ইনসাইড পলিটিক্স

যুক্তরাষ্ট্র ‘পাকিস্তানি মডেল’ কি বাংলাদেশে প্রয়োগ করতে পারবে?


প্রকাশ: 10/08/2023


Thumbnail

প্রকাশ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছিল ইমরান খানকে তারা হঠাবে। শেষ পর্যন্ত ইমরান খানকে তারা হঠিয়েছে। ইমরান খানকে হঠানোটা সহজসাধ্য ছিল না। তার বিপুল জনপ্রিয়তা ছিল। কিন্তু এই জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও পাকিস্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কারসাজি সফল হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ইমরান খানকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ইমরান খানের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভালোমতোই ওয়াকিবহাল। আর এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায়নি যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইমরান খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। সে কারণেই ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সাহসী পদক্ষেপের কারণে সে যাত্রায় ইমরান খান বেঁচে যান। তাছাড়া সে সময় ইমরান খানের পক্ষে এক গণবিষ্ফোরণ হয়েছিল। এর পরেই এ নিয়ে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্র। আর পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র যা চায়, সেটাই হয়- সেটা প্রমাণিত হলো আরেকবার। 

দ্বিতীয় দফায় ইমরান খান যখন গ্রেপ্তার হলেন, তখন আর তেমন প্রতিবাদ দেখা যায়নি। এর মধ্যে নেপথ্যে অন্য কোনো ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তানে যারা মার্কিনপন্থি, তাদেরকে একাট্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে ইমরান খানের দলের মধ্যেও তারা বিভক্তি আনতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে দ্বিতীয় দফায় ইমরান খান গ্রেপ্তারের পর আর প্রতিবাদ হয়নি। এখন তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করেছে। এ মোক্ষম সময়টির জন্য অপেক্ষা করছিল যুক্তরাষ্ট্র। এটি হওয়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিতে সংসদ বিলুপ্ত করেন সেহবাজ খান। আর এর পরেই পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হলো। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বিলুপ্ত হওয়ার পর সেখানে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে এবং সেই নির্বাচনে পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ইমরান খান অংশ নিতে পারবে না। 

এই পাকিস্তানের মডেলটি এখন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করতে চায় কি না- এই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশ্ন ওঠেছে। দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল। নানা কারণেই পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে সেখানকার সেনাবাহিনী, বিচার বিভাগ এবং রাজনীতিবিদদের একটি বড় অংশ পাকিস্তানের পুতুল হিসেবেই কাজ করতো। কিন্তু ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের দূরত্ব তৈরি করেন এবং নিজেদের স্বাতন্ত্র অবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করেন। এ সময় ইমরান খান চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং চীনকে তার প্রধান মিত্র হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য কিছু বক্তব্য রাখেন। আর এর ফল তিনি হাতে-নাতে পেয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিপুণ কায়দায় পাকিস্তানের তথাকথিত গণতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করেছে- এটাই হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি। 

ম্যাথিউ মিলারকে যখন গত মঙ্গলবার প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, পাকিস্তানের ইমরান খানের গ্রেপ্তার নিয়ে তার কি মতামত, তখন তিনি বলেছিলেন যে, এটা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এমনকি পাকিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনাগুলোও এখন যুক্তরাষ্ট্র এড়িয়ে যাচ্ছে। এ সমস্ত কিছুই ঘটছে মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতায়। অথচ বাংলাদেশে হিরো আলমকে যখন দুই একজন হালকা উত্তম-মধ্যম করেছে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিবৃতির ঝড় বয়ে গেছে। বাংলাদেশে একটা আম পড়লেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বিবৃতি দেয়। কিন্তু পাকিস্তানের ব্যাপারে তারা নিরব। পাকিস্তানে যে প্রক্রিয়ায় সফলভাবে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতার পালাবদল করেছে, সেটির চূড়ান্ত রূপ হবে নির্বাচনের মাধ্যমে- তাদের একটি তাবেদার সরকার গঠন করার মধ্য দিয়ে। 

তবে প্রশ্ন ওঠেছে, পাকিস্তানে যে আগ্রাসী ভূমিকার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্র করেছে, বাংলাদেশেও কি সেই মডেলই তৈরি করতে চাচ্ছে? সেজন্যই কি বাংলাদেশে একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে? রাজনৈতিক বিশ্লেকরা বলছেন, নানা কারণেই পাকিস্তানি মডেল বাংলাদেশে সম্ভব নয়। কারণ বাংলাদেশের জনগণ, বাংলাদেশের প্রশাসন, সেনাবাহিনী কিংবা বিচার বিভাগ, এতো বেশি যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল নয়- যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্ভরশীলতা রয়েছে। তৃতীয়ত, বাংলাদেশের জনগণের স্বাতন্ত্র রাজনৈতিক শক্তি আছে এবং সর্বশেষ বাংলাদেশে একজন শেখ হাসিনা আছেন- তাই পাকিস্তানি মডেল যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশে রপ্তানি করতে চাইছে সেটা শেষ পর্যন্ত সফল হবে না বলেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ধারণা। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭