ইনসাইড বাংলাদেশ

কূটনীতিকদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে সরকার


প্রকাশ: 28/07/2023


Thumbnail

বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে সরকার। ইতিমধ্যে হিরো আলমের হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিদাতা দেশগুলোকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদেরকে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। এর একদিন পর গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের রীতিমতো তুলো ধুনো করেছেন। তিনি বলেছেন, তারা আহাম্মকের মত কথা বলছেন। আর এই সমস্তের জন্যই তিনি গণমাধ্যমকে দায়ী করেছেন। গণমাধ্যমের কারণে তারা বাংলাদেশের ব্যাপারে ‘মাতবরি মারছে’ বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সমস্ত বক্তব্যগুলো কূটনীতিক শালীনতা বিবর্জিত এবং শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে কোন কোন কূটনীতিক মনে করছেন। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনীতিক ভাষায় কথা বললেও এর মধ্য দিয়ে সরকারের মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই উপনির্বাচনের শেষ প্রান্তে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমকে মারধর করে। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক খবরে পরিণত হয় এবং এ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউরোপের দেশ বিবৃতি প্রদান করে। তারা ঘটনার উদ্বেগ জানায় এবং নিন্দা জ্ঞাপন করে। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তির দাবি করে। এরপর থেকেই সরকার নড়েচড়ে বসেন। সরকারের দায়িত্বশীল মহল মনে করছেন যে, এটি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে এবং একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে নিয়ে যেভাবে কূটনীতিকরা হৈ চৈ তুলছেন তাতে তারা উদ্বিগ্ন। সামনের দিনগুলোতে হয়তো ছোটখাট ব্যাপারে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ হবে। যা একটি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। 

গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ প্রকাশ্য বিষয়ক। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতারাও বিভিন্ন সময় পিটার ডি হাসের বাসভবনে গিয়ে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করছেন, আপ্যায়িত হচ্ছেন। আর এইসব বাস্তবতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ অনেক বেড়ে গেছে। যদিও মাঝখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর মার্কিন বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আল-জাজিরার সাথে সাক্ষাৎকারে এবং একাধিক বক্তৃতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় না যে আমি ক্ষমতায় থাকি এ ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। এমনকি তিনি এ রকম ঘোষণাও দিয়েছিলেন যে, যারা বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে আমরাও তাদের পণ্য কিনবো না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই অবস্থানকে নমনীয় করেন আওয়ামী লীগের কিছু কিছু মহল যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করতে চান। তাদের পরামর্শেই প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন এ ব্যাপারে এক ধরনের নীরবতা অবলম্বন করেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইতালি সফরকালে প্রধানমন্ত্রী আবার এই বিষয় নিয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মনে করছে যে, সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছে অনেক হয়েছে। আর কূটনৈতিকদের বাড়াবাড়ি করতে দেওয়া যাবে না। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম যে ১২ দেশের কূটনীতিকদেরকে ডেকে হুঁশিয়ার করেছেন সেটি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। নির্বাচনের আগে কূটনীতিকরা যেন এ ধরনের বাড়াবাড়ি করতে না পারে, যে কোন রাষ্ট্রদূত যেকোনো রাজনীতিবিদের সাথে বৈঠক যেন করতে না পারে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যেন হস্তক্ষেপ করতে না পারে এই বিষয়গুলো এখন সরকার কঠোর নজরদারিতে আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর গতকালের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলছেন যে, আমরা ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী সবকিছু করব। কিছু কিছু কূটনৈতিক বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছেন। কেউ কেউ বাংলাদেশের রাজনীতির মধ্যে জড়িয়ে পড়ছেন। কাউকে কাউকে মনে হচ্ছে রাজনৈতিক দলের নেতা। এরকম পরিস্থিতি চলতে পারে না। আর এ কারণেই কূটনীতিকদের ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। সামনে নির্বাচনের আগে কূটনীতিকরা যেন শিষ্টাচার বহির্ভূত কোনো কথা প্রচার না করে সে ব্যাপারে সরকার নজরদারি যেমন বাড়বে তেমনি যারা এধরনের ঘটনা ঘটাবে তাদেরকে সতর্ক করা বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার কার্পণ্য করবে না। এরকম পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে সরকার দেশের কূটনীতিকদের লাগাম কীভাবে টেনে ধরেন সেটি দেখার বিষয়। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭