ইনসাইড পলিটিক্স

শ্রাবণকে কেন বিশ্বাস করল না তারেক জিয়া?


প্রকাশ: 09/08/2023


Thumbnail

বিএনপি যখন এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে, ঠিক সে সময় ছাত্রদলের সভাপতিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন রাশেদ ইকবাল খান। তিনি সিনিয়র সভাপতির দায়িত্ব ছিলেন, আর ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। রিজভী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিনি অসুস্থ- এ জন্য তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

কিন্তু খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ মোটেও অসুস্থ নন, তিনি স্বাভাবিক আছেন এবং গতকালও তাকে দলীয় কার্যালয়ে দেখা গেছে। এই সময় হঠাৎ করে ছাত্রদলের সভাপতিকে কেন সরিয়ে দেওয়া হলো- তা নিয়ে বিএনপির মধ্যে নানামুখী আলাপ-আলোচনা এবং প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য যে, তারেক জিয়ার আগ্রহে শ্রাবণকে ছাত্রদলের সভাপতি করা হয়েছিল। শ্রাবণের পরিবারের সকলেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ছাত্রদল করার কারণে পরিবারের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ ১৩ বছর সম্পর্ক ছিল না এবং ছাত্রদলের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই তিনি জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করেছেন- এমন কথাও পত্র-পত্রিকায় তিনি বলেছিলেন। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তার পরিবারের সঙ্গে একটা যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল এবং বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যায়। এই খবরগুলো লন্ডনে পলাতক বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে জানানো হয়। তারেক জিয়া আওয়ামী লীগ পরিবারের কোনো সদস্য ছাত্রদলের সভাপতি থাকবে- এটি মেনে নিতে পারেনি। 

বিএনপির বিভিন্ন নেতার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, শ্রাবণকে যখন ছাত্রদলের সভাপতি করা হয়েছিল, তখনই তার আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় অন্য হিসেব-নিকেশ করে তারেক জিয়া শ্রাবণকে ছাত্রদলের সভাপতি করেছিলেন। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য ছিল, তারেক আশা করেছিলেন শ্রাবণকে ছাত্রদলের সভাপতি করার ফলে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছেড়ে দিবে এবং বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেবে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি ঘটেনি। বরং পিতা-পুত্র দুই রাজনৈতিক ধারায় থেকেই কাজ করেছেন। 

তারেক জিয়া এবং তার দল বিএনপি সাম্প্রতিক সময়ে ৩১ দফা ঘোষণা করেছে এবং ৩১ দফায় তারা বাংলাদেশ থেকে প্রতিহিংসার রাজনীতি চিরতরে সরিয়ে ফেলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। কিন্তু শ্রাবণকে সরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে তারেক জিয়া প্রতিহিংসার রাজনীতির বার্তাটি নতুন করে দিলেন। পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের রাজনীতি করে, তাকেও তারেক জিয়া সহ্য করতে পারলেন না। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, আন্দোলন যত গতি পাবে ততই আওয়ামী লীগের ব্যাপারে বিএনপি মারমুখী হবে এবং আক্রমণাত্মক হবে। এ রকম হিসেব-নিকেশ থেকেই তারেক জিয়া শ্রাবণকে ছাত্রদলের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। 

বিভিন্ন মহল মনে করছেন, তারেক জিয়া এখন আওয়ামী লীগের কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। একাধিক বিএনপি নেতা বলেছেন, বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে তারেক জিয়া গুপ্তচর লাগিয়েছেন, তারা কোথায় যায়, কি করে- ইত্যাদি খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ন্যূনতম যোগাযোগ যারা করছেন, তাদেরকেই নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বা দায়িত্ব থেকে হটিয়ে দেয়া হচ্ছে। এক ধরনের গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে তিনি নেতাদের আদর্শের পরীক্ষা নিচ্ছেন। এটি কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের শিষ্টাচার হতে পারে না বলেও অনেকে মনে করছেন। শ্রাবণকে সরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে তারেক জিয়া নিষ্ঠুরতার একটি বার্তা দিলেন। তিনি যে রাজনীতিতে কতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ, সে বিষয়টি আর একবার স্পষ্ট হলো!



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭