প্রকাশ: 26/07/2023
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো এই নিয়ে গলদঘর্ম হয়ে পড়েছে। বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসরেরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক মাঠের পানি ঘোলা করছে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা না থাকায় পানি ঘোলা করে অনির্বাচিত অগনতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর গভীর ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তাদের স্বপ্ন ক্রমেই ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে লবিষ্ট নিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধিদল এনেছিল সরকারকে চাপ দেওয়ার জন্য। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বিদেশিরা বিএনপির ইচ্ছাতে কোনো সাড়া দেয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে সেটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এমনকি কোন দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না এটাও তাদের মাথা ব্যাথা নয়। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন হতে হবে জনগণের অংশগ্রহণে অহিংস, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ।
গত ১৭ জুলাই ২০২৩
অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা-১৭
আসনের উপনির্বাচন। ঢাকার অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত এ
আসনটি। ঢাকা-১৭-তে
মোট ভোটার ৩ লাখের কিছু
বেশী। এই নির্বাচন অহিংস,
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছিল।
কিন্তু জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের চিত্র দৃশ্যমান হয় নাই। এই
উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র
৩৬ হাজার ৬৯১টি। অর্থাৎ এই নির্বাচনী এলাকায়
মোট ভোটারের মাত্র ১১ দশমিক ২৮
শতাংশ (১১.২৮%) ভোটার
ভোটে অংশ নিয়েছেন। অর্থাৎ
জনগণের /ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল না।
সারাদেশে
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিজস্ব ভোট ব্যাংকে ভোটের
সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য রয়েছে যা
শতকরা ৩৫, ৪০, ৪৫,
ইত্যাদি, অর্থাৎ ৩৫ থেকে ৪৫
শতাংশ। প্রাপ্ত তথ্যমতে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে ১৯৭৯ সালের সংসদ
নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সারা দেশে
গড় ২৯ শতাংশ ভোট
পেয়েছে। ২০০৮ এর নির্বাচনে
আওয়ামী লীগ প্রায় ৪২
শতাংশ ভোট পেয়েছিল। কাজেই
যে কোনো পরিস্থিতির নির্বাচনে
আওয়ামী লীগের প্রার্থী অনায়াসেই ৩০ থেকে ৪০
শতাংশ ভোট পাবে, এটাই
স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিত। কিন্তু
ঢাকা-১৭ আসনে মোট
ভোট পড়েছে ১১ শতাংশের কিছু
বেশি। অর্থাৎ এই নির্বাচনে আওয়ামী
লীগের নিজস্ব ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসে নাই বা
ভোটে অংশগ্রহণ করে নাই। এর
মূলকারণ কি? আওয়ামী লীগের
নেতাকর্মীরা নিজেদের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে পারল না
কেন?
বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগের নিজস্ব ভোট ব্যাংকে ভোটের
সংখ্যা যাই হোক, আমরা
একটা হিসাবে বড় ধরনের ভুল
করি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিজস্ব ভোট ব্যাংকের এই
বিপুল সংখ্যক ভোটাররা কিন্তু আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী নয়। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড,
মিছিল, মিটিংএ অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মী ও ভোটারদের মধ্যে
পার্থক্য রয়েছে। মনে রাখতে হবে,
সকল নেতা-কর্মীই ভোটার
কিন্তু সকল ভোটার নেতা-কর্মী নয়। বাংলাদেশ আওয়ামী
লীগের নেতা-কর্মী ও
সমর্থক সকলেরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর
অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে
। শেখ হাসিনা মনোনীত
প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য তারা
জীবন বাজি রেখে সাংগঠনিক
কাজ করেন। তবে এর ব্যত্যয়ও
রয়েছে। সম্প্রতিকালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করার পর
আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে পদবীধারী যে সকল সুবিধাবাদীরা
বিভিন্ন ইউনিটে আওয়ামীলীগের নেতা হয়েছেন,
এই স্বল্প সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতি তাদের আনুগত্য ও আস্থা সৃষ্টি
হয়েছে কি? বা তারা
কি নিঃস্বার্থভাবে শেখ হাসিনার উপর
অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা রেখে
সাংগঠনিক কাজ করেন? বা
তাদের নির্দেশে নিবেদিতপ্রাণ পোড় খাওয়া নেতা-কর্মীরা জীবন বাজি রাখেন
বা রাখবেন কি? এই প্রশ্নের
উত্তর দ্রুত খুঁজতে হবে।
যেকোন
নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা সবসময় নিজেরা ভোটকেন্দ্রে আসেন না,তাদের
ভোটকেন্দ্রে আনতে হয়। তারা
জাতীয় উন্নয়নের পাশাপাশি স্থানীয় উন্নয়ন, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি বিবেচনায় পছন্দের স্থানীয় প্রার্থী খুঁজেন। সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্থানীয় প্রার্থীর গুনাগুন বর্ননার সাথে সরকারের সফলতাসমূহ
সাধারণ ভোটারদের কাছে উপস্থাপন করে।
সরকারের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহ বুঝিয়ে তাদের ভোটকেন্দ্রে আসতে আগ্রহী করেন,
এতে করে ভোটার সংখা
বাড়ে।
মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের
অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব
উন্নয়ন-অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ সারা বিশ্বে আজ
উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত
হয়েছে। এই উন্নয়ন ও
সমৃদ্ধির ঝুঁড়ি নিয়ে আওয়ামীলীগ এর প্রকৃত নেতাকর্মীদের
সাধারণ ভোটারদের কাছে যেতে হবে,
তাদের মোটিভেট করতে হবে।
দ্বাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ
মোকাবেলায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নিজস্ব ভোট ব্যাংকের ভোটার
ও সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে সকল প্রকার
প্রচেষ্টা চালানোই হবে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের
অন্যতম প্রধান কাজ।
দৈনিক
আমাদের অর্থনীতি-র এডিটর ইনচার্জ
মাসুদা ভাট্টি লিখেছেন-, ‘শুধু কেন্দ্র থেকে
ঘোষিত কর্মসূচির জন্য অপেক্ষা না
করে দেশের সব স্তরে নিজেদের
সক্ষমতা নিয়েই জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে জনগণকে
এ কথাটিই বোঝানো যে, সরকার গত
১৫ বছর ধরে যেমন
দেশের পক্ষে, দেশের জন্য, মানুষের পক্ষে ও মানুষের জন্য
কাজ করছে আগামীতেও সেটিই
করবে। দোষত্রুটি যা আছে সেগুলো
স্বীকার করে মানুষের সামনে
ভবিষ্যৎ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিশ্রুতি
নিয়ে হাজির হওয়াটাই হবে মূল করণীয়।’
আর তাই, জনগণকে ভোটকেন্দ্রে
আনতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরই শেখ
হাসিনার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ঝুড়ি
নিয়ে জনগণের দুয়ারে যেতে হবে, তাহলে
নির্বাচন অংশগ্রহণমুলক, অহিংস, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে
এবং কুচক্রীদের সব চক্রান্ত ভন্ডুল
করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে
এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭