ইনসাইড বাংলাদেশ

আগস্টের কাপুরুষরা


প্রকাশ: 07/08/2023


Thumbnail

পচাঁত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নিয়ে একাধিক তার আক্ষেপের কথা প্রকাশ্যে বলেছেন। প্রায় প্রতিবছর আগস্টে এলে তিনি এ কথা পুনরাবৃত্তি করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আক্ষেপ করে বলেন, আওয়ামী লীগ এত বড় একটি দল, এত নেতা কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কোন প্রতিবাদ হল না কেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিবাদ হয়েছিল বটে তবে সেটা আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে প্রতিবাদ হয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে। বিভিন্ন জেলা, বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে কিন্তু নেতৃত্ব সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিল। শুধু রাজনৈতিক ব্যর্থতাই ছিল না, ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে আরও অনেকে। সেনাবাহিনী সহ সশস্ত্র বাহিনী তিন বাহিনী সে সময় চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন কে এম সফিউল্লাহ। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী  সেনাবাহিনী প্রধান কে এম সফিউল্লাহ ও বিমানবাহিনী প্রধান এ কে খন্দকারকে লাল টেলিফোনে ফোন করেছিলেন।  বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধার এবং তার খুনিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিলেও সেটা তারা পালন করেনি।

সে সময়কার বাংলাদেশ রাইফেলসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মুহাম্মদ খলিলুর রহমানও চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেন। হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ বেতারে নতুন সরকারের প্রতি আনুগত্যের প্রতিশ্রুতির ঘোষণা দেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী চার জাতীয় নেতাকে জেল হত্যাকাণ্ড ঘটার পর তৎকালীন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) মেজর জেনারেল এম খলিলুর রহমান খবর পান। কিন্তু তিনি খালেদ-শাফায়েতদের এই তথ্য জানান নাই। খুনী মেজরকূল ব্যাংককে পার হয়ে যাবার পর খালেদ-শাফায়েতরা জেল হত্যাকাণ্ডের কথা যখন জানতে পারেন তখন এই ব্যাপারে জেনারেল খলিলকে প্রশ্ন করলে তিনি নিরুত্তর থাকেন।

রক্ষীবাহিনীর ভূমিকাও হতাশাজনক। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আইজিপিকে নির্দেশ দিলেও তারা সেদিন কোন উদ্যোগ নেয়নি। খুনি মেজর চক্র যে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল সেনাপ্রধান সহ সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধান। শুধু তাই নয়, এই সময় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছিল।

সেনাবাহিনী শুধু নয়, রক্ষীবাহিনীও দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। এ সময় কাপুরুষতার পরিচয় দিয়েছিল প্রশাসনও। সে সময় মন্ত্রিসভার সচিব ছিলেন এইচ টি ইমাম। এইচ টি ইমাম মন্ত্রি পরিষদের সচিব থাকাকালীন তিনি খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় শপথ বাক্য পাঠ করেছিলেন। এটা একটা সীমাহীন ব্যর্থতাই শুধু নয়, কাপুরুষতার অন্যতম একটি নজিরও বটে। সে সময় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। তোফায়েল আহমেদের ভূমিকাও সাহসিকতার পরিচয় বহন করেনি। তিনিও যথা সময়ে সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারেননি।

এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে জাতীয় চার নেতা আটক হয়েছিলেন অথবা গৃহ অন্তরীণ ছিলেন। কাজেই তারা প্রতিবাদ করার সুযোগ পাননি। কিন্তু অন্যান্য নেতারা তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। বরং এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি হতাশার উদাহরণ। কারণ বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন। কাজেই আগস্ট ব্যর্থতার জন্য একটি নিমোর্হ তদন্ত দরকার। কার কি ভূমিকা ছিল, কার কি অযোগ্যতা ছিল তা খুঁজে বের করার দরকার। তবে মোটা দাগে যারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তাদের কাপুরুষিকতার ভূমিকা আগস্টের কলঙ্ককে আরও গাঢ় করেছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭