ইনসাইড আর্টিকেল

আগস্ট ষড়যন্ত্রে মার্কিন দূতাবাস


প্রকাশ: 10/08/2023


Thumbnail

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরসরি জড়িত ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় রাষ্ট্রদূত ইউজিন বোস্টারের গোপন প্রতিবেদন থেকে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে একটি দূতাবাস কিভাবে একটি হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে- তার একটি জলজ্যান্ত প্রমাণ হলো ইউজিন বোস্টারের এই প্রতিবেদনটি। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেরাই স্বীকার করেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যার কথা তারা জানতো এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। 

১৯৭৪ সালের ১৫ মে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে পাঠানো রাষ্ট্রদূত ইউজিন বোস্টারের গোপন প্রতিবেদনের পূর্ণ বিবরণ তুলে ধরা হলো:-   

প্রাপক: মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

প্রেরক: মার্কিন দূতাবাস ঢাকা।

বিষয়: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অসন্তোষের ইঙ্গিত।      

১৯৭৪ সালের ১৩ মে সন্ধ্যায় সৈয়দ ফারুক রহমান, যিনি ফাস্টর্ বেঙ্গল লেন্সারস অ্যান্ড সেকেন্ড ইন কমান্ড অব আর্মার্স, আগে থেকে না জানিয়ে গ্রেশামের বাসায় হাজির হন। ফারুক বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সেনাবাহিনী খুবই অসন্তুষ্ট। বিশেষ করে, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক একটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে। ঘোষণাটি হলো, আওয়ামী লীগের নেতাদের গ্রেপ্তার করতে সেনাবাহিনীকে নিষেধ করে দেওয়া। ফারুক রহমান বলেন, তিনি ‘উচ্চপর্যায়ের বাংলাদেশ সেনা কর্মকর্তার নির্দেশে’ এখানে এসেছেন। তাঁর লক্ষ্য হচ্ছে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যে বাংলাদেশে সরকার উৎখাতের যদি কোনো ঘটনা ঘটে, সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মনোভাবটা কী হবে। বিশেষ করে, সে ক্ষেত্রে বিদেশি হস্তক্ষেপের কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে, সেটা যুক্তরাষ্ট্র দেখবে কি না। গ্রেশাম মেজর রহমানকে বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করবে না এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে চলেছে।

২. মন্তব্য: মেজর রহমান গত গ্রীষ্মে আমাদের কাছে একটি অস্বাভাবিক প্রস্তাব করেছিলেন। সেটা ছিল বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রনীতি ও অস্ত্র বিক্রয়সংক্রান্ত। সেনাবাহিনীতে তিনি কোনো অধিনায়ক নন। উপরন্তু তাঁর সাঁজোয়া বাহিনীতেও বর্তমানে কোনো সাঁজোয়া যান নেই। তবে এবারই প্রথম নয়, দুই বছর ধরে আমরা সেনাবাহিনীতে অসন্তোষের খবর পেয়ে আসছি। দূতাবাসের কাছে অভ্যুত্থানের গুজবও পৌঁছেছে। কিন্তু আগেকার খবরগুলো কোনো ফলাফল বয়ে আনেনি। কিংবা কোনো ধরনের সামরিক অভ্যুত্থান আসন্ন বলেও আমরা অনুমান করি না।

৩. ফারুক রহমানের আগমন এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বর্তমানে পরিচালিত সেনা অভিযানের কার্যক্রম মুজিব নিয়ন্ত্রণ করছেন। সেনাবাহিনীকে নিরপেক্ষ থাকার মূল আদেশ অনুসারে, বিশেষ করে কুমিল্লায়, উচ্চপর্যায়ের উল্লেখযোগ্য—সংখ্যক বাঙালি গ্রেপ্তার হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে দলে হইচই হয়। মুজিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলীয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সেনাবাহিনী যেন আওয়ামী লীগের নেতাদের রেহাই দেয়। তিনি (মুজিব) অবশ্য দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী তৎপরতার দায়ে আওয়ামী লীগের মহিলা সাংসদ বেগম মমতাজের বহিষ্কারাদেশ অনুমোদন করেন। এমনকি মুজিব যদি তাঁর সহযোগীদের রক্ষা করা অব্যাহত রাখেন, তাহলেও বলা যায় তিনি সেনাবাহিনীকে এই অভিযান পরিচালনার অনুমতি দিয়ে অধিকতর দুর্নীতিগ্রস্তদের অন্তত একটা শঙ্কায় ফেলে দিয়েছিলেন। —বোস্টার।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭