ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগের পাঁচ ভয়


প্রকাশ: 26/07/2023


Thumbnail

আগামী ২৭ জুলাই আবার বিএনপিকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। আওয়ামী লীগ বিএনপির সমাবেশের পাল্টা সমাবেশ হিসেবে শান্তি সমাবেশ ডেকেছে। যদিও আওয়ামী লীগ বলছে, এটি কোনো পাল্টা কর্মসূচি নয়, দেশের সংবিধান অক্ষুন্ন রাখা, শান্তি-শৃঙ্খলা অব্যাহত রাখার স্বার্থে আওয়ামী লীগ ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই কর্মসূচি পালন করছে। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলেছেন, তারা রাজপথে থাকতে চান এবং কোনোভাবেই যেন নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, সহিংসতা না হয়- সে ব্যাপারে নজর রাখতে চান। আওয়ামী লীগের এবারের কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য হলো- বিএনপিকে মাঠ দখল করতে না দেওয়া। সেই চেষ্টায় আওয়ামী লীগ কতটুকু সফল হবে- সেটাই দেখার বিষয়। তবে ২০১৩, ১৪-এর আন্দোলনে আওয়ামী লীগের কৌশল সফল হয়েছে। সেই সময় আওয়ামী লীগ ঢাকাকে বিএনপি’র আন্দোলন মুক্ত করার চেষ্টা করেছিল। এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবার বিএনপির প্রধান লক্ষ্য হল ঢাকা দখল করা। আর সে কারণেই আগামীকালের সমাবেশ আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, আগামীকালের সমাবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট এবং আন্দোলন একটি নতুন মেরুকরণে পৌঁছাবে এবং এর পরবর্তী সময়গুলোতে কি হয়, তার উপর নির্ভর করবে আগামী নির্বাচনের অনেক কিছু। তবে এবারে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে পাঁচটি আতংক বা ভয় কাজ করছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:- 

১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব: বিগত দুই বছর ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিরোধী একটি মনোভাব প্রকাশ্যে দেখাচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাদের টানাপোড়েনের বিষয়টি এখন আর গোপন নয়। সম্প্রতি গতকাল ইটালিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে আবারো স্পষ্ট করে কথা বলেছেন। এ নিয়ে টানা পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘তারা আমাদেরকে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে নামাতে চায়।’ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে, সেটি আওয়ামী লীগের জন্য উদ্বেগের। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত কি করে, সেটি নিয়ে তারা কিছুটা হলেও আতঙ্কে আছেন। 

২. দলের ভেতর বিশৃঙ্খলা: আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। দল কিছুতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না। দলের মধ্যে তৃণমূল পর্যন্ত বিভক্তি ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেখানে কিছু সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। 

৩. কর্মীদের রাজপথে নামার ক্ষেত্রে অনিহা: আওয়ামী লীগ একটি ত্যাগী দল। দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রামে অভিজ্ঞ দল। কিন্তু টানা প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার ফলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতার মধ্যে এখন একটি আয়েশি ভাব এসেছে। অনেক অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছেন- যারা আন্দোলন সংগ্রামে অভ্যস্ত নয়। এই সমস্ত নেতা-কর্মীদেরকে আন্দোলনের মাঠে কতটা পাওয়া যাবে- তা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ। 

৪. আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনের ভূমিকা: গত ১৪, ১৫ বছর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আওয়ামী লীগের পক্ষেই কাজ করেছে। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা, নতুন ভিসা নীতি ইত্যাদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কিছুটা হলেও চিন্তিত করেছে। তারা এখন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই দ্বিধান্বিত। আর এটির প্রভাব পড়েছে আন্দোলনের উপর। আগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আন্দোলনের নামে নাশকতা বা অপতৎপরতাকে দমন করতো। কিন্তু এখন সেক্ষেত্রে তারা কতটুকু কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে, সেটা নিয়ে কারো কারো সংশয় এবং সন্দেহ রয়েছে। 

৫. রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের একাকীত্ব: আওয়ামী লীগ সব সময় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল। ২০০৮ এর নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ মহাজোট গঠন করেছিল। ২০০১ এর নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর আওয়ামী লীগ ১৪ দল গঠন করেছিল। তাছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে, বিশেষ করে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সব সময় ছিল। কিন্তু ২০১৮ এর পর থেকে আওয়ামী মিত্রের সংখ্যা আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। ১৪ দল ততোটা সক্রিয় নয়। যদিও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। তারপরও ১৪ দল এখন আগের মতো তৎপর নয়। জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আওয়ামী লীগের সম্পর্কের মধুরতা আগের মত নেই। এ রকম অবস্থায় রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ অনেকটা একলা। 

এসব উদ্বেগ কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কতটুকু আন্দোলন মোকাবেলা করতে পারবে এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য একটি নির্বাচন করতে পারবে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭