উচ্চ আদালতে হেরে যাওয়ার দুদিনের মাথায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দানকরের ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৬০৮ টাকা পরিশোধ করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় কর অঞ্চল-১৪ এর ২৮৭ সার্কেলের উপ কর কমিশনারের দফরে এ দানকর পরিশোধ করা হয়।
সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে এই কর পরিশোধ করা হয়। কর পরিশোধের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি মো. রুহুল আমিন সরকার উপ-কর কমিশনার বরাবর একটি চিঠি লিখেন। চিঠিতে তিনি বকেয়া কর পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে রোববার (২৩ জুলাই) ড. ইউনূসের নামে প্রতিষ্ঠিত তিনিট ট্রাস্টে দানের বিপরীতে এনবিআরের আরোপিত দানকর বৈধ ঘোষণা করা রায়ের বিরুদ্ধে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লিভ টু আপিল খারিজ করেন সর্বোচ্চ আদালত। সেই সঙ্গে এনবিআরের পাওনা বাবদ ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৬০৮ টাকা টাকা দানকর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দিতে হবেই বলে রায় দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৪ সদস্যের আপিল বেঞ্চ।
গেলে ৩১ মে দানকর দাবি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলা খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ফলে ড. ইউনূসকে এনবিআরকে ১২ কোটি টাকা পরিশোধ করার আদেশ দেয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আবেদন করেন ড. ইউনূস। সেখানেও স্থগিত হয়নি রায়।
জানা যায়, ১৯৯০ সালের দানকর আইন অনুযায়ী ২০১১-২০১২ করবর্ষে মোট ৬১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দানের বিপরীতে ১২ কোটি ২৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা কর দাবি করে নোটিশ পাঠায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০১২-২০১৩ করবর্ষে আট কোটি ১৫ লাখ টাকা দানের বিপরীতে এক কোটি ৬০ লাখ ২১ হাজার টাকা দানকর দাবি করা হয়। আর ২০১৩-২০১৪ করবর্ষে সাত কোটি ৬৫ হাজার টাকা দানের বিপরীতে এক কোটি ৫০ লাখ ২১ হাজার টাকা কর দাবি করে নোটিশ দেয় এনবিআর। দানের বিপরীতে কর দাবি করে এনবিআরের এসব নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ড. ইউনূস। তার দাবি, আইন অনুযায়ী দানের বিপরীতে এনবিআর এ কর দাবি করতে পারে না। এরপর ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর তার আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। এরপর ২০১৫ সালে তিনি হাইকোর্টে তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলা করেন। মামলাগুলোর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে দানকর দাবির নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করে ২০১৫ সালে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে মৃত্যু ও পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ চিন্তা করে নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ট্রাস্টে যে টাকা দান করেছেন, সেই দানের বিপরীতে এনবিআরের আরোপ করা দানকর বৈধ ঘোষণা করে গত ৩১ মে রায় দেন হাইকোর্ট।