প্রকাশ: 25/07/2023
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের
সময় পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রকল্প হাতে নিয়েছিল তার নাম ছিল 'ম্যানহাটান
প্রজেক্ট'। সেই বোমা তৈরির প্রধান বিজ্ঞানী ছিলেন রবার্ট ওপেনহাইমার। তাকে নিয়ে হলিউডে
তৈরি একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে শুক্রবার। তাই এই বিজ্ঞানীকে নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন
করে আগ্রহ।
ওপেনহাইমারের
জন্ম নিউইয়র্কে ১৯০৪ সালে - জার্মানি থেকে অভিবাসী হয়ে আমেরিকায় আসা এক ইহুদি পরিবারে।
কাপড়ের ব্যবসা করে তারা বিত্তশালী হয়েছিলেন। বিলাসিতার মধ্যে বড় হয়েও ওপেনহাইমার ছিলেন খুবই বুদ্ধিমান
কিন্তু অত্যন্ত লাজুক।
ওপেনহাইমার
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন পড়েন, এর পর স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেন ইংল্যান্ডের
কেমব্রিজে। জার্মানিতে ১৯২৬
সালে গোয়েটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা ইনস্টিটিউটের পরিচালকের সাথে
দেখা করেন ওপেনহাইমার, আর তিনিই চিহ্নিত করেন যে ওপেনহাইমারের একজন তাত্ত্বিক হবার
প্রতিভা রয়েছে। তাকে এ ইনস্টিটিউটে
পড়তে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমেরিকায়
ফিরে ওপেনহাইমার অধ্যাপনা শুরু করেন প্রথম হার্ভার্ডে, পরে বার্কলেতে ক্যালিফোর্নিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ে ।
১৯৪২ সাল নাগাদ
এটা স্পষ্ট হয় যে পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব। এজন্য পরিকল্পনা তৈরি হতে থাকে তখন
থেকেই। প্রথম যখন বোমা তৈরির
প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী হিসেবে ওপেনহাইমারের নাম প্রস্তাব করা হয়, তখন বেশ কিছু
আপত্তি উঠেছিল। কিন্তু তার জ্ঞান এবং বিশ্বস্ততা ও উচ্চাভিলাষের কারণে ম্যানহাটান প্রকল্পের
সামরিক নেতা জেনারেল লেসলি গ্রোভস তাকে নেবার পক্ষেই মত দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের
নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের ইয়োর্নাদা দেল মুয়ের্তো মরুভূমি। সেদিন ১৬ই জুলাই ১৯৪৫ সালের
ভোরবেলা, সেখানে বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা হতে যাচ্ছে - যার সাংকেতিক
নাম ট্রিনিটি।
বিস্ফোরণস্থল
থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে একটি কন্ট্রোল বাংকারের ভেতরে কাউন্টডাউনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন
এ প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী ও পরিচালক রবার্ট ওপেনহাইমার। পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের আগে তিনি ঘুমিয়েছিলেন
মাত্র চার ঘণ্টা। একদিকে দুশ্চিন্তা, আরেক দিকে ধূমপানজনিত কাশি - তাকে জাগিয়ে রেখেছিল।
বিস্ফোরণের
কাউন্টডাউন শুরু হবার মুহূর্তে ওপেনহাইমারকে দেখছিলেন পাশে থাকা একজন সামরিক কর্মকর্তা।
বার্ড আর শেরউইন বর্ণনা করেন, সেই জেনারেলটি বলছিলেন "শেষ কয়েকটি সেকেণ্ডে ড.
ওপেনহাইমার যেন আরো উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ছিলেন, তার শ্বাস পড়ছিল না।"
তার পরই ঘটলো
সেই প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। তার ঔজ্জ্বল্য সূর্যকেও ম্লান করে দিল। একুশ কিলোটন টিএনটির
ক্ষমতাসম্পন্ন সেই বিস্ফোরণ ছিল তখন পর্যন্ত পৃথিবীর বৃহত্তম।
এর ফলে যে শকওয়েভ
বা বাতাসের ঝাপটা তৈরি হয়েছিল তা ১০০ মাইল দূর থেকেও অনুভব করা গিয়েছিল। প্রচণ্ড গর্জনে
মরুভূমি কেঁপে উঠলো, আকাশে পাকিয়ে উঠলো মাশরুম আকৃতির মেঘ।
ওপেনহাইমারের
মুখে এবার এক বিরাট স্বস্তি ফুটে উঠলো। হিরোশিমায়
সফলভাবে বোমা ফেলার পর সহকর্মীদের সামনে তিনি মুষ্টিবদ্ধ হাত ওপরে তুলে যে ভঙ্গী করেছিলেন
- তা ছিল বিজয়ী যোদ্ধার মতই।
ওপেনহাইমার
তার বাকি জীবনে একদিকে তার কাজ নিয়ে গর্ব, অন্যদিকে এর পরিণাম নিয়ে অপরাধবোধ - এই দুই
সমান্তরাল অনুভূতি নিয়েই বেঁচে ছিলেন।
তরুণ বয়স থেকেই অত্যধিক ধূমপান করতেন ওপেনহাইমার। একারণে তার কয়েক দফা যক্ষ্মা হয়। ১৯৬৭ সালে তিনি গলার ক্যান্সারে মারা যান।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭