ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

এখানেই কি শেষ ইমরান খানের রাজনীতি?


প্রকাশ: 07/08/2023


Thumbnail

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা ইমরান খান তিন মাসের ব্যবধানে আবার গ্রেপ্তার হলেন। এখন তিনি কারাগারে রয়েছেন। তোশাখানার মামলায় ইসলামাবাদের আদালত গত শনিবার তাঁকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার পর লাহোরের জামান পার্ক থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ৯ মে ইমরানকে গ্রেপ্তারের পর দেশজুড়ে তাঁর সমর্থকেরা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। সামাজিক যোগোযাগমাধ্যম থেকে শুরু করে রাজপথ। কোথাও ইমরানের পক্ষে জোরালো অবস্থান কিংবা বিক্ষোভ করতে দেখা যায়নি। কিন্তু কী এমন ঘটেছে যে পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান এমন কোণঠাসা হয়ে পড়লেন।

তোশাখানার মামলায় গত মে মাসে ইমরান খান গ্রেপ্তার হওয়ার পর পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত ব্যাপক বিক্ষোভ করেন পিটিআই সমর্থকেরা। সেবার রাজপথে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভবনে আগুন দিয়ে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেছিলেন ইমরানের সমর্থকেরা।

কিন্তু গত শনিবার তাঁকে লাহোরের বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর বলার মতো কোনো বিক্ষোভ করেননি তাঁরা। পাকিস্তানে শনিবার রাতটিও অন্যান্য দিনের মতোই ছিল।

দুর্নীতির মামলায় ইমরানকে তিন বছরের কারাভোগ করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, আসন্ন সাধারণ নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবেন না তিনি।

গ্রেপ্তারের আগে সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়েছিলেন ইমরান। বলেছিলেন, সমর্থকেরা যেন ঘরে বসে না থাকেন। কিন্তু তাঁর সেই অনুরোধ কার্যত সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে পারেনি। কিন্তু কেন এমনটা হয়েছে?

সরকারের একাধিক মন্ত্রীর কাছে কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাঁরা বলছেন, জনগণ এখন আর ইমরান খান কিংবা তাঁর দলকে চান না। তা ছাড়া মে মাসের মতো সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়াতে চান না পিটিআইয়ের সমর্থকেরা।

ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খানের সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর এক সময় সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু এক বছরেরও কিছু আগে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর সেনাবাহিনীর দুর্নাম করতে শুরু করেন ইমরান। এক সময়ের মধুর সম্পর্ক রূপ নেয় তিক্ততায়।

প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর পর থেকেই ইমরান যেন ঠোঁটকাটা হয়ে ওঠেন। পরবর্তী নির্বাচনের জন্য যেন তর সইছিল না তাঁর। প্রতিনিয়ত সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের সমালোচনা করতে থাকেন। মে মাসে ইমরান গ্রেপ্তার হওয়ার পর সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভবনে হামলা চালান তাঁর সমর্থকেরা। এরপর নড়েচড়ে বসে সেনাবাহিনী। হামলাকারীদের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখায় তারা।

শুরু হয় ইমরানের সমর্থকদের ধরপাকড়। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তোলা হয় সামরিক আদালতে। সেনাবাহিনীর এমন বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সোচ্চার হয়ে ওঠে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। তারা বলে, বেসামরিক মানুষদের এই কায়দায় বিচার করা যায় না। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।

মে মাসে ইমরান খান গ্রেপ্তার হওয়ার পর সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকেরা। এর পর থেকেই গণমাধ্যমে ইমরান খানের নাম নেওয়া, ছবি দেখানো বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, টেলিভিশনের স্ক্রলেও ইমরানের নাম লেখা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এর আগে ইমরান খান গ্রেপ্তার হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন অনেক সমর্থক। কিন্তু গত শনিবার ইমরান গ্রেপ্তার হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন কোনো তৎপরতাও চোখে পড়েনি। কিছু নেতা পোস্ট করলেও পরে সেটি আবার মুছে ফেলেছেন। এমনকি ইমরান খান গ্রেপ্তার হওয়ার সংবাদ টেলিভিশনে তেমন একটা দেখতে দেখা যায়নি। এই ভয়ে যে তাঁদের হয়তো কেউ দেখছেন।

যদিও পাকিস্তান সরকার দাবি করেছে, তারা শান্তিপূর্ণ কোনো আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করেনি। কিন্তু বিবিসি উর্দুর সাংবাদিকেরা দেখেছেন, শনিবার লাহোরে ইমরান খানের বাসভবন জামান পার্কের সামনে অনেক পিটিআই সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের ধরে নিয়ে গেছে। তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭