প্রকাশ: 05/08/2023
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালে শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে নাই, ওরা স্বাধীনতাকে হত্যা করেছে। আমাদের সবকিছুকে হত্যা করেছে। পাকিস্তানীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারে নাই, কিন্তু এই ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নেতা নয়, তিনি ছিলেন সারাবিশ্বের নিপীড়িত-বঞ্চিত-শোষিত মানুষের নেতা। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর তাকে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখা হয়, পরে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। শেখ কামাল বাসায় না থেকে মুক্তিযুদ্ধে চলে যায়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শেখ কামাল পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। তিনি শিল্পী ও সংস্কৃতি ভালবাসতেন, মানুষকে ভালবাসতেন।’
তিনি বলেন, ‘আজকে অনেকে গণতন্ত্রের কথা বলেন, মানবাধিকারের কথা বলেন। ’৭৫ এর মর্মন্তুদ হত্যাকাণ্ড যখন ঘটানো হয়েছিল; অন্তঃসত্ত্বা নারীকে যখন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, নিষ্পাপ শিশুকে যখন হত্যা করা হয়-সেই দিন গণতন্ত্র, মানবতা কোথায় ছিল?’
শনিবার (৫ আগস্ট) বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ পুত্র ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৪ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘শেখ কামাল: শুদ্ধ তারুণ্যের ঋদ্ধ স্লোগান’- শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
আলোচনা সভায় শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘বাঙালিদের মধ্য থেকে কিছু লোক বিশ্বাসঘাতকতা করে, ষড়যন্ত্র করে বাঙলার মাটি থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার জন্যই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ছিলেন এদেশের মাটি ও মানুষের নেতা। কোন ঘাতকচক্র বাঙালির হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলতে পারবে না। আওয়ামী লীগ ঠিক থাকলে, আওয়ামী লীগের কেউ ক্ষতি করতে পারবে না। যারা একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারে নাই তাদের মধ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহল কখনই চায় না আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক।’
সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, পড়ালেখা, সঙ্গীতচর্চা, থিয়েটার, অভিনয়, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা থেকে শুরু করে বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার চেষ্টায় সদা-সর্বদা নিয়োজিত ছিলেন শেখ কামাল। এত সংক্ষিপ্ত জীবনে, এত বৈচিত্রময় ক্ষেত্রে তিনি নিজেকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এবং জাতির জন্য যে অবদান রেখে গেছেন- তা অতুলনীয় এবং ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত। আজকে শেখ কামাল যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে এই দেশটাকে তিনি আরও অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন, বিশেষ করে ক্রীড়া ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেতো বটেই।
পরশ বলেন, ‘আজ আমরা যখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলা করছি এবং বিজ্ঞান ও মেধাভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করার সংগ্রামে লিপ্ত, তখন আমাদের একজন শেখ কামালের বড় বেশি দরকার। ঘাতকরা, বিশেষ করে খুনি জিয়াউর রহমান ও মোস্তাক চক্ররা শুধু ব্যক্তি শেখ কামালকে হত্যা করে নাই, হত্যা করেছেন বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে। শেখ কামাল আমাদের জন্য প্রগতির ধারক ও বাহক হিসাবে চিরদিন বিরাজমান থাকবেন। আজকের এই উন্নয়নশীল বাংলাদেশে শেখ কামাল সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক এবং অপরিহার্য। মাত্র ২৫ বছরের জীবনে শেখ কামাল ধূমকেতুর মত বাংলার আকাশে উদিত হয়েছিলেন। একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে, এক বিশাল আকাশকে ক্যানভাস করে; সেই ক্যানভাস জুড়ে ছিল তারুণ্য, ভালবাসা, আর বাংলাদেশ। সুতরাং পরিশেষে বলতে চাই, আগস্টের হত্যাকাণ্ড আমাদের সামাজিক, নৈতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক জগতে অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করেছে। খুনি জিয়ার নেতৃত্বে যারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল, সেই স্বাধীনতা বিরোধী চক্র অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাঙালির সুদূর প্রসারী ক্ষতি সাধন করার উদ্দেশ্য নিয়ে আগস্টের হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। ঠিক যেইভাবে ১৪ই ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড আমাদের জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য করা হয়েছিল, ঠিক সেইভাবে আগস্টের হত্যাকাণ্ড আমাদের চেতনা এবং আমাদের মনুষ্যত্বকে হনন করার জন্য করা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষতি কোন এক সময় পূরণ করা সম্ভব, কিন্তু যেই মেধাবি, সৃজনশীল এবং দেশপ্রেমিক প্রতিভাকে আমরা হারিয়েছি, সেই ক্ষতি কোনদিনও পূরণ হবার না। ঘাতকের বুলেট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ঘাতকেরা বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করতে। তারা জানতো জাতির পিতার সন্তানেরা মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ধারক-বাহক। সেজন্য তারা শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেল কাউকেই রেহাই দেয়নি। শহীদের রক্তে ভেজা পতাকা যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে হাতে তুলে নিয়ে জাতির পিতার আদর্শ সমুন্নত রেখে পরম নিষ্ঠার সঙ্গে জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং বাংলাদেশে সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গণকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে আসীন করার যে স্বপ্ন শেখ কামাল দেখতেন, সেই অসমাপ্ত স্বপ্নটিও তাঁরই পৃষ্ঠপোষকতায় সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়িত করে চলেছেন। তাই আমরা আজ আগস্টের এই দিনে শুধু শহীদ শেখ কামালকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, নতুন প্রজন্ম এবং যুব সমাজকে শপথ নিতে হবে যে আমরা একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখব এবং সর্বস্ব উজাড় করে দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যেই প্রগতিশীল ও মেধাসম্পন্ন সমাজ ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন শেখ কামাল, সেই সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করবো। এই অমিত সম্ভাবনাময় তরুণের জীবনপ্রবাহ, চিন্তাচেতনা ও তার আদর্শ এবং স্বপ্নকে তরুণ ও যুবকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন।’
সঞ্চালকের বক্তব্যে বাংলাদেশ যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, আজও যারা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে বঙ্গবন্ধু কন্যার পাশে দাড়িয়েছেন, যারা দেশকে ধ্বংসকরার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন সেই সকল মুজিব সৈনিক এখানে উপস্থিত রয়েছেন।
বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাবস্থায় আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। তাদের বাড়িঘর লুণ্ঠন করেছে। ২০০৪ সালের ২১শে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। এই গ্রেনেড হামলায় তারেক জিয়ার নির্দেশনা ছিল। ২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট সারাদেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করেছিল বিএনপি-জামায়াত। শুধু তাই নয় ২০১৩-২০১৫ সালে সন্ত্রাসী কায়দায় বিএনপি অগ্নিসংযোগ করে হাজার হাজার গাড়ি পুড়িয়েছে এবং শত শত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। এ কারণেই বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তিনি আরও বলেন- বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাথে, একাত্তরের পরাজিত খুনিদের সাথে আমাদের কখনো আলোচনা হতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর কন্যার হাতে বাংলাদেশ নিরাপদ, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিরাপদ। বাংলার যুব সমাজ আবারও নির্বাচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বিজয়ী করবেন।’
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মঞ্জুর আলম শাহীন, ডা. খালেদ শওকত আলী, মো. হাবিবুর রহমান পবন, মো. তাজউদ্দিন আহমেদ, মো. জসিম মাতুব্বর, মো. আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, শেখ ফজলে নাঈম, মো. রফিকুল ইসলাম জোয়ার্দার সৈকত, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. হেলাল উদ্দিন, মো. সাইফুর রহমান সোহাগ, মো. জহির উদ্দিন খসরু, মো. সোহেল পারভেজ, আবু মুনির মো. শহিদুল হক চৌধুরী রাসেল, মশিউর রহমান চপল, অ্যাড. ড. শামীম আল সাইফুল সোহাগ, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজা, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. জহুরুল ইসলাম মিল্টন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক কাজী মো. সারোয়ার হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল প্রমুখ।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭