ইনসাইড বাংলাদেশ

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা: দুবাই ও সিঙ্গাপুরের পাচার করা অর্থ ঝুঁকিতে পড়তে পারে


প্রকাশ: 08/08/2023


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশে অর্থ পাচার এবং দুর্নীতি নিয়ে তদারকি করছে। অনেক কূটনীতিক বিশ্লেষক মনে করছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর যে বহুমুখী চাপ প্রয়োগ করেছে তার একটি অংশ হিসেবেই দুর্নীতি এবং অর্থপাচারের ইস্যুটি সামনে এসেছে। গত রোববার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বৈশ্বিক দুর্নীতি প্রতিরোধ সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। তিনি বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ থেকে যারা অর্থ পাচার করে তাদেরকে শনাক্ত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই তিনি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যারা অর্থ পাচার করেছে তারা নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্যান্য দেশে যারা অর্থ পাচার করেছে তাদেরকেও ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যারা অবৈধভাবে অর্থ পাচার করেছে তাদের অর্থ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাজেয়াপ্ত করতে পারে তেমনি বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগ এরকম বেশ কিছু দেশ আছে যে সমস্ত দেশে অবৈধ পাচারকৃত অর্থ জব্দ করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে দুর্নীতি দমন করা এবং জঙ্গী অর্থায়ন বন্ধের লক্ষ্যে এ সমস্ত দেশগুলোর সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। ফলশ্রুতিতে ঐ সমস্ত দেশেও যদি পাচার করা অর্থ থাকে এবং সেটা যদি প্রমাণিত হয় যে এই অর্থ পাচার করা তাহলে তা আটক করতে পারবে। 

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবৈধ অর্থ এবং পাচারকৃত অর্থের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থ গুলো সরিয়ে ফেলার হিড়িক পড়ে। বিশেষ করে বাঙালিরা যারা সেখানে অর্থপাচার বিভিন্ন সম্পদ তৈরি করেছিলেন তারা সেই সমস্ত সম্পদ বিক্রি করে এবং সেই সমস্ত অর্থ গুলো তুলে বিভিন্ন দেশে স্থানান্তর করেছে। একই ভাবে সুইস ব্যাংকে বাঙালিরা যে সমস্ত অবৈধ পাচারকৃত অর্থ রেখেছিল তারাও সেই সমস্ত ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ সরিয়ে ফেলেছেন। তবে সরিয়ে ফেললেও অর্থপাচারকারীরা নিশ্চিত হতে পারছেনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন কিছু দেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যে সমস্ত দেশগুলোতে যদি এই অর্থ যায় তাহলে পরে সেই দেশেও পাচারকৃত অর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জব্দ করতে পারে। অতীতে তারা এটা করে। 

বিভিন্ন সূত্র বলছে, বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ যেগুলো সুইস ব্যাংক বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় ছিল সেগুলো এখন সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সিঙ্গাপুরে বেশি স্থানান্তরিত হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢুকেছে এই বছরে। একইভাবে সিঙ্গাপুরেও বাঙ্গালীদের বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে এবং এই সবই অবৈধভাবে পাচার হয়ে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড বা কানাডা গিয়েছিল। সেখান থেকে এই দেশ দুটিতে এসেছে। তবে পাচারকারীদের জন্য দুঃসংবাদ হলো এই যে সংযুক্ত আরব আমিরাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অর্থ পাচার প্রতিরোধ এবং জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধের লক্ষ্যে বৈশ্বিক সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে। বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগ এই দেশগুলোতে যদি সন্দেহজনক আর্থিক পরিস্থিতি থাকে তাহলে সেগুলো জব্দ করার জন্য ওই দেশের সরকারকে অনুরোধ করতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র এদের ব্যাপারে তদন্ত করতে পারে। সেই হিসেবে দুবাইতে যারা অর্থ পাচার করেছে তাদের অর্থ ঝুঁকিতে পড়বে পড়তে পারে। আর একই রকম চুক্তি করা হয়েছে সিঙ্গাপুরের সাথেও। সিঙ্গাপুরে অবৈধ যে সমস্ত অর্থ রয়েছে তা যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রমাণ করে তাহলে সিঙ্গাপুর সে অর্থ বাজেয়াপ্ত করতে পারে এবং ওই একাউন্টে লেনদেন বন্ধ করতে পারে। 

এর আগেও সিঙ্গাপুর একই কাণ্ড করেছে। আরাফাত রহমান কোকো একটি টেলি কোম্পানি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঘুষ হিসেবে নিয়েছিল এবং সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংকে জমা দিয়েছিল। কিন্তু এফবিআই তদন্তে যখন প্রমাণিত হয় যে ঘুষ লেনদেন হয়েছে তখন সিঙ্গাপুর যাবতীয় অর্থ স্থগিত করে এবং আরাফাত রহমান কোকোর ঐ অর্থ বাংলাদেশ সরকার ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল। কাজেই এখন যারা বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে দুবাই বা সিঙ্গাপুরে রাখছেন তাদের অর্থ যদি অবৈধ পন্থায় ঐ দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হয়েছে প্রমাণিত হয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারবে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭