ইনসাইড বাংলাদেশ

কম্বোডিয়া মডেল: সরকারের জন্য স্বস্তি না শঙ্কা?


প্রকাশ: 25/07/2023


Thumbnail

গত ২৩ জুলাই রোববার কম্বোডিয়ায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সিপিপি টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, ৮৪ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। এ নির্বাচনে সিপিপি ছাড়া আরও ১৭টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে এবং হুন সেন এর নেতৃত্বে সিপিপি ১২৫টি আসনের মধ্যে ১২০টি আসনই দখল করে। এই নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল ক্যান্ডেললাইট পার্টি অংশগ্রহণ করেনি। গত মে মাসে তাদের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার প্রেক্ষিতে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা মনে করছে যে ক্যান্ডেললাই পার্টিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্যই তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে এবং এর ফলে কম্বোডিয়ায় গণতন্ত্র শঙ্কার মুখে পড়েছে। একদলীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

নির্বাচনের পরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কম্বোডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যারা ওই নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে বিভিন্ন ভাবে যুক্ত তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পাশাপাশি সেখানে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে ক্ষমতাসীন সিপিপি নেতা বলেছেন যে, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কম্বোডিয়াকে দমিয়ে রাখা যাবে না। তবে এই নির্বাচনের পরপরই চীন নতুন সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। চীন বলেছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে চীন এবং কম্বোডিয়ার সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে বলেও চীনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

কম্বোডিয়ার নিষেধাজ্ঞা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৭ সালেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৮ সালেও যুক্তরাষ্ট্র কম্বোডিয়ার বিভিন্ন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে এ সব নিষেধাজ্ঞাকে কখনোই আমলে নেননি ক্ষমতাসীন সিপিবি নেতা হুন সেন। আর তাই এই নিষেধাজ্ঞার ফলেও কম্বোডিয়ার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে কিনা এটি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

কম্বোডিয়ার এই নির্বাচন বাংলাদেশে আলোচিত হচ্ছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। কম্বোডিয়ায় যে মডেলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই একই মডেলে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে এক্ষেত্রে ক্যান্ডেললাই পার্টির মত বিএনপির নিবন্ধন বাতিল হয়নি। বিএনপি নিজেরাই নির্বাচন থেকে দূরে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এরকম বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অর্জিত না হলে বিএনপি যে নির্বাচনে যাবে না তা মোটামুটি নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে সরকার যে নির্বাচন থেকে দূরে থাকবে এমনটি নয়। বরং সরকারের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন করতে সরকার বদ্ধপরিকর। এ নির্বাচনে কে আসল না আসল সে বিষয়টি তারা দেখতে রাজি নয়। বরং নির্বাচন হতে হবে আইন এবং সংবিধান অনুযায়ী। এরকম বাস্তবতায় বাংলাদেশেও একটি কম্বোডিয়ার মডেলে নির্বাচন হতে যাচ্ছে কিনা তা নিয়েও কোনো কোনো মহল এর প্রশ্ন উঠেছে। এরকম নির্বাচন হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি করবে সেটি নিয়েও কথা হচ্ছে। 

বাংলাদেশে যদি বিএনপিকে ছাড়াই শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয় তাহলে কি বাংলাদেশের ওপরও কম্বোডিয়ার মতো একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে? এটি নিয়ে সরকারের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে কিনা তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা চলছে। তবে সরকারের একাধিক সূত্র বলছে যে, কম্বোডিয়ার ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করা অর্থহীন। কারণ কম্বোডিয়ায় একটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে নির্বাচন থেকেই একটি রাজনৈতিক দল দূরে সরে যাচ্ছে। কারণ তারা গণতন্ত্রকে এবং সংবিধানকে বানচাল করতে চায়। একটি অসাংবিধানিক ধারা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর কম্বোডিয়ার ঘটনার মতই যদি বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় সেটি সরকার মোকাবেলা করতে প্রস্তুত বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭