ইনসাইড আর্টিকেল

‘বঙ্গমাতা, তোমার সমর্পণে’


প্রকাশ: 08/08/2023


Thumbnail

কবি মৌলি দাসের একটি কবিতা পড়েছিলাম। কবিতাটির শিরোনাম ছিল ‘মা, তোমার সমর্পণে’। কবি মৌলি দাস তার নিজের জন্মদাত্রীকে নিয়ে লিখেছিলেন কবিতাটি। তিনি লিখেছিলেন, ‘মা, আজকের এই বিশেষ দিনটাকে/ করি তোমায় সমর্পণ/ সহ্যের অতীত যন্ত্রণা সয়ে/ পরোয়া না করে মৃত্যুকে/ করেছিলে, আমার ভূমিষ্ঠ হওয়াকে সমর্থন।’ কবি মৌলি দাস একজন জন্মদাত্রী, সন্তানকে গর্ভে ধারন করা মা’কে তার কবিতায় যে সন্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন, তাতে সে মায়ের সম্মানের স্থানটা অতি উচ্চ শিখরে আরোহন করেছে। কিন্তু এমন এক মা, মাতা; যিনি নিজ গর্ভে ধারণ না করেও হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি সন্তানকে স্নেহ, মায়া, মমতা দিয়ে জাগিয়ে তুলেছেন; যিনি জন্ম দিয়েছেন একটি স্বাধীন ভূখন্ডের, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের- সেই মা, মাতার সম্মানের আসনটা কোথায় থাকা উচিৎ? 

এমনই একজন কিংবদন্তি মাতার কথা বলছি। যিনি বাঙালি নারীত্বের স্নেহ-মমতা ঢেলে দিয়েছিলেন বাংলার নিরস্ত্র, অসহায়, নিষ্পেষিত মানুষের প্রতি নির্মোহ ভালোবাসায়। যিনি বাঙালি জাতির কল্যাণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে থেকে আজীবন জাতির মুক্তি কামনায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি মাতা, একটি স্বাধীন দেশের জন্মদাত্রী মাতা। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। আজ ৮ই আগস্ট, মঙ্গলবার, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন, ৯৩তম জন্মবার্ষিকী। আজ তিনি বেঁচে থাকলে ৯৩ বছরে পা দিতেন। বঙ্গমাতা ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম ছিল রেণু। বাবার নাম শেখ জহুরুল হক ও মায়ের নাম হোসনে আরা বেগম। ১ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তিনি জাতির পিতার হত্যাকারী, ঘাতকদের গুলিতে নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণ করেন।                 

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব দেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগকে আমৃত্যু নিজের পরিবার মনে করতেন এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সহযোগিতার জন্য তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে যখনই কারাগারে থাকতে হয়েছে, তখনই বঙ্গমাতা তার নিজ পরিবার এবং আওয়ামী লীগ পরিবার (দল) উভয়কেই দেখাশোনা করেছেন।’ 

তিনি বলেন, ‘বঙ্গমাতা সহযোগিতাটা করেছিলেন কীভাবে? এটা এমন নয় যে, বঙ্গমাতা জমিদার ছিলেন। এটা এমনটাও নয় যে, বঙ্গবন্ধু জেলে আছেন... তার প্রচুর অর্থ ও সম্পদ ছিল এবং বঙ্গমাতা তার পরিবারের ব্যয় নির্বাহের জন্য ওই সব অর্থসম্পদ ব্যয় করতেন। বঙ্গমাতা তাই অল্প পরিমাণে কিছু অর্থ সঞ্চয় করতেন এবং দুটি পরিবার- তার নিজ পরিবার  ও আওয়ামী লীগের দেখাশোনার জন্য ব্যয় করতেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গমাতার হাতে যখন আর কোনো সঞ্চয় থাকতো না, তখন তিনি তার পরিবার ও তার বৃহত্তর পরিবার- আওয়ামী লীগ চালানোর জন্য আলমিরা, ফ্রিজের মতো জিনিসপত্রও বিক্রি করে দিয়েছিলেন। কারাগারের বাইরে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু যেমন আওয়ামী লীগ কর্মীদের সহযোগিতা করতেন, ঠিক একইভাবে তিনি জেলে থাকাকালেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বঙ্গমাতার কাছে আসতেন এবং তিনি তাদের সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতা করতেন।’

অধ্যাপক আরেফিন বলেন, এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর বাসভবন থেকে না খেয়ে বের হতে পারতেন। তবে কখনো কখনো এমনও হয়েছে যে, তার নিজের বাসার খাবারও ফুরিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে তাঁর মাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা তাদের বাসায় এসে খাবার খেতেন, তা উল্লেখ করেছেন। তিনি শেখ হাসিনার স্মৃতিচারণের কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, ‘মাঝে মাঝে দেখা যেত খাবারের তুলনায় মেহমান অনেক বেশি। বাড়িতে খাবারের ঘাটতি হতো। তখন অতিথিদের অন্তত ডাল (রান্না করা ডাল) দিয়ে ভাত খাওয়ানো হতো। সেই মুহূর্তে কী আর করার থাকতো? তারপর মা ডালের পরিমাণ বাড়াতে কিছু পানি মিশিয়ে সবাইকে খাবার পরিবেশন করতেন। কিন্তু কেউ আমাদের বাড়িতে এসে কিছু  না খেয়ে চলে যাবে- এটা আমার মায়ের কাছে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না।’

অধ্যাপক আরেফিন বলেন, শেখ হাসিনা তাঁর স্মৃতিচারণে উল্লেখ করেছেন যে শৈশবে মাঝে মাঝে ঘুম থেকে জেগে তিনি দেখতে পেতেন যে আলমিরা বা ফ্রিজের মতো কিছু আসবাবপত্র ঘরে নেই  এবং তারপর তিনি তাঁর মাকে এ বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে মা বলেতেন, ‘আমাদের এতো আসবাবপত্রের দরকার নেই। সাদাসিধে জীবন যাপন করাই ভালো। তাই সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছি।’ 

অধ্যাপক আরেফিন উল্লেখ করেন, একদিন ঘুম থেকে জেগে শেখ হাসিনা দেখতে পান-  তাদের যে ফ্রিজ ছিল সেটি নেই এবং তখন তিনি তার মাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। উত্তরে বঙ্গমাতা বলেন, ‘ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খেয়ে সর্দি-কাশিতে ভুগছো। তাই বিক্রি করে দিয়েছি।’  

তিনি বলেন, ‘আসলে বঙ্গমাতা তার আর্থিক কষ্ট লাঘব করতে এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের সহযোগিতা করার জন্য আসবাবপত্র বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার ছেলে-মেয়েরা যাতে এটি জেনে মর্মাহত না হয়, সেজন্য তিনি তার মতো করে বিভিন্ন উপায়ে সন্তানদের একটা কিছু বলার চেষ্টা করতেন।’

প্রফেসর আরেফিন বলেন, ‘সুতরাং, আমরা যদি এভাবে দেখি যে, একজন মা এবং একজন গৃহিণী হিসেবে তিনি কীভাবে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন, তাহলে বলতেই হবে- এটি সত্যিই অসাধারণ। এটি বেগম মুজিবের বৈশিষ্ট্য। আমরা এ ধরনের অনেক ঘটনার কথাই জানি। এগুলো শেখ হাসিনার নিজের স্মৃতিচারণ থেকে আমরা জেনেছি, পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতাও এসব কথা উল্লেখ করেছেন।’

তিনি বলেন, বেগম মুজিব সম্পূর্ণরূপে একজন গৃহিণী ছিলেন, কিন্তু গৃহিণী হওয়া সত্ত্বেও তার রাজনৈতিক সচেতনা আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। বঙ্গমাতা ছিলেন অনেক দৃঢ়চিত্ত, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং রাজনীতি সচেতন মানুষ।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি সুবেদার আবদুর রাজ্জাকের একটি মন্তব্য উল্লেখ করে অধ্যাপক আরেফিন বলেন, সুবেদার রাজ্জাক তার স্মৃতিচারণে উল্লেখ করেছেন যে, একদিন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের আলোচনা চলছিল। কিন্তু তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছিলেন না। 

সুবেদার রাজ্জাকের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘ঠিক আছে আমরা এখনই বৈঠক শেষ করি, পরে আবার বসব।’ বাসভবনের ভেতর থেকে বেগম মুজিব বিষয়টি শুনে সেখানে আসেন। তিনি বলেন, ‘না, আপনারা এখানে বসুন এবং আপনারা একটি সিদ্ধান্তে না পৌঁছানো পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে যান। একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পরই আপনারা মিটিং শেষ করবেন।’ 

এভাবে বেগম মুজিব বিভিন্ন সময়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন, যা দলের জন্য অত্যন্ত সহায়ক ছিল এবং বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুও সর্বদা বঙ্গমাতার যে কোনো পরামর্শকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতেন।  

গতকাল সোমবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের নলিনী কান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব (রেণু) এর জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধুর রেণু’ চলচ্চিত্রের লোগো ও ওয়েবসাইট উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে ছিলেন, বঙ্গমাতা প্রতিবারই একটি করে খাতা ও কলম নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন। এ কারণে আমরা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ সহ বিভিন্ন বই পেয়েছি।

অনুষ্ঠানে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে ছিলেন, তখন বঙ্গমাতা আমাদের বলেছিলেন, আপনারা আন্দোলন জোরদার করুন। তারপর তাকে দ্রুত মুক্তি দেওয়া হবে- যা ছিল তার (বঙ্গমাতার) দূরদর্শী চিন্তার প্রমাণ।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্র নেতারা বঙ্গমাতার কাছে পরামর্শের জন্য যেতেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণার উৎস কিন্তু তিনি ছিলেন পর্দার আড়ালে। বঙ্গবন্ধু সব সময় বঙ্গমাতার পরামর্শকে আগ্রাধিকার দিতেন।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের আগে বঙ্গমাতা তাকে তার হৃদয়ে যা বলে- তা বলতে বলেছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু সব নোট এবং কাগজপত্র গ্লাসের নীচে রেখে একই কাজ করেছিলেন।’

বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতাকে খুব ভালোবাসতেন, ভালো জানতেন ও সম্মানের চোখে দেখতেন। বঙ্গমাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জীবনে সুখ-দুঃখের সঙ্গী। জাতির পিতার জীবনের কঠিন দিনগুলোতে বঙ্গমাতাই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ধরে রেখেছেন। তখন দুটো সংগঠন ছিল। একটি আওয়ামী লীগ, অপরটি ছাত্রলীগ। কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য সংগঠন পরে হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় সহধর্মিণী মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের শুভ জন্মদিনে তার অমর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। জাতির পিতার নাম স্বদেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী পরম শ্রদ্ধায় উচ্চারিত হওয়ার নেপথ্যে ছিলেন তার প্রিয় সহধর্মিণী। আমৃত্যু নেপথ্যে থেকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পরম মমতায় বঙ্গবন্ধুকে আগলে রেখেছিলেন এই মহীয়সী নারী। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলোতে বাস্তবোচিত ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত দিয়ে তিনি বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ায় অনন্য ও ঐতিহাসিক অবদান রেখেছেন।

বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদের ভাষ্যমতে, বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের ১২টি বছর বঙ্গমাতা অপরিসীম দুঃখ-কষ্টে সংসারজীবন অতিবাহিত করেছেন। ’৫৪তে তিনি ঢাকায় আসেন এবং গেন্ডারিয়ায় রজনী চৌধুরী লেনে বাসা ভাড়া নেন। ’৫৪তে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হলে বঙ্গবন্ধু বন ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তখন গেন্ডারিয়ার বাসা ছেড়ে ৩নং মিন্টো রোডের সরকারি বাড়িতে ওঠেন। অল্পদিনের মধ্যেই পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ৯২-ক ধারা জারি করে মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয় এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। মাত্র দুই সপ্তাহের নোটিশে বঙ্গমাতাকে বাসা খুঁজতে হয় ও নাজিরা বাজারে বাসা নেন। ’৫৫তে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন ও একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু পরিবার ১৫ আবদুল গণি রোডের বাসায় ছিলেন। কিছুদিন পর মন্ত্রিত্ব অথবা দলের দায়িত্ব গ্রহণের প্রশ্ন সামনে এলে বঙ্গবন্ধু স্বেচ্ছায় মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে দলীয় সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং বঙ্গমাতাকে বাসা বদল করতে হয়। এবার বাসা নেন সেগুনবাগিচায়। এ সময় বঙ্গবন্ধু টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হন। ’৫৮-এর ৭ অক্টোবর আইয়ুবের সামরিক শাসন জারি হলে ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এবারও বঙ্গমাতা পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় অবস্থায় বাসা খুঁজতে থাকেন এবং সেগুনবাগিচায় নির্মাণাধীন একটি বাড়িতে বাসা নেন। পরে সেটি পাল্টে ৭৬ সেগুনবাগিচায় অপর একটি বাড়ির দোতলায় ওঠেন। তখন বঙ্গবন্ধুর নামে ১৪টি মামলা। ’৬১তে বঙ্গবন্ধু কারামুক্ত হয়ে আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি নেন। বঙ্গবন্ধু পরিবার ’৬১-এর ১ অক্টোবর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে বসবাস করতে শুরু করেন। এই সময় থেকেই ধীরে ধীরে ধানমণ্ডি ৩২ নং-এর বাড়িটি হয়ে ওঠে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ঠিকানা। বঙ্গবন্ধু দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রত্যেককে দেখতেন নিজ পরিবারের সদস্যের মতো। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যগণও তাই মনে করতেন। নেতা-কর্মীদের বিপদ-আপদে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা তাদের পাশে দাঁড়াতেন পরম হিতৈষীর মতো। মমতা মাখানো সাংগঠনিক প্রয়াস নিয়ে কর্মীদের হৃদয় জয় করে নেয়ার ব্যতিক্রমী যে ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর ছিল, সেই চেতনার আলোয় আলোকিত ছিলেন বঙ্গমাতা।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবউদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

দিবসটিতে সরকারি কর্মসূচি ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন, কোরান খতম, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করবে আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনসমূহ।

এছাড়া বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী  উপলক্ষে ‘প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয়-লক্ষ্মী নারী’ শীর্ষক আলোচনা সভা করবে আওয়ামী যুবলীগ। দুপুর ২টায় বাদ যোহর স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানায় এতিমদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। বিকাল ৩টায় আলোচনা সভা করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শ্রমিক লীগ।

এছাড়া গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ায় দিনব্যাপী ফ্রি হেলথ ক্যাম্প আয়োজন করবে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ। বঙ্গমাতা শহীদ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও ‘বাংলাদেশের মাতা, বাংলাদেশের নেতা’- শীর্ষক ছাত্রী সমাবেশ করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭