প্রকাশ: 06/08/2023
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিল
উত্তোলনে স্বাক্ষর জালিয়াতি, পরিদর্শক বিহীন পরীক্ষা গ্রহন ও নিয়মবহির্ভূতভাবে
পরীক্ষার পরিদর্শক থেকে বাদ দেয়াসহ বিভাগটিতে নানা অনিয়ম হচ্ছে বলে অভিযোগ
করেছেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ ফিরোজ হোসেন। এসব বিষয়ে গত ১২ জুলাই
উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদন দেন তিনি। পরে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি
তদন্ত কমিটি করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। গত ২৩ জুলাই
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান স্বাক্ষরিত এক
প্রজ্ঞাপনে কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
কমিটিতে
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি
অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দারকে
সদস্য করা হয়। যতদ্রুত সম্ভব কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
কমিটির
সদস্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন,
“কমিটি গঠনের বিষয়ে চিঠি পেয়েছি। কমিটির আহ্বায়ক ট্রেজারার স্যার অসুস্থ আছেন।
তিনি সুস্থ হয়ে ফিরলে বিষয়টি নিয়ে বসবো।”
লিখিত
অভিযোগে সহকারী অধ্যাপক ফিরোজ হোসেন বলেন, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে গত ১১ই মার্চ থেকে
১৬ই মে পর্যন্ত ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মান উন্নয়ন পরীক্ষা
অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা কমিটির সভাপতি (সহকারী অধ্যাপক আতিফা কাফি) উক্ত পরীক্ষা
গুলোর পরিদর্শক হিসাবে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অজ্ঞাত কারণে আমাকে বাদ দিয়েছে। এ ছাড়া
উক্ত পরীক্ষা গুলোর একাধিক রুটিন প্রণয়ন, পরিদর্শক বিহীন পরীক্ষা গ্রহন, ভিন্ন
শিক্ষাবর্ষের নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের সাথে পরীক্ষা গ্রহন ও একই দিনে একই
শিক্ষার্থীর একাধিক পরীক্ষা গ্রহন ইত্যাদি নিয়ম বহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা করা
হয়েছে। যা বিভাগের সভাপতির নিকট বারংবার জানানোর পরও রহস্যজনক কারনে সভাপতি মহোদয়
নিরব থেকেছেন এবং তার কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি। সর্বোপরি এ বিষয়ে তিনি কোন
পদক্ষেপ গ্রহন না করে উক্ত মান উন্নয়ন পরীক্ষার চূড়ান্ত বিল প্রশাসন বরাবর প্রেরন
করা হয়েছে। এমনকি বিলের মধ্যে বিভিন্ন রকম অসামঞ্জস্য লক্ষনীয়। এছাড়াও বিভিন্ন
সময়ে বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের রিটেক পরীক্ষার পরিদর্শক তালিকা থেকেও আমাকে বাদ দেয়া
হয়েছে যা সম্পূর্ন অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক। এই বিষয়ে যথাযথ তদন্তপূর্বক কার্যকরী
ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানায় ওই শিক্ষক।
এদিকে
একটা পরীক্ষায় চারবার রুটিন পরিবর্তন করা হয়েছে-যা হয়রানিকর বলে মন্তব্য করেছেন
বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের গ্রুপ রাজনীতি ও আন্তকোন্দলের কারণে বিভাগের এমন
অবস্থা বলে জানা গেছে।
বিভাগের
সহকারী অধ্যাপক ফিরোজ হোসেন জানান, "আমার কাছে অনিয়ম দৃষ্টিগোচর হওয়ায় আমি
প্রশাসনকে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছি। বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি
করেছেন। আশাকরি উপযুক্ত তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
তিনি
আরও জানান, "বিভাগের মিটিংয়ে সব শিক্ষকের থাকার কথা থাকলেও অনেকসময় মিটিংয়ের
ব্যাপারে কোন কিছু জানানো হয় না। বিভাগটি অন্যায়ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও কিছু
স্পষ্ট আর্থিক অসংগতি লক্ষ্য করা গেছে। যেগুলো আমি প্রয়োজনে তদন্ত কমিটির কাছে
ইভিডেন্স আকারে দেবো। বিভাগ যেন নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলে এটাই আমার চাওয়া।"
এদিকে
সহকারী অধ্যাপক ফিরোজ হোসেন নিয়মবহির্ভূতভাবে বিভাগ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা
নিয়েছেন বলে জানিয়েছে সূত্র। সূত্র জানায়, তিনি বিভাগে না এসেও অন্যদের মাধ্যমে
বিল উত্তোলনের পেপারে স্বাক্ষর করিয়ে নিতে বলেন। নিয়ম অনুযায়ী বিভাগের মিটিংয়ের
কয়েকদিন আগেই নোটিশ দেয়া হয়, বিভাগে উপস্থিত না থাকার ফলে নোটিশ দৃষ্টিগোচর না
হওয়ায় তিনি কিছু মিটিংয়ে এটেন্ড করতে পারেন নি। এছাড়া তিনি কয়েকটা ক্লাস নিয়েই
শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার শেষ করে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও পরীক্ষা কমিটির সভাপতি আতিফা কাফি বলেন,
"যদি তদন্ত কমিটি হয়ে থাকে তাহলে কমিটির সাথেই এই বিষয়ে বলবো। আমি এখন
ব্যক্তিগত কাজে বাইরে আছি। আপনি কোন কিছু জানতে চাইলে ক্যাম্পাসে গিয়ে সামনাসামনি
কথা বলবো।"
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের সভাপতি এ এইচ এম নাহিদ বলেন, “আমি আমার সহকর্মীর বিরুদ্ধে কোন কিছু বলতে চাই না। তিনি প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। প্রশাসন তদন্তপূর্বক যে ব্যবস্থা নেবেন আমরা সেটাই মেনে নেবো। তদন্ত কমিটি আমার কাছে আসলে আমার যে তথ্য-উপাত্ত দেয়া দরকার আমি তা দেবো।"
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭