ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ


প্রকাশ: 30/07/2023


Thumbnail

গতকাল রাজধানীতে জ্বালাও-পোড়াও আর উৎকণ্ঠার মধ্যেও দেশবাসী রাজনীতিতে দেখেছে এক বিরাট চমকের খেলা। গতকাল রাজধানীর গাবতলীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় একটা পর্যায় আমানউল্লাহ আমান অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। আমানের অসুস্থতার কথা শুনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তার সহকারি একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান (লিকু)  খাবার ও ফল নিয়ে বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানকে দেখতে যান। এ সময় বিএনপি নেতাকে প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো এসব উপহার তুলে দেন তিনি। 

অন্যদিকে রাজধানীর ধোলাইখাল মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রাস্তায় পড়ে যান। ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে গাড়িতে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসে। সেখান ডিবি প্রধান তাকে দুপুরের খাবার দিয়ে অ্যাপায়িত করেন। এ দুটি ঘটনাই বিএনপিকে তোলপাড় করে তুলেছে। এ ধরনের ঘটনায় নেতাকর্মীরা হতবাক হয়েছেন এবং প্রশ্ন তুলেছেন যে, বিএনপির আরও অনেক নেতার সঙ্গে হয়তো সরকারের গোপন যোগাযোগ রয়েছে। এবারই প্রথম নয়, এর আগেও গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টন থেকে আমান থেকে গ্রেপ্তার করা হলে পরের দিনই তিনি জামিন পেয়েছিলেন। যেখানে একই দিনে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের জামিন হতে দুই তিন পর্যন্ত সময় লেগেছে। আর এর ফলে বিএনপির কর্মীরা মনে করছে, বিএনপি যে গত ১৬ বছর ধরে সরকার পতনের আন্দোলন করছে কিন্তু আন্দোলন বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে বা আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না তার একটি বড় কারণ হল দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকাদের জন্য। যাদের সঙ্গে সরকারের গোপন যোগাযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত খবর থেকে জানা গেছে যে, শুধু আমান এবং গয়েশ্বর চন্দ্র একা নন, আরও একাধিক বিএনপির নেতার সঙ্গে সরকারের গোপন যোগাযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে হলেন;

নজরুল ইসলাম খান: নজরুল ইসলাম খান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু দলের সংকটকালীন সময়ে এই সিনিয়র নেতার ভূমিকা রহস্যময়। প্রায় সময় দলীয় কর্মসূচিগুলোতে তিনি অনুপস্থিত থাকেন। এমনকি গতকাল বিএনপি যখন ঢাকার প্রবেশপথ গুলোতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিল সে সময় তিনি ছিলেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, নজরুল ইসলাম খান চিকিৎসা বাবদ বিভিন্ন সময় সরকারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। এছাড়াও তিনি এ সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। সুতরাং তিনি প্রকাশ্যে সরকারের বিরুদ্ধে যতই কথা বলুক না কেন তার সঙ্গে সরকারের একটা গোপন যোগাযোগ রয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন করলেও দলে তার অবস্থান প্রশ্নাতীত নয়। সরকারের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, অন্তত দুইবার মির্জা ফখরুল সরকারের কাছ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন।

মির্জা আব্বাস: এ সরকারের কাছ থেকে সুবিধাভোগী বিএনপি নেতাদের মধ্যে রয়েছে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা
আব্বাসও। মির্জা আব্বাসের সঙ্গেও সরকারের গোপন যোগাযোগের নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মির্জা আব্বাসের গাড়ি ব্যবসা এবং ঢাকা ব্যাংকের মালিকানার মধ্য দিয়ে সরকারের সঙ্গে তার বিশেষ যোগাযোগ রয়েছে। নজরুল ইসলাম খানের মত মির্জা আব্বাসকেও গতকাল বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির দৃশ্যপটে দেখা যায়নি বলে বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

মেজর হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ: মেজর হাফিজ উদ্দিনের সাথে সরকারের ঘনিষ্ট সম্পর্ক দীঘদিনের। এ সম্পর্কের কথা বিএনপিরও অজানা নয়। তিনি দলের একজন সিনিয়র নেতা হওয়া সত্ত্বেও দলের সংকটকালীন সময়ে বা দলীয় কর্মসূচিগুলোতে তাকে প্রায় অনুপস্থিত দেখা যায়। বিএনপিও এজন্য সবসময় তাতে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি থেকে দূরে রাখছে।

বিএনপির কর্মীরা বলছেন, এ রকম অনেক জনপ্রিয় নেতা আছেন যাদের সঙ্গে সরকারের গোপন সম্পর্ক এবং এক ধরনের সমঝোতা রয়েছে। এখন বিএনপির সরকাবিরোধী আন্দোলন যত তীব্র হবে এ সমস্ত নেতারা ততই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে এবং তারা সরকারকে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করতে পারে বলে কর্মীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭