ইনসাইড পলিটিক্স

চুপসে গেল বিএনপি?


প্রকাশ: 31/07/2023


Thumbnail

গত ২৯ জুলাই (শনিবার) ঢাকার প্রবেশ পথে বিএনপি ঘোষিত শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের যৌথ আক্রমণ-হামলা, নির্যাতন ও পাইকারি হারে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ রোববার সারাদেশে জনসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। তারই ধারাবাহিকতায় সোমববার (৩১ জুলাই) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এক জনসমাবেশের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্যরা। কিন্তু গত ২৮ জুলাই (শুক্রবার) বিএনপি মহাসমাবেশে যে জনতার ঢল নামিয়েছিল, ২৯ জুলাই (শনিবার) অবস্থান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দলটি ঠিক ততটাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

এর কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ২৯ জুলাই বিএনপির দু’জন নেতার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্যেই জনগণের মধ্যে আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ২৮ জুলাইয়ের পর বিএনপির লাগাতার কর্মসূচি থাকলেও এসব কর্মসূচিতে তেমন জনসম্পৃক্ততা দেখাতে পারছে না দলটি। বিএনপির ওই দুই নেতার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ফলে বিএনপির কর্মীদের মধ্যে নানা রকমের প্রশ্ন ও সন্দেহের ডালাপালা ছড়িয়েছে। এ কারণেই মূলত দলটি ধীরে ধীরে কর্মী শূণ্য হয়ে পড়ছে। তাই প্রশ্ন ওঠেছে, তবে কি চুপসে গেল বিএনপি?    

জানা গেছে, টানা কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে বিএনপির জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জনসমাবেশ শুরুর আগে বৃষ্টি শুরু হয়। এর মধ্যেও দলটির নেতাকর্মীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে জনসভায় এসেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে তারা জনসমাবেশ করেছেন। কিন্তু সমাবেশে আগত নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সেই ২৮ জুলাইয়ের উৎফুল্লভাব দেখা যায়নি। দলে দলে আসার সময় প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের মুখে সরকার বিরোধী স্লোগান থাকলেও স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়নি সমাবেশস্থল এবং আশেপাশের এলাকা। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন,সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ বিএনপির যে সমাবেশ হলো, সেখানে জনসাধারণের খুব একটি উপস্থিতি দেয়া যায়নি। গত ২৮ জুলাই নয়াপল্টনে আয়োজিত মহাসমাবেশে যে জনগণের উপস্থিতি বিএনপি দেখিয়েছিল, পরবর্তী টানা কর্মসূচির কোনো কর্মসূচি বা সমাবেশে সে ধরনের আর কোনো জনসম্পৃক্ততা বা জনসমাবেশ দেখাতে পারছে না বিএনপি। দুদিন আগেও বিএনপির মধ্যে উল্লাস যে ছিল, তা আজ থিতিয়ে পড়েছে। বিএনপির আজকের সোহরাওর্দী উদ্যানের সমাবেশ ছিল ম্লান, ম্রিয়মান।   

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি মুখে টানা আন্দোলন বা কর্মসূচির ঘোষণা দিলেও, এ ধরনের কোনো টানা আন্দোলন করার জন্য যে ধরনের কর্মী দরকার, যে ধরনের জনগণের সমর্থন দরকার সেটা বিএনপির নেই। গত কয়েকটি কর্মসূচি দিয়ে বিএনপির মধ্যে যে উৎসাহ, উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল, তা গত শনিবার (২৯ জুলাই) অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে ম্লান হয়ে গেছে। ফলে বিএনপির কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা দেখা দিয়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে এই আন্দোলনের কারণে অনেক কর্মীরা নতুন করে আবারও মামলায় পড়ছেন। কিন্তু দলটির বড় দুই নেতা সরকারের সাথে আঁতাত করে ঠিকই ফল-ফলাদি, পোলাও-কোরমা খাচ্ছেন।   

বিশ্লেষকরা বলছেন, গত শনিবার (২৯ জুলাই) বিএনপিকে আবার দেখা গেছে সেই পুরনো বৃত্তে। ২০১৩ সালে বিএনপি যে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি করেছিল, তারই পণরাবৃত্তি শনিবারের অবস্থান কর্মসূচিতে দেখা গেছে। ওই সময়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছিল এবং সেই মামলাগুলোর ফলে বিএনপির কর্মীরা পলাতক হলো, তারা হতাশ হয়ে গেল, আবার সেই একই ছকে বাধা পড়ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ২০১৪ সালেও ঘটেছিল সেই একই ঘটনা। বিএনপির অনেক ভুল রাজনীতি এবং হঠকারি সিদ্ধান্তের কারণে মাশুল দিতে হয় বিএনপির কর্মীদেরকে। মামলায় পরে অনেক কর্মীরাই ইতিমধ্যে পলাতক রয়েছে। এই মামলাজটে আবারও আটকে যাচ্ছে বিএনপির কর্মীরা।

তবে আজকের সমাবেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে জনগণের দাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্যথায় পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না।

কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, অসারের তর্জন গর্জনই সার। ইতিমধ্যেই সরকার হটানোর অনেক আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। আর ধরনের বক্তব্যতো হরহামেশা দিয়েই যাচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিএনপির এসব আন্দোলন সমাবেশে জনগণের সম্পৃক্ততা কতটা হচ্ছে, জনগণ কি চাইছে- সেটাই দেখার বিষয়।   



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭