ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের সাথে বিএনপির সিরিজ বৈঠক


প্রকাশ: 06/08/2023


Thumbnail

গত ৪৮ ঘণ্টায় বিএনপির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কূটনীতিকদের সিরিজ বৈঠকের খবর পাওয়া গেছে। এ সমস্ত বৈঠকের প্রধান বিষয় ছিল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কোন পদ্ধতিতে, কিভাবে বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারে, তার একটি উপায় নির্ধারণের জন্য এ ধরনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডার কে নিশ্চিত করেছে। 

বিএনপির অন্তত তিনজন নেতার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কূটনীতিকদের বৈঠকের খবর পাওয়া গেছে। বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ব্রিটিশ হাইকমিশনের ঊর্ধ্বতন দুইজন কর্মকর্তার সাথে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দু'জন সদস্য বৈঠক করেছেন। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন প্রতিনিধি সাথে বৈঠক করেছেন। প্রায় একই সময়ে বিএনপির এ ধরনের বৈঠকগুলো তাৎপর্যপূর্ণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

বিএনপি এখন একদফা আন্দোলনের কর্মসূচিতে লাগাম টেনে ধরে নির্বাচন নিয়ে একটি দরকষাকষিতে পৌঁছতে চাচ্ছে। বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির কথা বললেও তারা মূলত বলছে যে এমন একটি সরকার হবে যে সরকারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকবেন না। কিন্তু এই দাবির সাথে একমত নন কূটনীতিকরা। বরং কূটনীতিকরা বিএনপিকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে বহাল রেখেই একটা সমাধানের পথ খুঁজে বের করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে। বিএনপি নেতারা অবশ্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বাইরেও কিছু কিছু বিষয় তুলেছেন। যেমন- মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেছেন যে, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য অবশ্যই বেগম খালেদা জিয়াকে আগে মুক্ত করতে হবে। তারেক জিয়াকে দেশে আসতে দিতে হবে। তবে মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিরা বলেছেন যে, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে এবং তার উন্নত চিকিৎসার বিষয় নিয়েও সরকারের সাথে তারা আলাপ আলোচনা করতে পারে। কিন্তু তারেক জিয়ার ব্যাপারে তারা সরকারকে কোন অনুরোধ করবে না। একইভাবে বিএনপির আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়ার প্রসঙ্গটিও নির্বাচনে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় শর্ত হিসেবে সামনে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। 

তারা বলেছেন যে, এই বিষয়টি নিয়ে তারা সরকারের সঙ্গে দর কষাকষি করতে রাজি আছেন। এর বাইরে এমন একটি মন্ত্রিসভা গঠনের কথা বলা হয়েছে যে মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিসভার নিরপেক্ষ চরিত্র থাকবে। এ ক্ষেত্রে ব্রিটিশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা বিএনপি নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় যোগ দিবেন কিনা সেটি জানতে চেয়েছেন। বিএনপির নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কিছুই বলেননি। 

অন্যদিকে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন বিএনপিকে বর্তমান কাঠামোর মধ্যেই নির্বাচনে যাওয়ার জন্য কি কি শর্ত পূরণ করতে হবে সেটি জানতে চেয়েছেন। সেক্ষেত্রে বিএনপি নেতারা এসব দাবির বাইরেও নির্বাচন কমিশন পরিবর্তনের কথা বলেছেন। কিন্তু ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন মনে করে যে বর্তমান নির্বাচন কমিশন এমন কোন পক্ষপাতমূলক আচরণ করেনি যে তাদেরকে পরিবর্তন করতে হবে। বরং তারা মনে করছে যে, নির্বাচন কমিশনের আইনগুলোকে সংশোধন করা এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই নির্বাচনে বিএনপিকে আনা সম্ভব। তবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে যে তাদের মূল দাবী থেকে তারা সরে আসেনি। তাদের প্রধান বিষয়টি হল, নির্বাচনকালীন সরকারে যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন তাকে দল নিরপেক্ষ হতে হবে। দল নিরপেক্ষ না হলেও তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। এরকম একটি পরিস্থিতি হলেই তারা নির্বাচন করবেন এবং সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা হবেনা। তবে এই জায়গায় কূটনীতিকরা বিএনপির দাবিকে অযৌক্তিক মনে করছে। এখন দেখার বিষয় যে এই দরকষাকষিতে শেষ পর্যন্ত বিএনপির সাথে কূটনীতিকদের একটি সমঝোতা হয় কিনা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭