ইনসাইড পলিটিক্স

তারেক এবং বিএনপির অর্থের উৎস কি


প্রকাশ: 24/07/2023


Thumbnail

গত বছর ২৮ জুলাই সর্বশেষ দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দিয়েছে বিএনপি। হিসাবে দেখানো হয়েছে, ২০২১ সালে দলটির আয় হয়েছে ৮৪ লাখ ১২ হাজার ৪৪৪ টাকা। কমিটির সদস্যদের মাসিক চাঁদা, মনোনয়ন ফরম বিক্রি, ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদান ও এফডিআর থেকে এ টাকা আয় হয়েছে। একই সময়ে দলটির ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৪৭ হাজার ১৭১ টাকা। কর্মচারীদের বেতন-বোনাস, ক্রোড়পত্র বিল, অফিস খরচসহ বিভিন্ন খাতে এ টাকা ব্যয় হয়েছে। 

হিসাব অনুযায়ী, বিএনপি আয়ের চেয়ে ১ কোটি ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৭২৭ টাকা বেশি ব্যয় করেছে। অর্থাৎ হিসাব অনুযায়ী দলটি অর্থ সংকটে রয়েছে। অথচ সেই দলটিই এখন একেকটি কর্মসূচির পিছনে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে। দলটি সারাদেশে পদযাত্রা সহ কিছুদিন আগেও তারুণ্যের সমাবেশ করেছে। এ সমস্ত সমাবেশের পিছনে দল থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। আগামী ২৭ জুলাই রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় প্রধান কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের ঘোষণা করেছে বিএনপি। ওই সমাবেশে সারাদেশ থেকে লোক এনে ঢাকায় সমাগম করা হবে বলে জানা গেছে। আর লোক সমাগম এর জন্য দলের পক্ষ থেকে আলাদা বরাদ্দও দেয়ার ঘোষণা করেছে দলটি। সমাবেশ করতে এবং ঢাকায় লোকের সমাগমের জন্য অর্থের নিশ্চিয়তা দেয়া হয়েছে দলের হাইকমান্ড থেকে। হঠাৎ করে দলীয় কর্মসূচির পিছনে এত অর্থ বরাদ্দ এবং ব্যয় নিয়ে গত কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন মহলে আলোচনার ডালপালা ছড়াচ্ছে। কোটি টাকা ঘাটতিতে থাকা দলটি এত টাকা কোত্থেকে পাচ্ছে? সে প্রশ্নটিও সামনে এসেছে।

দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, দলীয় কর্মসূচি নির্বিঘ্নভাবে করতে যে অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে তার সিংহ ভাগ অর্থ আসে লন্ডন থেকে। লন্ডন থেকে তারেক রহমান নিজেই এই অর্থের সংকুলান বলে দাবি ওই নেতার। কিন্তু আবার সেই একই প্রশ্ন একটু অন্যভাবে। লন্ডনে তারেক রহমানের এত টাকার উৎস আসলে কোত্থেকে? উপার্জন না করেও তারেক রহমান লন্ডন থেকে এত অর্থের সংকুলান করছেন কিভাবে? 

বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তারেক রহমানের অর্থের উৎস আসলে বাংলাদেশই। বাংলাদেশ থেকেই তারেক রহমানের কাছে অর্থ যায় এবং পরে আবার সেই অর্থ তারেক রহমান বিএনপির চলমান কর্মসূচির নিমিত্তে ব্যয় হয়। কিন্তু তারেক রহমানকে কে অর্থ দিচ্ছে সেটি আরেক প্রশ্ন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারেক রহমানের অর্থের উৎস বা অর্থের যোগান দাতা হলেন বাংলাদেশের একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। যারা নিয়মিতভাবে তারেক রহমানকে অর্থের সংকুলান করে থাকেন।

উল্লেখ্য যে, গত ১৫ জুলাই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের ‘বিজনেস কনফারেন্স অন বিল্ডিং স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সন্মেলনে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু সূত্র বলছে, এই ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠী যারা আসলে শেখ হাসিনার চাটুকারিতা করছেন আড়ালে আবার তারাই লন্ডনে তারেক রহমানকে অর্থের যোগান দিচ্ছে। তারাই অর্থের যোগান দিয়ে বিএনপির আন্দোলনকে আরও সঞ্চারিত করার পিছনে ভূমিকা রাখছে। ফলে ব্যবসায়ী ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

নাম প্রকাশে অইচ্ছুক একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, ব্যবসায়ীরা আসলে কোন সরকারের অনুগত থাকেন না। কারণ আদর্শিকভাবে তারা কোন রাজনীতি করেন না। তারা বুঝেন ব্যবসায়িক স্বার্থ। ব্যবসায়িকদের একটি বড় অংশ রাজনীতিতে আসেন আসলে ব্যবসায়িক স্বার্থকে কেন্দ্র করে। নানা রকম কৌশলে তারা প্রতিটি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেন। তারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা লাভের আশায় সরকারের সঙ্গে সম্পর্কে বজায় রাখে।

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি ২০০১ সালের নির্বাচনের পর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ব্যবসায়ীদের একটা সন্মেলন হয়। ওই সন্মেলনে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। কিন্তু দুসময়ে তারা কেউ পাশে দাঁড়াননি। 

এরপর ২০০৭ সালে নভেম্বরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বেটার বিজনেস ফোরাম গঠিত হয়। সে সময় অনেক ব্যবসায়ীরা বেটার বিজনেস ফোরামে যোগ দেয় এবং তারা ড. ফখরুদ্দীন আহমদের অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন জানান। ওই বেটার বিজনেস ফোরামে যারা যোগদান করেছিলেন তাদের কয়েকজন গত ১৫ জুলাই ব্যবসায়ীদের সন্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সামনে জ্বালাময়ী বক্তব্য রেখেছেন। এ হল ব্যবসায়ীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যি। যারা একই সাথে সব দিকে সম্পর্ক রেখে চলেন এবং সেটা করেন নিজের স্বার্থ সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে। এরাই এখন আবার গোপনে গোপনে তারেক রহমানকে অর্থের যোগান দিচ্ছেন। এটা সরকারেরও অজানা নয়। ফলে এ সমস্ত বিষয়ে সরকারকে এখনই নজর দিতে হবে। যদি বিএনপির অর্থের উৎস বন্ধ না করা হয় তাহলে বিএনপি যে আগামী নির্বাচন বানচাল এবং সংবিধানের ধারা ব্যাহত করতে যে পরিকল্পনা এটেছে তা আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সুতরাং ‘যখন যে তখন তার’ নীতিতে যারা ব্যবসা করছেন তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। এদেরকে নজরদারির মধ্যে আনলে দেশকে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ থেকে রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭