ইনসাইড বাংলাদেশ

নির্বাচনে যেতে বিএনপিকে চাপ দিচ্ছে কূটনীতিকরা?


প্রকাশ: 05/08/2023


Thumbnail

এতদিন ধরে বিএনপি নেতারা কূটনীতিকদের ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। তারা বলেছেন, বিভিন্ন পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের অবস্থা দেখে বুঝতে পেরেছেন যে দেশে গণতন্ত্র নেই। পশ্চিমাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বিএনপি নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতারা বিদেশেও পালিয়ে যেতে পারবেন না। কিন্তু সেই বিএনপি নেতাদের মুখেই গতকাল অন্য কথা শোনা গেল। ভারত বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি বলল সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়—এমন মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সবাইকে একটু চমকে দিলেন। হঠাৎ করে তার সুর পাল্টালো কেন—এই প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল নয়াপল্টনে তারেক জিয়া এবং জোবাইদা রহমানকে দণ্ডিত করার রায়ের প্রতিবাদে সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন। গত কিছুদিন ধরেই কূটনীতিকদের সাথে বিএনপির টানাপোড়েন চলছিল। বিশেষ করে গত ২৯ জুলাই বিএনপির ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান ধর্মঘটের পর কূটনীতিকদের সাথে তাদের প্রকাশ্য দূরত্ব তৈরি হয় বলে জানা গেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এরপর কূটনৈতিকদের একটি পাঁচতারকা হোটেলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে কূটনীতিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যস্ত থাকেন বিএনপি নেতারা। কেউই সঠিকভাবে জবাব দিতে পারেননি। 

কূটনীতিকরা বলছেন, তারা অহিংস আন্দোলন চান। সন্ত্রাস জ্বালাও-পোড়াও ইত্যাদি চান না। যদিও বিএনপি নেতারা ওই বৈঠকে বলার চেষ্টা করেছেন যে সন্ত্রাস-সহিংসতা বিএনপি করেনি। বরং এটি আওয়ামী লীগের কারসাজি। কিন্তু বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে কূটনীতিকরা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন যে, এখানে বিএনপিরও দোষ রয়েছে। তবে সেটির চেয়েও বড় বিষয় যে কূটনীতিকরা এখন বিএনপিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া এবং নির্বাচনে যাওয়ার জন্য রীতিমতো চাপ দিচ্ছেন। কূটনীতিকরা মনে করেন জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে ছক এঁকেছে সেই ছকে নির্বাচনে কারচুপি করার কোনো সুযোগ থাকবে না। আর নির্বাচনে কারচুপি করলেও সরকারকে কঠোর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। এই অবস্থায় বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জন করে তাহলে সেটি গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতি হবে।পশ্চিমা কূটনীতিকরা মনে করছেন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার নেই। বরং নির্বাচন কাঠামোতে সর্তকতা অবলম্বন করা, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখা এবং আন্তর্জাতিক নজরদারি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে। 

সম্প্রতি কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে বিএনপিকে বলা হয়েছে বর্তমান সরকার কাঠামোর মধ্যে কি কি দাবি পূরণ হলে তারা নির্বাচনে যাবে তার একটি তালিকা প্রণয়ন করার জন্য। কূটনীতিকরা বলছেন, এ নিয়ে তারা ক্ষমতাসীন দল এবং সরকারের সাথে কথা বলবে যেন তাদের দাবিগুলো পূরণ করা হয়। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সব দাবি অযৌক্তিক অর্থহীন হয়ে যাবে যদি না নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অর্জিত না হয়। কিন্তু কোন দেশই সংবিধান সংশোধন করার পরামর্শ সরকারকে দিতে পারেনা। একটি দেশের নির্বাচন কিভাবে হবে সেটি দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়। নির্বাচনের যদি কোনো কারচুপি হয়, পক্ষপাত হয় বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা হয় তাহলে কূটনীতিকরা সে ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। কিন্তু তার আগে নির্বাচনের জন্য একটি সংবিধান পরিবর্তন করা বা অন্য রকম পরামর্শ দেওয়া সম্ভব নয় বলে কূটনীতিকরা বিএনপিকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। বরং বিএনপিকে এখন নির্বাচনমুখি হওয়ার জন্য কূটনীতিকরা চাপ প্রয়োগ করছেন। তারা বলছেন যে, নির্বাচনে যাওয়ার পর যদি কোন অনিয়ম হয় তখন বিএনপিকে তারা সমর্থন করবেন। কিন্তু এই কথায় বিএনপি আশ্বস্ত হতে পারছে না। আর সে কারণেই এখন বিএনপির মুখে অন্য ভাষা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭