদের মিতালী দেখতে চলনবিলে ছুটে যায় হাজারো মানুষ।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিলের নাম চলনবিল। ৩টি জেলাজুড়ে এর বিস্তৃতি। নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার অংশ জুড়ে যে জলভূমি, বর্ষা এবং বর্ষাপরবর্তী সময়ে দেখা যায় সেটাই বিখ্যাত চলনবিল।

শুকনো মৌসুমে এসব বিলে জল থাকে না। তখন চাষাবাদ চলে বিলের জমিনে। তবে বর্ষায় কানায় কানায় পানিতে পূর্ণ হয়ে রূপের পসরা সাজিয়ে বসে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলনবিল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

ব্রহ্মপুত্র নদ যখন তার প্রবাহপথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনায় রূপ নেয়, সে সময়েই চলনবিলের সৃষ্টি। গঠিত হওয়ার সময় চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১ হাজার ৮৮ বর্গ কিলোমিটার।

বর্তমানে এর আয়তন অনেক কমে এসেছে। আসলে চলনবিল অনেকগুলো ছোট ছোট বিলের সমষ্টি। বর্ষায় এই বিলগুলোতে জলপ্রবাহ বেড়ে এরা একসঙ্গে বিশাল এক অখণ্ড বিলের রূপ নেয়। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ, পাবনা জেলার চাটমোহর এবং নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলাজুড়ে এ বিলের বিস্তৃতি। বর্ষাকালে প্রকৃতির অপরূপ রূপে সাজে এ বিল। চারিদিকে শুধু পানি থৈ-থৈ করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় করে চলনবিলে। এই ভরা বর্ষা মৌসুমেও সেটাই ঘটছে। এ মুহূর্তে দিগন্তপ্রসারি টলমল জলে এক নয়নমনোহর রূপে, এক অপরূপ সাজে সেজেছে চলনবিল।

মাঝে মাঝে বিদেশি পর্যটকদেরও দেখা মেলে এ-অঞ্চলে। তবে কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ। বর্ষাকালে ভ্রমণপিপাসুরা আনন্দ মেতে উঠলেও এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের পোহাতে হয় নানা বেদনা-দুর্ভোগ। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্কুল, বাজার ডুবে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় বানভাসিদের।

চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী বা কর্মব্যস্ত মানুষদের একঘেঁয়মি কাটাতে প্রয়োজন আনন্দভ্রমণ। সারাদেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রের মতোই একটি স্থান চলনবিল। সাপ্তাহিক ছুটির দিন অর্থাৎ শুক্রবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ অঞ্চলে ছুটে আসেন হাজার হাজার মানুষ।

প্রতিদিনই ভিড় জমে এ বিলে। মোটর সাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এমনকি রিকশায় চড়ে হাজারো মানুষকে আসতে দেখা যায় চলনবিল এলাকায়। শুক্রবার বিকেল হলেই বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তারা, চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা চলে আসেন আনন্দ উপভোগের জন্য। শ্যালো নৌকা, বৈঠা-নৌকা, পালতোলা নৌকায় ঘুরতে দেখা যায় ভ্রমণপিপাসুদের।

নাটোর বা বগুড়া থেকে সড়কপথে সিংড়া আসতে হবে। সিংড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোরিক্সা বা ভ্যান যোগে পূর্ব দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ গেলে দশ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত ভ্রমণের স্থান চলনবিল। সেখান থেকে শ্যালো নৌকা, বৈঠা-নৌকা, পালতোলা নৌকায় ঘুরতে পারেন আপনার পছন্দের চলনবিলে। সিংড়া শহরে পাবেন খাওয়ার জন্য হোটেল ও রেস্তোরাঁ। তবে সিংড়ায় কোনো আবাসিক হোটেল না থাকায় নাটোর বা বগুড়ায় পাবেন রাত্রি যাপনের জন্য আবাসিক হোটেল। 

যারা সাঁতার জানেন না, তারা চলনবিলে ভ্রমণে গেলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নেবেন। নৌকায় ভ্রমণকালে হৈ চৈ, লাফালাফি করবেন না। এতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। ঝড়ো বাতাস উঠলে চলনবিলের পানিতে বিশাল বিশাল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭